টানা ব্যর্থতার পরে গত শুক্রবার ঘরের মাঠে কেরালা ব্লাস্টার্সকে ১-০-য় হারিয়ে দেশের ফুটবল মহলে হইচই ফেলে দেয় ইস্টবেঙ্গল এফসি। চলতি হিরো আইএসএলে এটি তাদের পঞ্চম জয়, যার জেরে ১৬ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট পেয়ে লিগ টেবলের নয় নম্বরে রয়েছে তারা। এখনও চারটি ম্যাচ খেলা বাকি তাদের এবং শেষ ম্যাচে তারা মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দী ইস্টবেঙ্গল এফসি-র, যা কলকাতা ডার্বি নামে সারা দুনিয়ায় বিখ্যাত।

এ রকম একটা সময়ে সেরা চারে থাকা কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে জয় লাল-হলুদ বাহিনীকে প্রচুর আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা অনেকেই বলতে শুরু করেছেন আক্রমণ বিভাগে ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভার সঙ্গে নবাগত ব্রিটিশ স্ট্রাইকার জেক জার্ভিস যোগ দেওয়ায় ইস্টবেঙ্গল শিবির রীতিমতো চনমনে হয়ে উঠেছে, যার প্রতিফলন দেখা যায় কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচেই।

তাই জার্ভিসের দিকেই এখন তাকিয়ে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। বুধবার ঘরের মাঠে দুর্বল নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে জয়ের ছন্দে থাকা ইস্টবেঙ্গল আরও একটি মনে রাখার মতো জয় পাবে বলে আশা লাল-হলুদ জনতার এবং জার্ভিসের পা থেকে গোল পাওয়ার আশায় রয়েছেন সবাই। কিন্তু নায়ক নিজে কী বলছেন? তিনি জানিয়েছেন, লিগের শেষ বেলায় ইস্টবেঙ্গলকে নিয়মিত জেতাতেই এসেছেন তিনি।

ভারতে এসে প্রথম ম্যাচ খেলার পরে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জার্ভিস বলেন, “ভারতীয়দের দেখাতে চাই, ঠিক কী রকম ফুটবলার আমি এবং ইস্টবেঙ্গলকে যথাসম্ভব বেশি সংখ্যক ম্যাচ জেতাতে চাই। আমরা নিয়মিত ম্যাচ জিততে শুরু করলে আরও বেশি সমর্থক নিশ্চয়ই আমাদের খেলা দেখতে আসবেন। শেষ কয়েকটা ম্যাচে আমি সেই পরিবেশটাই উপভোগ করতে চাই”। ক্লাবের মিডিয়া টিমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কথাগুলি বলেন জার্ভিস।

ক্লাবের সমর্থকদের নিয়ে বেশ খুশি লাল-হলুদের নতুন তারকা বলেন, “আমার যোগ দেওয়ার খবর ক্লাব সরকারি ভাবে ঘোষণা করার আগে থেকেই সমর্থকদের কাছ থেকে প্রচুর মেসেজ পেয়েছি আমি। এখানেই বোঝা যায় কত বড় ক্লাব এটা। জানি, ইস্টবেঙ্গলের বেশ বড় একটা ইতিহাস আছে। আশা করি, আমাদের শেষ কয়েকটা ম্যাচে প্রচুর দর্শক হবে”।

দলের শেষ কয়েকটি ম্যাচে মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত কলকাতা ডার্বিও, সারা বছর যার অপেক্ষায় থাকেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা দুই ক্লাবের কয়েক লক্ষ সমর্থক। ভারতে আসার আগে থেকেই এই কলকাতা ডার্বির কথা জার্ভিসের কানে গিয়েছে। এখানে আসার পর আরও স্পষ্ট ধারণা হয় তাঁর। ডার্বি নিয়ে তিনি বলেন, “সমর্থকদের কাছে এবং দলের সতীর্থদের অনেকের কাছেই শুনেছি, কলকাডার্বি এশিয়ার অন্যতম সেরা। কার্ল ম্যাকহিউয়ের সঙ্গে এর আগেও খেলেছি আমি। এ বার ওর বিরুদ্ধে খেলাটা বেশ রোমাঞ্চকর একটা ব্যাপার হবে। ডার্বিতে খেলার কথা ভাবলেই খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ি। এই ম্যাচ আমাকে বাড়তি প্রেরণাও জোগাবে। ডার্বির দিকে তাকিয়ে আছি আর তৈরিও আছি”। 

