২০১৭-১৮ হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগ(আইএসএল) চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা মাথায় উঠল চেন্নাইয়িন এফসির, এই নিয়ে আইএসএল-এ দ্বিতীয়বার দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হল তারা। প্রচারাভিযানের সময় তাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার সামনে এসেছেন যেমন অনিরুদ্ধ থাপা এবং ধনপাল গণেশ। দুই তরুণ ভারতীয় মারিনা মাচান্সের মাঝমাঠের জন্য এবং তাদের দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে। হিরো আইএসএল ২০১৭-১৮ তে এরকম আরও কিছু সফল ফুটবলারের কাহিনী সামনে এসেছে, যাদের কিছু আকর্ষণীয় পারফর্মেন্স তৈরি করেছিল এক নতুন অধ্যায়ের এবং যা তাদের স্পটলাইটের সামনে নিয়ে চলে আসে। এখানে আমরা এই মরসুমের উঠে আসা কিছু  প্রতিভার দিকে আলোকপাত করব।

অনিরুদ্ধ থাপা (চেন্নাইয়িন এফসি)

২০-বছর-বয়সী ফুটবলার অনিরুদ্ধ থাপাকে নিয়ে যথেষ্ট সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে কারন নিজের দলের মিডফিল্ডের হৃদয় হয়ে ছিলেন তিনি, তাঁর গতি এবং গতির সঙ্গে তিনি রেশমী প্যাচ ব্যবহার করেছেন। তিনি মিডফিল্ড থেকে তাঁর দলের কয়েকটি আক্রমণের পিছনে মুখ্য কারিগর হয়ে কাজ করেছেন, এবং মরসুম শেষ হতে না হতে তিনি নিজের নামে অনেক গুলি গোল লিখে ফেলেছিলেন, যারমধ্যে ছিল গুরুত্বপূর্ণ সেমিফাইনালের অ্যাওয়ে ম্যাচের গোল। সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে গোয়ার মাঠে খেলতে হয়েছিল তাদের, এবং সেখানে দুরন্ত গোল করেন অনিরুদ্ধ।

লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে (দিল্লি ডায়নামোস এফসি)

দিল্লির অন্যতম দারুণ প্রচারাভিযানে ছিলেন ২০ বছর বয়সী ফুটবলার লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে। ছাংতের দ্রুত গতির পরিবর্তন করার ক্ষমতা, যা দিল্লিকে আক্রমনে অনেকটা সাহায্য করেছিল। তিনি এর পাশাপাশি ভাল ড্রিব্লিং-এর ক্ষমতা প্রদর্শন করেন এবং তিনটি গোল নিজের নামের করার পাশাপাশি তিনটি গোল করিয়েছেন।

জেরি মাওহমিংথাঙ্গা (জামশেদপুর এফসি)

আরও একটা ২০ বছরের প্রতিভার কথা বলতে হয়, নাম জেরি মাওহমিংথাঙ্গা, যিনি কিনা ছিলেন এই মরসুমে জামশেদপুর এফসির আক্রমণের অন্যতম সেরা অস্ত্র। যদিও তার দল তাদের কঠিন প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীর জন্য বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল, তবুও তিনি গোল করে এবং করিয়ে দলকে আক্রমণের দিকে এগিয়ে দিতে সফল হয়েছিলেন। জেরির গতি এবং চমৎকার ড্রিব্লিং বিপক্ষের শান্তি ভঙ্গ করেছিল, এবং জেরি এই মরসুম শেষ করেন একটি গোল করে এবং তিনটি গোল করিয়ে।     

লালরুয়াথারা (কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি)

২৩ বছর বয়েসী ফুটবলার লালরুয়াথারা নিজের প্রতিরক্ষা মধ্যে দিয়ে নিজের প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছেন এবং রক্ষণের পাশাপাশি নিচ থেকে তাঁর ক্রমবর্ধমান দৌড় তার দৃঢ়তা হিসাবে কার্যকর হয়েছে। দ্রুত এবং দৃঢ়, লালরুয়াথারা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ট্যাকেল এবং বিপক্ষের আক্রমণে বাঁধা সৃষ্টি করেছেন। তিনি ক্লাব এবং দেশ উভয়ের জন্য ভবিষ্যতের সম্পদ হয়ে উঠছেন। নিজের পরিশ্রম দিয়ে তিনি এই মরসুমে এমার্জিং প্লেয়ার অফ দ্য লিগ-এর পুরস্কার জিতেছেন। লালরুয়াথারা এই মরসুমে ৮৫ টি ট্যাকেল করে প্রচারাভিযানে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডিফেন্ডার হয়েছেন।

কারেজ পেকুসন (কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি)

মরসুমে কেরালার মাঝমাঠে দুর্গ হয়ে উপস্থিতি ছিলেন মিডফিল্ডার কারেজ পেকুসন। তার শক্তি, কর্মদক্ষতা এবং গতিশীল প্রচুর পরিমাণে বল ছাড়া দেখে স্পষ্ট যে তিনি সবসময় খেলার মধ্যেই ছিলেন। ২৩ বছর বয়সী এই যুবক তাঁর বল ধরার ক্ষমতা এবং ঠিক সময়ে বল নিয়ে দৌড়ানোর বুদ্ধিমতা দেখিয়ে নিজেকে বয়সের তুলনায় অনেকটাই পরিপূর্ণ এবং প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন।লিগের শেষ পর্যন্ত তিনি একটি গোল করেছেন এবং পাঁচটি গোল করিয়েছেন।

