কেরালা ব্লাস্টার্সের মতো দুর্দান্ত দলকে হারানোর পরেও নর্থইস্ট ইউনাইটেডের মতো লিগ টেবলের একেবারে নীচে থাকা দলের বিরুদ্ধে জয় না পাওয়ায় বেশ ক্ষুব্ধ ইস্টবেঙ্গলের ব্রিটিশ কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন। বুধবার যুবভারতীতে প্রতিবেশী রাজ্যের দলের বিরুদ্ধে ৩-৩ ড্র করার পরে তিনি বলেন, “আমাদের দলে অনেক কিছুরই অভাব রয়েছে, যা না মিটলে বারবার এ ভাবে হতাশ হতে হবে আমাদের”।

বুধবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইস্টবেঙ্গলের উদ্দেশ্য সফল হল না রক্ষণের ভুলের জন্য, যা তাদের চলতি লিগে বরাবরই ভুগিয়ে আসছে। আক্রমণ ভাল হলেও রক্ষণের দোষে যে বরাবরই তারা পিছিয়ে যাচ্ছে, তা আরও একবার প্রমাণিত হল এ দিন। প্রথমে গোল দিয়েও তারা পিছিয়ে যায় এবং ফের এগিয়ে গিয়েও ব্যবধান বজায় রাখতে পারল না লাল-হলুদ বাহিনী।

এই ব্যর্থতার ব্যাখ্যা দিয়ে কনস্টান্টাইন ম্যাচের পরে সাংবাদিকদের বলেন, “শুধু মনসংযোগের অভাব নয়, ভাল মানের অভাব, সচেতনতার অভাব সবই আছে আমাদের। আজকের ম্যাচের জন্য একটা পরিকল্পনা ছিল আমাদের। সেই অনুযায়ী একটা গোলও দিই আমরা। এই গোলটা দেওয়ার পরে জানি না কেন, আমাদের ছেলেদের মধ্যে একটা আত্মতুষ্টি ঢুকে পড়ল। ওদের (নর্থইস্ট) তিনটি গোলই আমাদের দোষে হয়েছে। এমন কিছু আহামরি গোল ওরা করেছে, তা বলা যাবে না। আমরা নিজেদের কাজ ঠিকমতো করতে পারিনি বলেই ওরা গোলগুলো করতে পেরেছে। সারা মরশুমেই একই জিনিস বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। এখন আমাদের শেষ তিনটি ম্যাচে যাতে এর চেয়ে ভাল খেলতে পারি, সে দিকে দেখতে হবে”। 

লাল-হলুদ বাহিনী এ দিন ঘনঘন আক্রমণে উঠলেও তার বেশিরভাগই হয়েছে বাঁ দিক দিয়ে। এই প্রসঙ্গে কোচ বলেন, “শুধু আক্রমণে নয়, অনেক বিভাগেই আমাদের খামতি আছে। আজ সুহের, মোবাশিররা ছিল না। এমনকী রিজার্ভ বেঞ্চেও বেশি অপশন ছিল না আমাদের। আগেও বলেছি, আমাদের দলে আরও ভারসাম্য আনতে হবে। প্রতিটা পজিশনে প্রতিযোগিতা থাকা দরকার, যা এখন আমাদের নেই”।

লিগের শেষ দিকে এখন প্রায় সব দলকেই অল্প দিনের ব্যবধানে বেশি সংখ্যক ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। এটা ব্যর্থতার আর একটা কারণ বলে মনে করেন লাল-হলুদ কোচ। তা ছাড়া দলের তরুণরা সুযোগের সদ্ব্যবহারও করতে পারছেন না বলে মনে করেন তিনি। বলেন, “১২-১৪ দিনে আমাদের পাঁচটা ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। এটা খুবই  কঠিন। সে জন্য একটা ভাল, শক্তিশালী দল দরকার। রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দেরও এ জন্য দক্ষ হওয়ার দরকার। যদিও অনেক দিন পরে মাঠে নেমে শৌভিক (চক্রবর্তী) আজ ভাল খেলেছে। কিন্তু (হীমাংশু) জাঙরা ভাল খেলতে পারেনি। যারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে, তাদের সুযোগ পেলে তা কাজে লাগাতে হয়। যেমন গত সপ্তাহে রকিপ করেছিল বলে এই ম্যাচে ও শুরু থেকে খেলেছে। আমাদের দলে আরও ভাল খেলোয়াড় দরকার”।

যে নবাগত ফুটবলারকে নিয়ে আপাতত সবচেয়ে বেশি চর্চা চলছে লাল-হলুদ সমর্থকদের মধ্যে, সেই জেক জার্ভিসের পারফরম্যান্সে এখনও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন তাঁরই দেশের কোচ। জার্ভিসের অনবদ্য বাইসাইকেল কিকে গোলের প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলেন, “জেক ভাল করবে বলেই তো ওকে আনা হয়েছে। ও আজ ঠিকঠাকই খেলেছে। তবে ওকে আরও ভাল করতে হবে। আসলে ও গত তিন মাস কোনও ম্যাচ খেলেনি। ৯০ মিনিট পুরো খেলাটাই ওর পক্ষে কঠিন। আশা করি, বাকি তিনটে ম্যাচে ও আরও ভাল খেলবে এবং মরশুমের শেষে ওকে ম্যাচফিট বলতে পারব। তবে পরের টুর্নামেন্টের (সুপার কাপ) জন্য আমাদের ৪০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এটাই যা সমস্যা”।

দলের চোট পাওয়া খেলোয়াড়দের তালিকায় ডিফেন্ডার সার্থক গলুইও যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়ে দিলেন কনস্টান্টাইন। তিনি জানান, “অনুশীলনে সার্থকের হ্যামস্ট্রিং সমস্যা দেখা দেয়। দু’দিন আগে ও জোরে দৌড়তে পারছিল না। তাই ওকে নামিয়ে আর ঝুঁকি নিইনি। কেউ ঠিকমতো অনুশীলন করতে না পারলে ম্যাচেই বা কী ভাবে খেলবে”। ইস্টবেঙ্গল এফসি-র পরবর্তী ম্যাচ আগামী রবিবার, চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে।