খেতাব জয় দিয়ে মরশুম শুরু করল সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরু এফসি। রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মুম্বই সিটি এফসি-কে ২-১-এ হারিয়ে এই প্রথম ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন হল তারা। প্রথমার্ধে শিবশক্তির গোলে এগিয়ে যায় বেঙ্গালুরু এফসি। ৩০ মিনিটের মাথায় সেই গোল শোধ করেন আপুইয়া। দ্বিতীয়ার্ধে ৬১ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করেন দীর্ঘদেহী ব্রাজিলীয় ডিফেন্ডার অ্যালান কোস্তা।

এ দিন, প্রত্যাশিত ভাবেই হিরো আইএসএলের দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। একাধিক সুযোগ তৈরি করে নষ্টও করে দু’পক্ষই। মুম্বই সিটি এফসি যে সুযোগ পেয়েছিল, তাতে ম্যাচটি অতিরিক্ত সময়েও গড়াতে পারত অনায়াসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটেই ঐতিহাসিক ১৩১তম ডুরান্ড কাপ খেতাব জিতে নেয় সুনীল ছেত্রী, রয় কৃষ্ণা, প্রবীর দাস, হীরা মন্ডল, সন্দেশ ঝিঙ্গনদের বেঙ্গালুরু এফসি।

রয়, প্রবীর, সন্দেশ, হীরা-রা গত মরশুমে কলকাতার ক্লাবে খেলায় তাঁদের প্রচুর ভক্ত এ দিন গ্যালারিতে এসেছিলেন খেলা দেখতে। কলকাতার জামাই সুনীল ছেত্রীর ভক্তের সংখ্যাও এই শহরে কম নয়। তাঁরাও তাঁর খেলা দেখতে আসেন যুবভারতীতে। ভক্তদের সমর্থনে উজ্জীবিত তারকারাই রবিবার শেষ হাসি হাসেন।

এ দিন মুম্বই সিটি এফসি আক্রমণাত্মক মেজাজে ম্যাচ শুরু করে। কিন্তু দশ মিনিটের মাথায় তারা বড়সড় ধাক্কা খায় শিবশক্তির গোলে। গোলের সুযোগ পেয়ে মরিয়া তরুণ ফরোয়ার্ডকে আটকাতে ব্যর্থ হন মুর্তাদা ফলের মতো দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডারও। তাঁকে পরাস্ত করে বিপক্ষের গোলকিপার ফুর্বা লাচেনপার মাথার ওপর দিয়ে লব করে জালে বল জড়িয়ে দেন শিবশক্তি (১-০)।

পিছিয়ে যাওয়ার পর তা শোধ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে মুম্বই সিটি এফসি। কিন্তু বেঙ্গালুরুর দুর্ভেদ্য রক্ষণে বারবার বাধা পায় তারা। একাধিক শট লক্ষ্যভ্রষ্টও হয় তাদের। অবশেষে তারা মরিয়া চেষ্টার ফল পায় ৩০ মিনিটের মাথায়। লালেঙমাউইয়া রালতে, যাঁকে ভারতীয় ফুটবল মহল চেনে আপুইয়া নামে, তিনি সমতা আনেন। গুরপ্রীত সিংয়ের হাত থেকে ছিটকে আসা বলে শট নিয়ে।

টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলারের খেতাবজয়ী গ্রেগ স্টুয়ার্ট প্রথমে তাঁর বাঁ পা দিয়ে গোল লক্ষ্য করে মাটি ঘেঁষা শট নেন। সেই বল গুরপ্রীতের হাত থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসার পরে শট মারেন আপুইয়া। এ বার আর আটকাতে পারেননি গুরপ্রীত (১-১)।

৩৮ মিনিটে ব্যবধান তৈরির সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান রয় কৃষ্ণা, যখন রোশনের কর্নার ফুর্বার পাঞ্চ করে বের করে দেওয়ার পরে বল এসে পড়ে তার পায়ে। তিনি গোলে শট নিলেও তা গোল লাইন পেরনোর আগেই আটকে যার বিপক্ষের রক্ষণে।

দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণ দিয়ে শুরু করে মুম্বই। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ফের প্রতি আক্রমণে ওঠেন সুনীল ছেত্রীরা। ৫১ মিনিটে ফের সুযোগ পান কৃষ্ণা। অনেকটা দূর থেকে গোলে শট নেন তিনি। কিন্তু গ্রিফিথ তা ব্লক করে দলকে তখনকার মতো বাঁচিয়ে দেন।

