আরও বেশি গোলে জিততে পারতাম: ইস্টবেঙ্গল কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন
নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স উজাড় করে দিয়েই যে কেরালা ব্লাস্টার্সকে হারিয়ে অঘটন ঘটাল তাঁর দল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই লাল-হলুদ শিবিরের কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইনের। কিন্তু এক গোলে নয়, আরও দু-তিন গোলে জিততে পারতেন তাঁরা, মনে করেন তিনি।
নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স উজাড় করে দিয়েই যে কেরালা ব্লাস্টার্সকে হারিয়ে অঘটন ঘটাল তাঁর দল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই লাল-হলুদ শিবিরের কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইনের। কিন্তু এক গোলে নয়, আরও দু-তিন গোলে জিততে পারতেন তাঁরা, মনে করেন তিনি।
ক্লেটন সিলভার ৭৭ মিনিটের গোলে ১-০-য় জিতে প্রথম লিগে হারের বদলা নিল লাল-হলুদ বাহিনী। সম্ভবত এটাই এ বারের লিগে ইস্টবেঙ্গল এফসি-র সেরা পারফরম্যান্স। একটি গোল করলেও একাধিক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে তারা। বিপক্ষের গোলকিপার তিনটি অবধারিত গোল সেভও করেন। চলতি লিগে ঘরের মাঠে এটিই ছিল ইস্টবেঙ্গলের দ্বিতীয় জয় এবং চলতি বছরে এই প্রথম কোনও ম্যাচ জিতল তারা। তাও তিন নম্বরে থাকা গতবারের চ্যাম্পিয়ন কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে।
টানা চার ম্যাচে হারার পর এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে কোচ সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের ছেলেরা যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে। প্রতি ম্যাচে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছে। কেরালার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ভাগ্য সহায় হয়নি। গোয়ার বিরুদ্ধেও তাই। চেন্নাইনের বিরুদ্ধেও দুটো গোল করা উচিত ছিল। ৬-৭টা ম্যাচে আমাদের পুরো পয়েন্ট পাওয়া উচিত ছিল, যা আমরা পারিনি। আজই প্রথম ছেলেরা একসঙ্গে সঙ্ঘবদ্ধ থেকে ফুটবল খেলেছে। একে অপরকে সব সময় সাহায্য করেছে। খুবই দুঃসাহসিক ও আগ্রাসী পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। পরের ম্যাচগুলোতেও আশা করি, এ রকম পারফরম্যান্স দেখাতে পারব”।
WHAT A MATCH! 🔥
— East Bengal FC (@eastbengal_fc) February 3, 2023
We edge #EBFCKBFC courtesy Cleiton Silva’s 10th goal of the season! 🔴🟡#JoyEastBengal #HeroISL #EBFCKBFC #আমাগোমশাল #EastBengalFC #IndianFootball #LetsFootball pic.twitter.com/nOkgSlufpV
নবাগত ব্রিটিশ ফরোয়ার্ড জেক জার্ভিস এ দিন শুরু থেকেই খেলেন। তাঁর ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ততটা প্রত্যাশার স্তর ছুঁতে না পারলেও তাঁর উপস্থিতিই দলকে অনেক উজ্জীবিত করে। জার্ভিস সম্পর্কে কোচ বলেন, “প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারের মধ্যে একজনকে ব্যস্ত রাখার কাজটা আজ জেক করেছে। আর ক্লেটনের পক্ষে তো আমি সবসময়ই বাজি ধরতে রাজি। জেক যে আজ সেরাটা দিয়েছে, তা নয়। ও দু’মাস ম্যাচে ছিল না। তবে যথাসাধ্য উজাড় করে দিয়েছে আজ। শুরু থেকেই সবার পারফরম্যান্সে যথেষ্ট তীব্রতা ছিল। কেউই অযথা ভুল করেনি। ভুল অবশ্য হয়েই থাকে এবং ভুল থেকেই শিক্ষা নেওয়া উচিত। টানা চারটে ম্যাচে হারার পরে এ ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোটা মোটেই সোজা নয়। পরের ম্যাচেও এ রকম ভাল খেলার চেষ্টা থাকবে”।
জার্ভিস চলে আসায় তিনি এ দিন অনেক সুবিধা পেয়েছেন বলে জানান জয়ের নায়ক ক্লেটন সিলভা। তাঁর মতে, “জেক দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। ও দীর্ঘদেহী, গতিময়, বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ভাল, পা দুটো পরিস্কার। বল পেলে আমি মহেশ, সুহেরের সঙ্গে ওকেও দেখতে পাচ্ছি। এতদিন বক্সের বাইরে থেকে যখন বল দিতাম, তখন তা রিসিভ করার জন্য কাউকে পাওয়া যেত না। এখন জেককে পাচ্ছি। ওর জন্য আজ আমাদের পারফরম্যান্স অনেকটাই উন্নত হয়েছে”।
এই জয়ের ফলে দলের ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়বে বলে মনে করেন ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার। বলেন, “আজ শুধু আমি খুশি নই, দলের সবাই খুশি এ রকম একটা জয় পেয়ে। জেককে পেয়ে সবাই খুশি। এত দিনে আমাদের গোল করার জন্য এমন একজনকে পেলাম, যার ভাল ফুটবল খেলার দক্ষতা রয়েছে। আর দুজন স্ট্রাইকারকে নিয়ে সবাই খেলতে চায়। দলের সবাই আজ অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। এই লড়াকু ফুটবলই আমাদের আসল খেলা। লড়াই না করলে পয়েন্ট আসবে কী করে? এই জয় অনেক আত্মিবশ্বাস জোগাবে আমাদের”।
সমর্থকদের উদ্দেশ্যে কোচ এ দিন বলেন, “আমাদের পাশে থাকা উচিত সমর্থকদের। আমরা কোনও ম্যাচে ফাঁকি দিইনি। সব ম্যাচে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছি। আজ ভাগ্য ভাল থাকলে আরও দু-তিনটে গোল পেতাম। আজই প্রথম দুই বিদেশিকে আক্রমণে পেয়েছি আমরা আর আজই প্রথম কোনও গোল না খেয়ে ম্যাচ জিতলাম। কমলজিৎকে ম্যাচের আগে বলেছিলাম, আজ ক্লিন শিট রাখতে পারলে ওকে একশো টাকা পুরস্কার দেব। তবে ও যা করেছে, সে জন্য ভাবছি একশো নয়, পাঁচশো টাকা দেওয়া উচিত ওকে”।
অপ্রত্যাশিত ভাবেই ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় হঠাৎ অঙ্কিত মুখার্জিকে তুলে মহম্মদ রকিপকে নামান লাল-হলুদ কোচ, যে সিদ্ধান্তে মোটেই খুশি হতে দেখা যায়নি অঙ্কিতকে। তাঁর প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়নি, চোটের জন্য বসতে হয় তাঁকে। এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কোচ বলেন, “অঙ্কিতের হ্যামস্ট্রিং সমস্যা ছিল। তা সত্ত্বেও ও খেলতে চেয়েছিল। কিন্তু পরে খুব বাজে কতগুলো ভুল করে। যার ফলে আমরা গোল খেয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু ও যে আচরণ করেছে মাঠে, সে জন্য ক্লাব নিশ্চয়ই ওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এমন করল ও। জানি না, এর পরে ভবিষ্যতে ও ইস্টবেঙ্গলে থাকবে কি না”।