লাল-হলুদ শিবিরে যোগ দিয়ে তিনি এমন একজন সতীর্থ পেয়েছেন, যিনি ইতিমধ্যেই দশ গোল করে বসে আছেন এবং ঠিকমতো সুযোগগুলি কাজে লাগাতে পারলে হয়তো এতদিনে ১৪-১৫টি গোলও লেখা হয়ে যেত তাঁর খাতায়। সেই ব্রাজিলীয় তারকা ক্লেটন সিলভার সঙ্গে প্রথম ম্যাচে নামার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে জার্ভিস জানান, “ক্লেটনের সঙ্গে আক্রমণে খেলাটা সত্যিই এক বিশেষ অভিজ্ঞতা। ও দারুন খেলোয়াড় এবং অনুশীলনে আমাদের মধ্যে ভালই বোঝাপড়া তৈরি হয়ে গিয়েছে। যত একসঙ্গে খেলব আমরা, তত ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারব”।

ইস্টবেঙ্গল এফসি-তে যোগ দিতে তিনি বেশ কয়েক সপ্তাহ আগেই কলকাতায় চলে আসেন। কিন্তু তখন ক্লাবের ওপর যে কোনও দলবদলে নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। ফলে তিনি দীর্ঘদিন অনুশীলন করা সত্ত্বেও ম্যাচে নামতে পারছিলেন না। এতদিনের অপেক্ষার পর উদ্দেশ্য সফল হওয়ায় খুশি বার্মিংহাম সিটির এই প্রাক্তন ফুটবলার। বলেন, “যখন ক্লাবের দলবদলে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তখনও আমি যথেষ্ট ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত মাঠে নেমে দলকে জিততে সাহায্য করতে পারলাম, এটাই বড় ব্যাপার। তিন পয়েন্ট পাওয়াটা বড় ব্যাপার। ইউরোপে আমাদের খেলার স্টাইলের চেয়ে এখানকার স্টাইল একেবারে আলাদা। তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ারই চেষ্টা করছি।”।

ইংল্যান্ডের পেশাদার ও উন্নত মানের ফুটবল ছেড়ে ভারতে আসার কারণ জানতে চাইলে জার্ভিস জানান, “ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেওয়ার আগে এ দেশে খেলে যাওয়া কয়েকজন ফুটবলারের সঙ্গে কথা বলি। তারা বলে এখানে খেলা ওরা দারুন উপভোগ করেছে। এমনিতেই আমি এশিয়ায় খেলতে চাইছিলাম, একটা নতুন ফুটবল সংস্কৃতির মধ্যে আসতে চাইছিলাম। এটাই একেবারে ঠিক সময় ছিল। ইংল্যান্ডে অনেক ফুটবলারই ইন্ডিয়ান সুপার লিগ নিয়ে আগ্রহী। প্রতি বছরই এই লিগের মানে উন্নতি হচ্ছে। ইংল্যান্ডে বহু ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকা পিটার হার্টলের মতো ফুটবলাররা এখানে খেলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এই ব্যাপারটাই আমাকে আকৃষ্ট করে এবং আমি এখানে চলে আসি”।

মজিদ বিসকার থেকে রয় কৃষ্ণা, ক্লেটন সিলভা— কলকাতায় ফুটবল খেলতে এসে বহু বিদেশি ফুটবলারই তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এ বার সেই তালিকায় জায়গা করে নিতে পারেন কি না জেক জার্ভিস, তা বোঝা যাবে আগামী কয়েক সপ্তাহেই।