সুনীল ছেত্রী এ দিন সারা ম্যাচেই বেশ চনমনে ছিলেন। ম্যাচের সেরা সুযোগটি তিনি পান ৬০ মিনিটের মাথায়, যখন জয়েশ রানের কাছ থেকে পাওয়া বল বক্সের মধ্যে প্রায় ফাঁকায় পেয়ে যান অধিনায়ক। সামনে শুধু ছিলেন গোলকিপার এবং তিনিই সুনীলের শট আটকে দেন অনবদ্য ভাবে। সুনীল ফের অসাধারণ এক শট নেন গোলে। ৬৯ মিনিটের মাথায় বাঁ পায়ে নেওয়া এই দূরপাল্লার শট কয়েক ইঞ্চির জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

সুনীলের এই ব্যর্থতার হতাশা অবশ্য পরবর্তী মিনিটেই কেটে যায় ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার অ্যালান কোস্তার গোলে। দলনেতারই কর্নারে হেড করে গোলটি দেন কোস্তা। প্রায় সাড়ে ছ’ফুট ফুট দীর্ঘ এই ডিফেন্ডারকে আটকাতে পারেননি কেউই। এই গোলের দু’মিনিট পরেই অবশ্য চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন কোস্তা। তাঁর জায়গায় মাঠে নামেন পরাগ শ্রীবাস্তব।

মরিয়া মুম্বইয়ের স্প্যানিশ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার আলবার্তো নগুয়েরা ৭৬ মিনিটের মাথায় বক্সের মাথা থেকে গোলে শট নিলেও তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৭৯ মিনিটের মাথায় একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন করে বেঙ্গালুরু এফসি। রোহিত কুমার, উদান্ত সিং ও হীরা মন্ডল মাঠে নামেন যথাক্রমে জয়েশ, প্রবীর ও রোশনের জায়গায়।

শেষ দশ মিনিটে বেঙ্গালুরু ক্রমশ রক্ষণাত্মক হতে শুরু করলেও ৮৭ মিনিটের মাথায় সুনীল অসাধারণ একটি সুযোগ তৈরি করে নেন শিবশক্তির পাস থেকে। বিপক্ষের বক্সের মধ্যে গোলে শট নেন। কিন্তু এ বারেও ফুর্বা সেই বলে হাত ছুঁইয়ে দলকে আরও বেশি ব্যবধানে হার থেকে বাঁচান।

নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে মুম্বইয়ের মন্দার রাও দেশাইয়ের জায়গায় নামেন বিক্রম প্রতাপ সিং। বেঙ্গালুরুও শিবশক্তিকে তুলে নিয়ে নামগিয়াল ভুটিয়াকে নামায়। গোল শোধ করে ম্যাচটা অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়তি ছ’মিনিট সময়ও পায় মুম্বই সিটি এফসি।

এই বাড়তি সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে আহমেদ জাহু বিপক্ষের বক্সে বল বাড়ান বিপিন সিংকে লক্ষ্য করে। কিন্তু তার আগেই সেই বলের দখল নিয়ে নেন গুরপ্রীত। এর দু’মিনিট পরেই গ্রেগ স্টুয়ার্টের গোলমুখী শট পোস্টের কয়েক ইঞ্চি বাইরে দিয়ে চলে যায়। শেষ মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় একটি ফ্রি কিকও পায় মুম্বই। কিন্তু তাও কাজে লাগাতে পারেননি স্টুয়ার্ট।        

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরার লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে সোনার বুট পান। তিনি মোট ৭ গোল করেছেন। টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব সোনার বল পান গ্রেগ স্টুয়ার্ট। এ বারের ডুরান্ড কাপের গ্রুপ পর্বে ‘এ’ গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে নক পার্বে ওঠার পর কোয়ার্টার ফাইনালে তারা ২-১-এ হারায় ওডিশা এফসি-কে এবং সেমিফাইনালে তারা ১-০-য় হারায় হায়দরাবাদ এফসি-কে। গ্রুপ পর্বে সুনীল ছেত্রীর দল হারায় জামশেদপুর এফসি (২-১) ও ভারতীয় বায়ূসেনাকে (৪-০) এবং ড্র করে এফসি গোয়া (২-২) ও মহমেডান স্পোর্টিংয়ের (১-১) বিরুদ্ধে।