চিনের সুযহউ অলিম্পিক স্পোর্টস সেন্টার স্টেডিয়ামে চিন-ভারত ম্যাচ গোলশূন্য ভাবে অমীমাংসিত শেষ হল। ভারত এই ম্যাচটিতে তাদের সাম্প্রতিক কালের সেরা প্রদর্শনটি করে দেখাল যা সত্যি এশিয়ান কাপের আগে ভারতীয় কোচ ও খেলয়ারদের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বারিয়ে দেবে।

ভারতের কোচ ৪-৪-১-১ শুরু করেন জেজে কে একা সামনে রেখে আর সুনীল ছেত্রী কে একটু পেছন থেকে খেলান। গোলে শুরু করেন গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু, রক্ষণভাগের দায়িত্তে ছিলেন প্রীতম কটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গান, শুভাশিস বোস এবং নারায়ণ দাস। মাঝমাঠে প্রণয় হালদার, আনিরুধ থাপা, হলিচরণ নারজারি এবং উদান্তা সিং নিয়ন্ত্রন করেন।

খেলার শুরুতে চিন দল আধিপত্য নিয়ে শুরু করলেও ভারত পরে খেলায় ফিরে আসে। চিনের আক্রমনের জবাবে কন্সটান্টাইনের ভারতীয় দল দমে থাকেনি। তারাও আক্রমনের ধার বাড়ায় যার ফলস্বরূপ ১৩ মিনিটের মাথায় প্রীতম কোটালের ডায়গোনাল ক্রস গোলের মুখে থাকেলেও চিন গোলরক্ষক তা বাঁচিয়ে দেন নাহলে ভারত এগিয়ে জেতেই পারত।

এরপর ব্লূ টাইগার্স আর দমে থকেনি। ১৭ মিনিটে আনিরুধ থাপার ফ্রি-কিক থেকে সুনীল ছেত্রী বলের কাছে পোঁছেয়ও তার পা মাটিতে আতকে যাওয়ার দরুন বলটি বাইরে মেরে দেন।

২৪ মিনিটের গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু ওয়ুং লির একটা অসাধারন আক্রমন প্রতিরোধ করে ভারতের দুর্গ বাছান। গুরপ্রীত প্রথমার্ধে আর দুটো নিশ্চিত গোল বাঁচান এবং ভারতের আত্মবিশ্বাস এতে আর বেড়ে যায়। ভারতের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা প্রথমার্ধ জুড়ে একবার সেভাবে চাপে পড়তে দেখা যায়নি এবং তাদের জতবার পরীক্ষার মুখে পড়তে হয় সন্দেশ ঝিঙ্গান-শুভাশিস বোস জুটি অপ্রতিরধ্য হয়ে ওঠে।

প্রথমার্ধে একদম শেষের ৫ মিনিটে এসে চীন আক্রমণের ঝাঁজ বাড়াতে থাকে, ওয়ুং লি এবং এক্সুরি সৌজন্যে। ভারত এই সময়েই আক্রম্ন-প্রতিআক্রমণের খেলায় মেতে ওঠে এবং প্রথমার্ধে সুবর্ণ সুযোগটি পেয়ে যায়। জেজে-সুনীল জুটি চিন রক্ষনভাগকে প্রায় প্রতিহত করে ঢুকে যায় এবং চিনের এক রক্ষণভাগের খেলোয়াড়ের হাতে বল লাগলেও বক্সের মধ্যে তা রেফারির নজর এড়িয়ে যায়। এয় অবস্থাতেই প্রথমার্ধ গোলশূন্য ভাবে শেষ হয়, যেখানে দুই দলকেই সমানে সমানে লরাই করতে দেখা যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর প্রথম ১৫ মিনিট চিন আক্রমণে ঝাঁজ বাড়াতে থাকে। মুহুর্মুহু আক্রমণের দরুন তারা ভারতের অরধে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। গুরপ্রীত আআর পোস্ট না থাকলে ভারত এয় ১৫ মিনিটের দোরগরায় ৩ গোল খেয়ে যেত।

কোচ কন্সটান্টাইন বিপদের গন্ধ পেয়েই ৬৭ মিনিটে দুটো পরিবর্তন এক সঙ্গে করেন। ফর্মে না থাকা নারায়ণ দাসের জায়গায় আনাস কে নামিয়ে বাঁদিকে শুভাশিস কে নিয়ে চলে আসেন আর উদান্তার জায়গায় ডান প্রান্তে বড় চেহারার চিন সাইড-ব্যাকদের পরাস্ত করতে নিখিল পূজারই কে নামিয়ে দেন।

সারা ম্যাচে চিনের দুই ফুটবলার গাও লিন ও ওয়ুং লি ভারতকে বেগ দিতে থাকেন কিন্তু গুরপ্রীত সৌজন্যে তারা গোলের মুক্ষ খুলতে পারেনি। চিনের আক্রমনের ফাঁকেফাঁকে ভারত প্রতিআক্রমণে গেলেও তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি।

৮০ মিনিটে স্টিফেন জেজেকে তুলে ফারুখ চৌধুরী কে নামিয়ে একটা ‘ফ্রেশ লেগ’ ইঞ্জেক্ট করেন। চিন দল দদ্বিতীয়ার্ধে পুরোটাই জুড়ে শুধু কর্নার আর ফ্রী-কিকের প্রদর্শনী চলতে থাকে যার বেশিরভাগটাই চিনের পক্ষে যায়। এরই মাঝে ওয়ুং লি-গাওন রা দুটো গোল করলেও তা বাতিল হয়ে যায় ফউলের কারণে।

৮৫ ও ৯২ মিনিটে স্টিফেন শেষ দুটি আক্রমনতক পরিবর্তন করে একটা শেষ চেষ্টা করেন। প্রণয় হালদারের জায়গায় ভিনিত রাই এবং আনিরুধ থাপার জায়াগ্য রওলিন বরজেস কে এনে কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। ইঞ্জুরি টাইমের শেষ ৩ মিনিট দুই দলই গোল্মুখি আক্রমণ করতে থাকে কিন্তু ভারতের গুরপ্রীত এবং চিনের ইয়ান জানলিঙ্গের সৌজন্যে কোনও দলই গোলের মুখ খুলতে পারেনি। শেষমেশ ৯০ মিনিটের ফলাফল গোলশূন্য দাড়ায়।

ভারতের পারফর্মেন্স সত্যি এই ম্যাচে প্রশংসনীয় এবং ভারতের মাটিতে ১৩০ কোটির ভারতবাসী যারা ঘরে বসে টিভির পর্দায় চোখ রাখেন তাদের বুকও আজ গর্বে চওড়া হয়ে উঠবে।