জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক ম্যাচে কোচ স্টিমাচকে মুগ্ধ করলেন ইস্টবেঙ্গলের মহেশ
শেষ কুড়ি মিনিট খেললেও ভারতীয় অধিনায়ক ইগর স্টিমাচের নজর কেড়ে নিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল এফসি-র অন্যতম সফল ফরোয়ার্ড নাওরেম মহেশ সিং। বুধবার ইম্ফলের খুমান লম্পক স্টেডিয়ামে প্রায় ৩০ হাজার সমর্থকের সামনে মহেশ ভারতীয় সিনিয়র দলের জার্সি গায়ে প্রথম মাঠে নামেন। মায়ানমারের বিরুদ্ধে ভারতের এই ১-০-য় জেতা ম্যাচে তিনি ছাড়াও অভিষেক হয় মেহতাব সিং ও ঋত্বিক দাসেরও। কিন্তু কোচ স্টিমাচকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছেন মহেশ।
শেষ কুড়ি মিনিট খেললেও ভারতীয় অধিনায়ক ইগর স্টিমাচের নজর কেড়ে নিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল এফসি-র অন্যতম সফল ফরোয়ার্ড নাওরেম মহেশ সিং। বুধবার ইম্ফলের খুমান লম্পক স্টেডিয়ামে প্রায় ৩০ হাজার সমর্থকের সামনে মহেশ ভারতীয় সিনিয়র দলের জার্সি গায়ে প্রথম মাঠে নামেন। মায়ানমারের বিরুদ্ধে ভারতের এই ১-০-য় জেতা ম্যাচে তিনি ছাড়াও অভিষেক হয় মেহতাব সিং ও ঋত্বিক দাসেরও। কিন্তু কোচ স্টিমাচকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছেন মহেশ।
বুধবার অনিরুদ্ধ থাপার গোলে জেতে ভারত। ম্যাচের ৭১ মিনিটের মাথায় মনবীর সিং ও নাওরেম মহেশকে একসঙ্গে নামান স্টিমাচ। ম্যাচের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মহেশ আমাকে অবাক করে দিয়েছে। আইএসএলে ওর দক্ষতার প্রমাণ আমি পেয়েছি। কিন্তু আইএসএল থেকে যখন ফুটবলাররা ভারতীয় দলে আসে, তখন চাপটা অন্য রকমের হয়। আজ ও অসাধারণ খেলেছে। যতটুকু খেলেছে, একেবারে নিখুঁত খেলেছে”।
মহেশ অবশ্য প্রথমে স্টিমাচের সম্ভাব্য দলে ছিলেন না। তিনি ছিলেন রিজার্ভের তালিকায়। শিবশক্তি নারায়ণন চোট পেয়ে যাওয়ায় তাঁকে দলে ডাকেন স্টিমাচ। সদ্যসমাপ্ত হিরো আইএসএলে তাঁর দল ইস্টবেঙ্গল এফসি তেমন ভাল কিছু করতে না পারলেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান মহেশ। মোট ১৯টি ম্যাচে তিনি দুটি গোল করেন ও সাতটি গোলে অ্যাসিস্ট করেন। একই ম্যাচে তিনটি অ্যাসিস্টের রেকর্ডও আছে তাঁর, যা আর কোনও ভারতীয় ফুটবলারের নেই। ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনিই। মহেশের কনভারশন রেটও ছিল উল্লেখযোগ্য, ১৩ শতাংশ।
ইস্টবেঙ্গলের কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন একাধিকবার মহেশের প্রশংসা করেন। ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ক্লেটন সিলভা ও মহেশের জুটিই লাল-হলুদ শিবিরকে অধিকাংশ গোল এনে দেন। দলের ২২টি গোলের মধ্যে ১৩টিতে ক্লেটনের ও ন’টিতে মহেশের অবদান ছিল। সেই কারণেই তিনি ভারতীয় দলে ডাক পান। এ বার হয়তো তাঁকে নিয়মিত জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেখা যাবে।
বুধবার ভারতীয় দল দাপুটে ফুটবল খেললেও মায়ানমারও প্রায়ই পাল্টা আক্রমণে উঠে ভারতীয় গোলকিপার অমরিন্দর সিং ও ডিফেন্ডারদের কড়া পরীক্ষার মুখে ফেলে। সারা ম্যাচে ভারত যেখানে ছ’টি গোলমুখী শট নেয়, সেখানে মায়ানমারের দু’টি শট ছিল গোলে। অমরিন্দর সিং দুর্দান্ত দক্ষতায় অবধারিত একাধিক গোল বাঁচাতে না পারলে ‘ক্লিন শিট’ রেখে মাঠ ছাড়া হত না ভারতের।
Home town hero @NaoremMahesh is lost for words having just made his debut for the #BlueTigers 🐯 in front of friends and family. 🥹#INDMYA ⚔️ #HeroTriNation 🏆 #BackTheBlue 💙 #IndianFootball ⚽️ pic.twitter.com/BHOqEkdqpm
— Indian Football Team (@IndianFootball) March 22, 2023