আদিল খান (এফসি পুনে সিটি)

লিগের সবচেয়ে বহুমুখী খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন আদিল খান। তাঁর আক্রমণাত্মক দক্ষতা তাঁর প্রতিরক্ষামূলক আত্মবিশ্বাসের মতই প্রশংসনীয়। খান তার বেশিরভাগ এরিয়াল বলে জয়লাভ করে এবং নিজেকে বিরোধীদের কাছে সেটপিসের আক্রমণ একটি বড় হুমকি হিসেবে প্রমাণিত করেছেন। তার চারটি গোল বিশেষভাবে চিত্তাকর্ষক, তিনি বেশিরভাগ সময়ই মুম্বইয়ের মিডফিল্ডে হোল্ডিং-এর ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি এই মরসুমে ৭০ টি ট্যাকেল করে একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন।

ধনপাল গণেশ (চেন্নাইয়িন এফসি)

২৩ বছর বয়সী ধনপাল গণেশ হলেন চেন্নাইয়িন এফসির একটি বহুমুখী খেলোয়াড়। একজন কার্যকর রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার, যিনি একজন কঠিন ডিফেন্ডার হিসাবেো নিজেকে প্রমান করেছেন, গণেশ সবসময় তার পায়ের আঙ্গুল দিয়ে যে কোনও বিপদকে কাটিয়ে দেন। তিনি সেটপিসের সময় আক্রমন ভাগে দারুন কার্যকরী হয়ে ওঠেন এবং প্রতিপক্ষকে সর্বদা ভয়ে রাখেন। গণেশ দুটি গোল করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে গৌড়ের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে গুরুত্বপূর্ণ সেই হেডের গোল।

থিয়াগো স্যান্টোস (মুম্বই সিটি এফসি)

তরুণ ব্রাজিলিয়ান হিরো আইএসএল ২০১৭-১৮-তে মুম্বইয়ের জন্য এক অসাধারণ পারফর্মেন্স করেছিলেন, তার বেশিরভাগটাই ছিল আক্রমনের সঙ্গে জড়িত। ২২ বছর বয়সী এই তরুণ ফুটবলারের নামের পাশে পাঁচটি গোল করার কৃতিত্বের পাশাপাশি একটি গোল করানোর তথ্যও লেখা থাকবে, তবে এতো কিছুর পরেও তাঁর দল সেমিফাইনালে উঠতে না পারায় হতাশাটাও রয়েই যাবে। থিয়াগোর বুদ্ধিমত্তা এবং বলের উপর তাঁর দখলের ক্ষমতা তাঁকে আইসল্যান্ডর্সদের সবচেয়ে প্রতিভাশালী ফুটবলার হিসাবে তৈরি করেছে, এর পাশাপাশি বলা যেতেই পারে তিনি ফুটবল ভবিষ্যতের এক প্রতিশ্রুতিশীল অমুল্য রত্ন।

দীপেন্দ্র নেগি (কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি)

১৯ বছর বয়েসী মাত্র তিনটি ম্যাচে হাজির হয়েছিলেন, তবে তারমধ্যেই নিজের চিহ্ন ছাড়তে সফল হন দীপেন্দ্র নেগি। দিল্লি ডায়নামোসের বিপক্ষে এক ম্যাচে পরিবর্ত হিসাবে কেরালার হয়ে মাঠে নামেন তিনি, সেই সময় তাঁর দল একটু পিছনে পরে গিয়েছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে হিরো আইএসএল-এ তার প্রথম গোল। এরপর তাঁর দল সেই ম্যাচে জয় লাভ করে। একটি দ্রুত গতির মিডফিল্ডার নেগি, তার ঝুলি পূর্ণ করে ট্যালেন্ট রেখে দিয়েছেন। অবশ্যই যা ভবিষ্যতে তাঁকে একজন বড় মাপের ফুটবলার করে তুলবে।

বিশাল কাইথ (এফসি পুনে সিটি)

এফসি পুনে সিটির হয়ে চমৎকার ফর্ম প্রদর্শন করেন বিশাল কাইথ, আইএসএল-এর ইতিহাসে প্রথম সেমিফাইনালে খেলে কমলা জার্সি ধারি। কাইথের পারফর্মেন্স বিচার করা যাবে একটা সংখ্যা দিয়ে, পুনের হয়ে ১৭ বার মাঠে নেমে বিশাল ৪৫ টি সেভ করেন, কাইথ গোল হজমের বিচারে, মিনিটের ব্যবধান ধরে যে গড় পাওয়া যায় তা হল ৮০.৫৩ মিনিট। মরসুমে তিনি সাতটি ক্লিনশিট রাখতে সফল হন এবং আইএসএল-এ কাইথ নিজের পারফর্মেন্সের ক্ষমতায় ভারতীয় জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন। ভারতীয় ফুটবলের প্রধান কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন জাতীয় দলের জন্য তাঁর নাম পচ্ছন্দ করেছেন। চেন্নাইয়ের রেনে মিহেলিকের বিপক্ষে তার পেনাল্টি বাঁচান ছিল এই মরসুমের খেলার অন্যতম সেরা অংশ বিশেষ।