গত দুই মরশুম ফাঁকা গ্যালারির সামনে হিরো আইএসএলের সব ম্যাচ হওয়ার পরে আসন্ন মরশুমে সব স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ফিরে আসছেন ফুটবলপ্রেমী দর্শকেরা। এই নিয়ে যথেষ্ট খুশি বেঙ্গালুরু এফসি-র অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। তিনি মনে করেন, এ বারই ফুটবলের আসল পরিবেশ ফিরে আসবে দেশের এক নম্বর ফুটবল লিগে। এর জেরে সব দলের ফুটবলাররাও যথেষ্ট উজ্জীবিত হবেন এবং নিজেদের সেরাটা দিতে পারবেন।

ভারত অধিনায়ক সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “গ্যালারিতে দর্শকদের ফিরে আসার ঘটনা দারুন ভাবে প্রভাব ফেলবে এ বার। বিশেষ করে আমাদের ওপর। সমর্থকেরা স্টেডিয়ামে না থাকায় গত দু’বছর ধরে সব ক্লাবের ফুটবলারদেরই সমস্যা হয়েছে। আমার মনে হয়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমাদের। তাই আমাদের কাছে এটা সবচেয়ে ভাল খবর”। সর্বভারতীয় দৈনিক টাইমস অফ ইন্ডিয়া-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কথাগুলি বলেন সুনীল ছেত্রী।

আসন্ন হিরো আইএসএল মরশুমে ফের হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে খেলা শুরু হবে। অংশগ্রহনকারী ১১টি দল নিজেদের ঘরের মাঠে যেমন খেলবে, তেমনই প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে গিয়েও তাদের খেলতে হবে। ফলে প্রতি দলকে লিগ পর্বে ২০টি করে ম্যাচ খেলতে হবে— দশটি ঘরের মাঠে ও বাকি দশটি প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে। সব মিলিয়ে এ বার লিগ পর্বে ১১০টি ম্যাচ হবে।

এর পরে নক আউট পর্বে সেমিফাইনালও হবে দু’টি লেগে, হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে। এ ছাড়া এ বছর থেকে দু’টি এলিমিনেটর ম্যাচ হবে, যাতে লিগ টেবলে থাকা তিন থেকে পাঁচ নম্বর দল অংশ নেবে। প্রথম এলিমিনেটরে লিগ টেবলের তিন ও ছয় নম্বর দল মুখোমুখি হবে। দ্বিতীয় এলিমিনেটরে মুখোমুখি হবে চার ও পাঁচ নম্বরে থাকা দল। প্রথম সেমিফাইনালে এক নম্বর দল ও দ্বিতীয় এলিমিনেটরের জয়ী দল মুখোমুখি হবে এবং দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দুই নম্বর দল ও প্রথম এলিমিনেটরের জয়ী দল মুখোমুখি হবে।

গত দু’বারের তুলনায় এ বার হিরো আইএসএলের সময়ও বাড়ছে। গত দু’বার যেমন নভেম্বরে লিগ শুরু হয়ে মার্চে শেষ হয়েছিল, এ বার কিন্তু তা হচ্ছে না। এ বার কুড়ি রাউন্ডের লিগ পর্ব ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে চলবে ২০২৩-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং নক আউট পর্ব হবে মার্চে। নক আউটের তারিখ জানানো হবে পরে। অর্থাৎ এ বার চার মাসের বদলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে হবে হিরো আইএসএল। দু’টি এলিমিনেটর যোগ হওয়ায় ম্যাচের সংখ্যাও ১১৫ থেকে বেড়ে হচ্ছে ১১৭। অর্থাৎ, ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা এ বার বছরের প্রায় অর্ধেক সময়ই ফুটবল উৎসবে মেতে থাকতে পারবে।

তা ছাড়া এ বারে তো শুধু হিরো আইএসএল হচ্ছে না। এই বছর থেকেই ভারতীয় ক্লাব মরশুম আরও দীর্ঘ হচ্ছে। হিরো আইএসএলের আগে মরশুমের উদ্বোধনী টুর্নামেন্ট চলতি ডুরান্ড কাপে লিগে অংশগ্রহনকারী এগারোটি দলই অংশ নিয়েছে। যাদের মধ্যে ছ’টি দলই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। ফলে লিগ শুরুর আগে নিজেদের ম্যাচ-ফিট করে তোলার সুযোগ পাচ্ছেন সব দলের ফুটবলাররা।

হিরো আইএসএল শেষ হওয়ার পরে আগামী বছর এপ্রিলে শুরু হবে সুপার কাপ। তাই প্রতিটি দল ও তাদের ফুটবলাররা যেমন সারা বছরে আগের চেয়ে আরও বেশি সংখ্যক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে যাবেন, তেমনই সমর্থকেরাও তাদের প্রিয় দলের আরও বেশি ম্যাচ দেখার সুযোগ পাবেন। এতে যেমন তাঁরা খুশি হবেন, তেমনই খেলোয়াড়রাও খুশি। সুনীল ছেত্রীর কথায় তারই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে।

সুনীলের দল ঘরের মাঠেই নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁদের প্রথম ম্যাচ খেলতে হবে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে, তাদের ঘরের মাঠ কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে, ৮ অক্টোবর, লিগ শুরুর পরের দিনই। তবে তিনি তাকিয়ে রয়েছেন কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচের দিকে।

১১ ডিসেম্বরের এই ম্যাচ নিয়ে তিনি এই সাক্ষাৎকারে বলেন, “গ্যালারিতে কেরালা ব্লাস্টার্সের সমর্থকদের বিরুদ্ধে খেলতে নামাটা একটা বিশাল অভিজ্ঞতা। তাই ওদের বিরুদ্ধে ম্যাচটা খেলার অপেক্ষায় আছি”। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সারা বিশ্বে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কেরালা ব্লাস্টার্সের সমর্থকের সংখ্যা ৫০ লক্ষেরও বেশি। যা বিশ্বের নামী ও বহুলসমর্থিত ফুটবল ক্লাবগুলির তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবে। হিরো আইএসএলে সমর্থকদের সংখ্যার দিক থেকে কেরালা ব্লাস্টার্স ও কলকাতার দুই ক্লাবই সবচেয়ে এগিয়ে। এ বারের মরশুমে তাদের ঢল নামবে বিভিন্ন ভেনুতে।