ম্যাচের স্কোর ১-০ হলেও দুই দলই ৯০ মিনিটে যা সুযোগ পেয়েছিল, তাতে ছবিটা পুরো অন্যরকম হত। ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী একাই প্রায় চারটি অবধারিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন। তবে রেফারির বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত ভারতের বিপক্ষেও গিয়েছে। দু’বার তাঁকে নিজেদের বক্সের মধ্যে ফাউল করেও পার পেয়ে যান মায়ানমারের ফুটবলাররা। দ্বিতীয়ার্ধে একটি গোল করলেও ভারতীয় অধিনায়কের বিরুদ্ধে অফসাইডের সিদ্ধান্ত দেন সহকারী রেফারি।
এই প্রসঙ্গে স্টিমাচ বলেন, “১-০ নয়, ফল হওয়া উচিত ছিল ৩-০। আমার দলের ছেলেরা বলার মতো কিছু নেই। ওদের যেমন বলেছিলাম, ওরা তেমনই খেলেছে। গোলকিপার অমরিন্দর অসাধারণ ছিল। সুনীলের দুর্ভাগ্য ওকে গোল করতে দেয়নি। গোল করার জন্য ও ছটফট করছিল। হ্যাটট্রিকও পেতে পারত ও”।
কিন্তু হিরো আইএসএল ফাইনালে প্রায় পুরো ম্যাচই খেলার পরেও যে বুধবারের ম্যাচে পুরো ৯০ মিনিটই মাঠে থাকবেন সুনীল ছেত্রী, তা অনেকেই ভাবতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে স্টিমাচ বলেন, “আইএসএল ফাইনালের পর যে ফুটবলারটি প্রথম শিবিরে যোগ দেয়, তার নাম সুনীল ছেত্রী। এক মিনিটও নষ্ট না করে ও সরাসরি ভারতীয় শিবিরে যোগ দেয়। এ থেকেই প্রমানিত হয় ওর খিদে আর অধ্যবসায় কতটা। দলের সবচেয়ে ফিট খেলোয়াড়দের মধ্যে ও অন্যতম। টানা তিন দিন ম্যাচ খেলার ক্ষমতা আছে ওর”।
মেহতাব সিংকেও এ দিন প্রথম ভারতীয় সিনিয়র দলের হয়ে মাঠে নামতে দেখা যায় এবং তিনি খেলেন একেবারে শুরু থেকেই। মহেশকে যেমন দরাজ সার্টিফিকেট দেন স্টিমাচ, মেহতাবকে পুরো নম্বর দিতে পারেননি। মেহতাব সম্পর্কে তিনি বলেন, “মেহতাব ভাল খেলেছে। তবে মাঝে মাঝে নার্ভাস হয়ে গিয়েছে। তবে ভবিষ্যতে ও এটা কাটিয়ে উঠবে। কারণ, এই ম্যাচের আগে আমরা মাত্র একদিন অনুশীলন করতে পেরেছি”।
যাঁর গোলে জয় পায় ভারত, সেই অনিরুদ্ধ থাপা ম্যাচের পরে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে বলেন, “গোল করে আমি খুশি তো বটেই। তবে এখানে আমরা জিততে এসেছি এবং এটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শুরুটা আমাদের ভালই হয়েছে। অনেক মাস পরে আবার আমরা এক জায়গায় হয়েছি এবং প্রত্যেকেই চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে। প্রথম ম্যাচেই জয় পেয়ে আমরা সবাই খুশি”।
আগামী মঙ্গলবার টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচে আরও শক্তিশালী প্রতিপক্ষ কিরগিজস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ তাদের। ভারতীয় শিবিরের ফোকাস আপাতত সেই ম্যাচেই, জানালেন থাপা। বলেন, “এখন আমাদের বিশ্রাম নিয়ে ফের তরতাজা হয়ে ওঠাই প্রধান কাজ। প্রথম ম্যাচে যা যা ভাল করেছি, সেগুলো বজায় রাখতে হবে পরের ম্যাচে। ওই ম্যাচে আমার অবশ্যই নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেব”।
ভাল দলের বিরুদ্ধে নিয়মিত ম্যাচ খেলার পক্ষপাতী থাপা বলেন, “ভাল দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেললে আমাদের খেলার মানও বাড়বে। এ ছাড়া বিভিন্ন চাপের পরিস্থিতিকে কীভাবে সামলাতে হয়, তাও আরও ভাল ভাবে শিখতে পারব আমরা। তার ফলে দল হিসেবে আরও উন্নতি করতে পারব। আরও ম্যাচ খেলতে হবে আমাদের। যাতে কোচ একটা পাকাপাকি দল তৈরি করে নিতে পারেন”।
ভারতীয় দলের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে তিনি অনেক স্বাধীনতা পাচ্ছেন বলে জানান থাপা। সে জন্যই সফল হচ্ছেন বলে তাঁর ধারণা। বলেন, “দলে আমরা দু’জন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। সে জন্য আমার কাজটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। বল নাও আর সামনে এগোও। সেটাই চেষ্টা করেছি”।