মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে হেরে গেলেও দলের পারফরম্যান্সে তিনি ‘গর্বিত’। শুক্রবার তিলক ময়দান স্টেডিয়ামে এক গোলে হারলেও, হারার মতো ফুটবল খেলেনি রবি ফাউলারের দল। বরং ম্যাচের শেষ মুম্বইয়ের কোচ সের্খিও লোবেরাকে বলতে শোনা যায়, ভাগ্যের জোরে এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট অর্জন করতে পেরেছেন তাঁরা।

দশ নম্বর দল হয়েও লিগের সেরা দলের বিরুদ্ধে বল পজেশনে অনেক এগিয়ে থেকেও, বিপক্ষের চেয়ে দেড়গুন বেশি পাস খেলেও শুক্রবার শেষ পর্যন্ত গোলের দরজা খুলতে পারেনি রবি ফাউলারের দল। ২৭ মিনিটের মাথায় সেনেগালি ডিফেন্ডার মুর্তাদা ফলের হেডে হওয়া গোলে ০-১-এ পিছিয়ে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেও বিপক্ষের দুর্ভেদ্য ডিফেন্স ভেদ করে সমতা আনতে পারেনি কলকাতার দল। তবে ম্যাচটা যে এক নম্বরের সঙ্গে দশ নম্বরের হচ্ছিল, তা মনে রাখা বেশ কঠিন হয়। বরাবর প্রতিপক্ষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করা মুম্বই সিটি এফসি-কে এ দিন ম্যাচের অনেকটা সময়ই বেশ চাপে রেখেছিল লাল-হলুদ বাহিনী।

মাস দেড়েক আগে এই মুম্বইয়ের কাছেই তিন গোলে হারা দলের সম্পুর্ণ বদলে যাওয়া পারফরম্যান্স নিয়ে ম্যাচের পরে ফাউলার সাংবাদিকদের বলেন, “গর্ব করার মতো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে আমাদের দলের ছেলেরা। ম্যাচটা জিততে পারিনি ঠিকই। কিন্তু সারা দুনিয়া দেখেছে, সারা ম্যাচে কতটা বল পজেশন ছিল আমাদের। সব দিক থেকেই যে আমরা উন্নতি করছি, তা বোঝাই যাচ্ছে। ছেলেরা এখন অনেক বেশি ফিট ও শক্তিশালী। এটা লজ্জাজনক যে আমাদের এই জায়গাটাতে আসতে ৪৫ মিনিট লেগে গেল। তবে মুম্বই সিটি এফসি-কে সম্ভবত আমরাই মরশুমের সবচেয়ে কঠিন ৪৫ মিনিট কাটাতে বাধ্য করেছি। পুরো কৃতিত্ব আমাদের ছেলেদের। ফল যদিও আমাদের প্রতি সুবিচার করেনি। শেষ পর্যন্ত এটা তো আর একটা হারা ম্যাচ ছাড়া কিছুই নয়”।

মুম্বই সিটি এফসি-র কোচ সের্খিও লোবেরাকে এ দিন ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে জিজ্ঞেস, করা হয়েছিল, এটাই এই মরশুমে তাঁদের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ কি না। এর উত্তরে তিনি স্বীকার করে নেন, “হতে পারে। আমরা এ দিন বল নিজেদের কাছে বেশি রাখতে পারিনি। বেশিরভাগ সময় নিজেদের অর্ধেই খেলেছি। ফলে ম্যাচটা আমাদের কাছে আরও কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। ফলের ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের সৌভাগ্যবানই মনে করছি। কারণ, ওরা দ্বিতীয়ার্ধে খুবই ভাল খেলেছে। প্রথমার্ধে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারিনি। দ্বিতীয়ার্ধে পরিস্থিতি পুরো বদলে যায়”।

এই ফল যে তাঁদের হতাশ করে তোলার পক্ষে যথেষ্ট, তা জানিয়ে ফাউলার বলেন, “এটা খুব হতাশাজনক। আমরা দেখিয়ে দিলাম যে বড় দলের কড়া মোকাবিলা করতে পারি আমরা। প্রতি ম্যাচেই আমরা আমাদের প্রাপ্য ফল পেতে চাই। আমরা উচ্চাকাঙ্খী। তাই নিজেদের আরও উঁচুতে তুলে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও আশাবাদী। বোধহয়, আটটা ম্যাচে এটাই আমাদের একমাত্র হার। আমাদের দ্রুত জয়ে ফেরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দলকে জেতানোর মতো খেলোয়াড় রয়েছে আমাদের হাতে। আশা করি জয় তাড়াতাড়িই আসবে”।

এই নিয়ে পাঁচ নম্বর হার স্বীকার করতে হল এসসি ইস্টবেঙ্গলকে। ড্রয়ের সংখ্যা ৬ ও জয় মাত্র দু’টি। ১৩ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট পেয়ে তারা এখন দশ নম্বরে। লিগ টেবলের পাঁচ নম্বর দলের সঙ্গে অবশ্য তাঁদের মাত্র তিন পয়েন্টের ফারাক। এখনও ফাউলার মনে করেন, তাঁর দল সেরা চারে পৌঁছতে পারে। বলেন, “এখন প্রতিটি সপ্তাহ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। প্রতিটি ম্যাচের সঙ্গে লড়াইটা আরও কঠিন হয়ে উঠছে। কিন্তু আমাদের নিজেদের আসল খেলাটা চালিয়ে যেতে হবে। আরও ভাল খেলার চেষ্টা করে যেতে হবে। লিগ টেবলের মাঝখানের দলগুলোর সঙ্গে নীচের দলগুলোর কত কম দূরত্ব, সেটা দেখুন। কয়েকটা ভাল ফল করতে পারলেই আমরা কিন্তু সেরা চারের দৌড়ে ঢুকে পড়ব। তাই আমাদের সব শেষ হয়ে যায়নি। এটাই আসল চ্যালেঞ্জ আর আমরা এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি”।      

গতবার যে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে ৩-০-য় হারিয়েছিল তারা, তার চেয়ে এই দলের অনেক তফাৎ রয়েছে বলে স্বীকার করে নেন মুম্বইয়ের কোচ লোবেরা। বলেন, “অবশ্যই অনেক ফারাক আছে। ওদের নতুন ফুটবলার এসেছে, ওরা এখন প্রতিপক্ষ হিসেবে অনেক কঠিন। ওদের ফলই সেটা বলে দিচ্ছে। সাত ম্যাচে অপরাজিত ছিল ওরা। আগের ম্যাচের সেই দলের সঙ্গে এই দলের তুলনা চলে না”।