মাঝে আর মাত্র এক দিন। তার পরেই বাংলার ঘরে ঘরে বেজে উঠবে কলকাতা ফুটবল ডার্বির দামাম। চলতি হিরো আইএসএলের দ্বিতীয় লেগের ডার্বি আগামী শনিবার সন্ধ্যায়। এটিকে মোহনবাগান ও এসসি ইস্টবেঙ্গল দুই দলই ডার্বির আগের ম্যাচ জিতে শেষ করতে পারেনি। লিগ টেবলে দুই দলেরই অবস্থান খুব একটা ভাল না। এটিকে মোহনবাগান সামান্য হলেও এগিয়ে ঠিকই। কিন্তু লিগের মাঝখানে শিবিরে কোভিড হানা দেওয়ায় দলের খেলোয়াড়রা অনেকেই চেনা ছন্দে নেই। যদিও ১৮ দিন বাদে মাঠে নেমে গত ম্যাচে ওডিশার বিরুদ্ধে মাঠে রীতিমতো ঝড় তুলে দিয়েছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী। কিন্তু আসল কাজের কাজ, অর্থাৎ গোল করতে পারেননি দলের দুর্ধর্ষ ডিফেন্ডাররা।

দু’মাস আগে গত ডার্বিতে ৩-০-য় জেতে এটিকে মোহনবাগান। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি একেবারে অন্যরকম। বেশ কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেল প্রথম চারের বাইরে তারা। সেরা চারে ফিরতে গেলে এই ম্যাচে জিততেই হবে তাদের। তাই কোনও ছুটি ছাড়াই টানা দল নিয়ে অনুশীলন করে চলেছেন স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো। পরিস্থিতি যেমনই থাকুক, কলকাতা ডার্বি মানে অবশ্য অন্যরকমের গুরুত্ব, আলাদা রোমাঞ্চ। ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দ্বৈরথের আগে এটিকে মোহনবাগানের অন্যতম সেরা ও নির্ভরযোগ্য তারকা হুগো বুমৌস অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, প্রথম লেগের মতো দ্বিতীয় লেগেও তাঁরাই জিতবেন।

মাঝমাঠে সবুজ-মেরুন শিবিরের সবচেয়ে বড় ভরসা ও শক্তি ফরাসি মিডফিল্ডার মরশুমের দ্বিতীয় ডার্বি নিয়ে বলেন, “গতবারের চেয়ে এ বার যে পরিস্থিতি আলাদা, এটা ঠিকই। শুধু ফুটবল নয়, অন্যান্য বিষয়েও মনোনিবেশ করতে হচ্ছে আমাদের। অনেক দিন অনুশীলন করতে পারিনি আমরা। তাই এখন কঠোর পরিশ্রম করে নিজেদের জায়গায় ফিরতে হবে আমাদের”। এটিকে মোহনবাগান মিডিয়াকে এই কথাগুলি বলেন বুমৌস। তাঁর মতে, “ডার্বির গুরুত্ব সবসময়ই আলাদা। বাড়তি মোটিভেশন নিয়ে ম্যাচটা খেলতে হয়। আমি আত্মবিশ্বাসী, এ বারেও আমরাই জিতব”।

রেফারির সঙ্গে দুর্ব্যবহারের শাস্তি স্বরূপ পাঁচ ম্যাচের নির্বাসন কাটিয়ে এই ম্যাচেই মাঠে ফিরবেন বুমৌস। এ পর্যন্ত ন’টি ম্যাচে পাঁচটি গোল ও তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন যিনি, সেই ফরাসি মিডফিল্ডার আরও বলেন, “এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গতবার আমরা জিতেছি বা ওরা গত ম্যাচে হায়দরাবাদের কাছে চার গোল খেয়েছে বলে ওদের কাটো করে দেখার কোনও কারণই নেই। ওরা প্রতিশোধ নেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই নামবে। শেষ চারে বা চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে ফিরতে হলে এই ম্যাচে জিততেই হবে আমাদের। বাতিল হওয়া ম্যাচগুলি থেকেও পুরো পয়েন্ট তুলতে হবে আমাদের”।

গত ম্যাচে ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে জিততে পারেনি এটিকে মোহনবাগান। গোলশূন্য ড্র হয় সেই ম্যাচে। গত চারটি ম্যাচের মধ্যে দু’টি জয় ও দু’টি ড্র রয়েছে তাদের। বুধবার দক্ষিণী ডার্বিতে বেঙ্গালুরু এফসি ৩-০-য় চেন্নাইন এফসি-কে হারানোর পর এটিকে মোহনবাগান আট নম্বরে নেমে গিয়েছে। এই অবস্থা থেকে দলকে তুলে নিয়ে আসাই এখন বুমৌসের মতো তারকাদের প্রধান কাজ।

এই বিষয়ে তিনি বলেন, “শেষ ম্যাচে আমরা জিততে পারিনি ঠিকই। কিন্তু প্রচুর গোলের সুযোগ নষ্ট করেছি। আমাদের দলের পজিটিভ দিক এটাই। আমরা প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারছি। সেগুলো যাতে গোলে পরিণত করা যায়, সে জন্য আমরা কঠোর অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি”।

দলের মিডফিল্ডারের সঙ্গে প্রায় একমত সিনিয়র খেলোয়াড় তথা অধিনায়ক প্রীতম কোটাল। সবুজ-মেরুন শিবিরে সবচেয়ে বেশি ডার্বির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই তারকা ডিফেন্ডার বলেন, “অনেকে বলছেন হায়দরাবাদের কাছে ওরা চার গোল খাওয়ায় আমরা সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছি। আমার তা মনে হয় না। সবচেয়ে বেশি ডার্বির অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এই ম্যাচে কী হবে কেউ বলতে পারে না। তবে শেষ দু’টি ম্যাচ ড্র করলেও এই ম্যাচে আমরা জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। রক্ষণ আঁটোসাঁটো রেখে খেলতে পারলে ঠিক গোল পেয়ে যাব”।

বাংলার তারকা প্রীতম বলেন, “আমরা বাংলা ছেলে। ডার্বি হেরে চ্যাম্পিয়ন হলেও সমর্থকদের কাছে শুনতে হয়, চ্যাম্পিয়ন হয়েছ তো কী হয়েছে, ডার্বি তো জিততে পারোনি। তাই এই ম্যাচে জিততেই হবে। আমাদের নতুন কোচের দর্শন আলাদা, তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়তো সময় লাগছে। কিন্তু শেষ ম্যাচে আমরা যথেষ্ট ভাল খেলেছি।”

দলের আর এক বাঙালি তারকা শুভাশিস বোস মনে করেন, “এ বারের ডার্বিতে আবেগের সঙ্গে লিগের অঙ্কও গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচে জিততে পারলে ফের সেরা চারে ঢুকে পড়ব। তাছাড়া অন্যদের চেয়ে কম ম্যাচ খেলাটাও আমাদের পক্ষে সুবিধাজনক। সেই সুযোগটা নিতে হবে। লড়াইটা কঠিন। তবে এই আইএসএলে যে কোনও দিন যে কোনও দলকে এগিয়ে দিতে পারে। তাই আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই আমাদের শিবিরে”। এই আত্মবিশ্বাস শনিবার কী ভাবে কাজে লাগাতে পারেন বুমৌস,কৃষ্ণারা, সেটাই দেখার বিষয়।