গতবারের হিরো আইএসএলের বেশির ভাগ সময়ে ডাগ আউটে ম্যাচের পর ম্যাচ বসে থাকা ধীরজ সিং আর সম্প্রতি দেখতে পাওয়া এফসি গোয়ার গোলকিপার ধীরজ সিংয়ের মধ্যে যে কত পার্থক্য, তা ফুটবলপ্রেমীরা নিজেদের চোখেই দেখেছেন। সুযোগ পেলে কোনও সত্যিকারের প্রতিভাবান তরুণ যে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ এই ধীরজ সিং।

২০ বছর বয়সি মণিপুরী গোলকিপার সম্প্রতি এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্লাব-লিগ এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছেন, তার স্বীকৃতিও তাঁকে দিয়েছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন। পশ্চিমাঞ্চলের সবকটি গ্রুপ পর্বে যে গোলকিপাররা খেলেছেন, তাঁদের মধ্যে সেভ-এর সংখ্যার (২৬) দিক থেকে সবচেয়ে সফল ধীরজ। শুধু সংখ্যাতেই নয়, দায়িত্ববোধ, দক্ষতা এবং মরিয়া মনোভাবের দিক থেকেও সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন ধীরজ। এমন কতগুলো সেভ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে, যা অবিশ্বাস্য, অনবদ্য বললেও কম বলা হয়।

এই বদলে যাওয়া ধীরজের নেপথ্যে যে তাঁর নিজের উদ্যোগ ও চেষ্টাই বেশি, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তাঁর এই পরিবর্তনের পিছনে ধীরজ অনেকটাই কৃতিত্ব দিয়েছেন এফসি গোয়ার স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দোকে। তাঁর মতে, ওঁর উপস্থিতিই আমার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে

শুক্রবার Indiansuperleague.com-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ধীরজ জানুয়ারির দলবদলে এটিকে মোহনবাগান ছেড়ে এফসি গোয়া শিবিরে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, এফসি গোয়ার প্লেইং স্টাইলটা আমার খুব পছন্দের। কিন্তু আমাকে যে আমার ফুটওয়ার্ক নিয়ে আরও কাজ করতে হবে, তা বুঝতে পারছি, কারণ, হুয়ান চান দলের প্রত্যেকের পায়ের কাজ একেবারে নিখুঁত হোক। ওঁর উপস্থিতিই আমার খেলায় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। উনি সব সময় আমাকে সাহায্য করে গিয়েছেন। উনি আমাকে আত্মবিশ্বাসও জুগিয়েছেন। আমার মনে আছে হিরো আইএসএলের শুরুতে (এফসি গোয়ার জার্সি গায়ে) আমি কয়েকটা ম্যাচে নিজের সেরাটা দিতে পারিনি। কিন্তু উনি আমাকে সমানে আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে যান, যেটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একজন গোলকিপারের আত্মবিশ্বাসই অনেক কিছু। তাই কোচের কাছে আমি খুবই কৃতজ্ঞ, আমার ওপর আস্থা বজায় রাখার জন্য

এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো মহাদেশীয় স্তরে ভাল পারফরম্যান্স দেখানো যে কঠিন চ্যালেঞ্জ, তা স্বীকার করে নিয়েই ধীরজ এই সাক্ষাৎকারে বলেন, এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আমরা যে শুধু ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করছিলাম, তা নয়, দেশেরও প্রতিনিধিত্ব করছিলাম। তাই আমাদের কাছে এটা একটা বড় টুর্নামেন্ট ছিল। দলের প্রত্যেকেই খুব ফোকাসড্ ছিল। আমাদের কাজটা যে বেশ কঠিন এবং নিজেদের একশো শতাংশ এখানে দিতেই হবে, তা প্রত্যেকেই জানতাম। তবে আমাদের প্রধান কোচ সবাইকে বলে দিয়েছিলেন, কাউকে বাড়তি চাপ নিতে হবে না। প্রত্যেকেই যার যার স্বাভাবিক খেলাটা খেলার চেষ্টা কোরো। সে ভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করেছি আমরা। আমি প্রতিটা ম্যাচ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমার কাছে এটা একটা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা এবং আমি খুব উপভোগ করেছি

গোল পাহাড়ায় অসাধারণ দক্ষতা দেখালেও ধীরজ স্বীকার করে নেন তাঁর সামনে দুই বিদেশি সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার জেমস ডোনাচি ও ইভান গঞ্জালেসের থাকাটা একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওরা দুজনেই অসাধারণ ডিফেন্ডার ও যথেষ্ট অভিজ্ঞ। ওদের ডিফেন্সে পাওয়ায় আমাদের পুরো দলেরই খুব সুবিধা হয়েছে। বল মাঠে রেখে খেলা তৈরি করাটাই যে আমাদের স্টাইল, তা সবারই জানা। বল পায়ে ওরা খুবই স্বচ্ছন্দবোধ করে। শারীরিক দিক থেকেও ওরা যথেষ্ট সক্ষম এবং ওদের গেম রিডিংও দুর্দান্ত। ওদের জন্য আমার কাজটা যে অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল, তা স্বীকার করতে আমার দ্বিধা নেই

এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আগে তাঁদের কাছে কী প্রত্যাশা ছিল এ দেশের মানুষের, তা জানিয়ে ধীরজ বলেন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যাওয়ার আগে আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছিল কতগুলো গোল খেতে যাচ্ছিস?’ আমাদের নিয়ে এ রকমই মানসিকতা ছিল সবার। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা নিজেদের শক্তিশালী প্রমাণ করেছি। কোনও প্রতিপক্ষই আমাদের বিরুদ্ধে সহজে গোল দিতে পারেনি। প্রত্যেক দলই কিন্তু নিজেদের একশো শতাংশ দিয়েছে। তাও আমরা ওদের কাছে কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিলাম। প্রথম দুটো ম্যাচের ফলে তো প্রত্যেকেই অবাক হয়ে গিয়েছিল

ক্রীড়াসূচিও বেশ কঠিন ছিল বলে মনে করেন এই তরুণ গোলকিপার। বলেন, ২-৩ দিন অন্তর এত কঠিন ম্যাচ খেলাটাও আমাদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এটাই বোধহয় সবার কাছে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। কিন্তু আমরা খুব ভাল ফুটবল খেলেছি। খুব ভাল কতগুলো গোল করেছি। এই স্মৃতি চিরকালই আমার কাছে সুখের হয়ে থাকবে