চলতি মরশুমে যাদের বিরুদ্ধে কোনও ম্যাচ জিততে পারেনি তারা, সেই মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে শনিবার ফাইনাল খেলতে নামছে এটিকে মোহনবাগান। তৃতীয়বারের মুখোমুখিতে আগের দুই হারের বদলা নিতে যে মরিয়া সবুজ-মেরুন শিবির, তা বোঝাই যাচ্ছে তাদের তারকা ফরোয়ার্ড ডেভিড উইলিয়ামসের কথা শুনে। তাঁর মতে আগের দুই হারের কোনও প্রভাব শনিবারের ফাইনালে পড়বে না।

হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে ‘লেটস ফুটবল লাইভ’ অনুষ্ঠানে ডেভিড বৃহস্পতিবার বলেন, “আগের দুই হারের কথা হয়তো দলের কোনও কোনও ফুটবলারের মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলছে। অতীত নিয়ে এত ভেবে লাভ নেই। অতীতে কী ফল হয়েছে বা পরিসংখ্যান নিয়ে এত ভাবার প্রয়োজনই নেই। আমাদের সামনের দিকে তাকিয়ে ফোকাস ঠিক রাখতে হবে”।

নিজেদের শিবিরের মধ্যে যে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস রয়েছে, তা জানিয়ে দিয়ে উইলিয়ামস বলেন, “আমরা যে এই মরশুমে ভাল কিছুই করব, আমাদের মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাস রয়েছে যথেষ্ট। আমরা যথেষ্ট প্রত্যয়ী। যথেষ্ট প্রাণোচ্ছল দল আমাদের। শনিবার আমাদের কিছু হারানোর নেই। সে দিন আমরা সর্বস্ব দিয়ে দেব। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ওই ট্রফিটা”।

অস্ট্রেলিয়ান তারকা ফরোয়ার্ড এ দিনের এই লাইভ আড্ডায় ফাইনাল নিয়ে তাঁর মনের অনেক কথা জানান। তিনি আরও বলেন, “আমরা মনে হয় একটা মহাযুদ্ধ হতে চলেছে। ওই সময়ে যারা ভাল খেলবে, তারাই সফল হবে। আমরা একে অপরকে খুব ভাল করে জানি। দুই দলেই অসাধারণ সব খেলোয়াড় রয়েছে। সেই রাতে কাদের ট্রফির জেতার ইচ্ছে বেশি, তার ওপর নির্ভর করছে সব কিছু। দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ একটা ম্যাচ হতে চলেছে। লিগের সেরা দুই দল মুখোমুখি হতে চলেছে। যে যতটুকু জানি, শিখেছি, সেগুলো ঠিকমতো কাজে লাগাতে হবে”।

শতাধিক বছরের প্রাচীন ক্লাব মোহনবাগানের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গতবারের চ্যাম্পিয়ন এটিকে এফসি এ বার এটিকে মোহনবাগান রূপে হিরো আইএসএলে অংশ নিচ্ছে। এমন এত ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের সঙ্গে জড়িত থাকতে পেরে তাই গর্বিত ডেভিড উইলিয়ামস। সেই ক্লাবের এক মাইলস্টোনের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে পারলে তাই এই সন্মান আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, “যে ক্লাবের প্রচুর ইতিহাস রয়েছে, সেরকম এক ক্লাবের সঙ্গে নিজেকে জড়াতে পেরে আমি খুবই খুশি। এটা খুবই স্পেশাল। আশা করি মোহনবাগান ক্লাবের মতো এটিকে মোহনবাগানও বহু বছর থাকবে। এই ক্লাবের ইাতিহাসে যখন আমার অবদানের কথা লেখা হবে, তখন খুবই গর্বিত অনুভব করব। এই ঐতিহ্যই আমাদের মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী করে তুলবে”।

সবুজ-মেরুন শিবিরের অন্যান্য তারকারাও আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছেন। যেমন মনবীর সিং বলেন, “মুম্বই আমাদের আগের দু’বারই হারিয়েছে। এ বার সেই ম্যাচের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে নামতে হবে আমাদের। আশা করি এটা ঠিকমতো করতে পারলেই সাফল্য আসবে। ওরা তো অপরাজেয় নয়। এফসি গোয়ায় খেলার সময় একবার ফাইনালে উঠেও হেরে গিয়েছিলাম। সে বার ট্রফি ছুঁতে পারিনি। সেই স্বপ্ন এ বার পূরণ করতেই হবে। আমার বাবা চান ফাইনালেও আমি গোল করি। আমার বাবার ইচ্ছেপূরণ করতেই হবে”। এটিকে মোহনবাগান মিডিয়াকে এই কথাগুলো বলেন ছ’গোল করা মনবীর।

গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্য বলছেন, “ওরা আগের দু’বার আমাদের হারিয়েছে। তার বদলা নেওয়াটাই আমাদের কাছে মোটিভেশন। যারা টিভিতে খেলা দেখবেন, তাদের কাছে এই ম্যাচটা আবেগ। আমাদের কাছে কিন্তু এটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধে জিততেই হবে”। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের ম্যাচে হার নিয়ে অরিন্দম বলেন, “যে তিনটে গোল ওরা আমাদের দিয়েছে, তার সবকটাই নিজেদের দোষে খেয়েছি আমরা। ওরাও লিগের ম্যাচে গোল খেয়েছে, হেরেছে। ওরা শক্তিশালী হলেও অপরাজেয় নয়। গতবারও আমরা লিগে চেন্নাইনের কাছে হেরেছিলাম। কিন্তু ফাইনালে ওদের হারিয়েছিলাম। ১২০ মিনিট লড়াই করার মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে মাঠে নামব। তবে ম্যাচটা ৯০ মিনিটেই জিততে চাই”।

দলের অন্যতম অধিনায়ক প্রীতম কোটালের চ্যালেঞ্জ, “শনিবার ফাইনালে জিতে ওদের উপযুক্ত জবাব দিয়ে ট্রফি নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই। অল্পের জন্য এসিএলে খেলার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই কষ্ট ভুলতে চাই। এ বার আমরা সবুজ-মেরুন জার্সিতে মাঠে নামব। এই জার্সির গুরুত্বই আলাদা। ওদের সেট পিস ভয়ঙ্কর। ষাট ভাগ গোল ওরা সেট পিসে করেছে। ওদের সেট পিস আটকাতেই হবে”।

দলের ডিফেন্ডার শুভাশিস বসুর মন্তব্য, “আমাদের জয় দেখার জন্য কোটি কোটি মানুষ অপেক্ষায় থাকবে। মুম্বই সিটি এফসি শক্তিশালী। কিন্তু আমরাও কম শক্তিশালী নই। ফাইনালে উঠে তা প্রমাণও করে দিয়েছি। এ বার আর পিছন ফিরে তাকাতে চাই না”। অপর ডিফেন্ডার প্রবীর দাস বলছেন, “গ্রুপ লিগের চেয়ে আলাদা খেলা হবে ফাইনালে। ৯০ মিনিটে ম্যাচটা জিততে চাই। তবে আমরা ১২০ মিনিট খেলার প্রস্তুতি নিয়েই নামব। পেনাল্টি শুট আউট আমাদের নিয়মিত অনুশীলন হয়। কোচও নিশ্চয়ই ফাইনালের জন্য আলাদা কৌশল তৈরি করে রেখেছেন। তাঁর নির্দেশ মেনেই খেলব”। মিডফিল্ডার প্রণয় হালদারের ধারণা, “ওদের গোল আটকাতে পারলে আমরা গোল করবই। তাই গোল খাওয়া যাবে না। এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ব না ওদের”।