মোহনবাগান ও এটিকে এফসি-র মৈত্রীচুক্তি নিয়ে খুশির হাওয়া সারা দেশের ফুটবল মহলে। প্রাক্তন ফুটবলার থেকে শুরু করে কোচ, বর্তমান ফুটবলার প্রায় সবারই ধারণা, ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যতের পক্ষে এটা খুবই ভাল খবর। বিশেষ করে আরও খুশি মোহনবাগানে খেলা প্রাক্তন তারকারা। 

যেমন রজত ঘোষদস্তিদার, যিনি ভারতের জাতীয় ক্লাবের হয়ে ২০০১ থেকে ২০০৩-টানা তিন মরশুম খেলেছেন, বর্তমানে তিনি আইএসএলের অন্যতম ধারাভাষ্যকার। রজতের মতে, “যারা ফুটবল দেখেন, ভালবাসেন, তাদের কাছে এটা একটা বিশাল খবর। হিরো আইএসএল ভারতের এক নম্বর ফুটবল লিগ, সেই লিগে খেলার সুযোগ পাচ্ছে মোহনবাগান। আমার বিশ্বাস, সমর্থকেরা এই সিদ্ধান্তকে হৃদয় দিয়ে স্বাগত জানাবেন”।

২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত মোহনবাগানের জার্সি গায়ে খেলা কর্নাটকের ডিফেন্ডার এনএস মঞ্জু-এই খবরে উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, “মোহনবাগানকে এ দেশের এক নম্বর ফুটবল ক্লাব বলে অনেকেই। আর হিরো আইএসএল-ও এখন দেশের এক নম্বর লিগ। তাই এক নম্বর ক্লাবের এক নম্বর লিগে অবশ্যই খেলা উচিত। শুধু মোহনবাগান বা এটিকে-র পক্ষে যে এটা ভাল খবর, তা কিন্তু নয়। আইএসএল এবং ভারতীয় ফুটবলের পক্ষেও এটা খুবই ইতিবাচক ঘটনা”।

২০১২-১৩ মরশুমে সবুজ-মেরুণ জার্সি গায়ে কয়েকটি ম্যাচে খেলতে দেখা গিয়েছিল যে ডিফেন্ডারকে, কেরালার সেই সুশান্ত ম্যাথুর মতে, “যখন আইএসএলে এটিকে প্রথম খেলতে এল, তখনই এই দুই ক্লাবের সঙ্গে হাত মেলানোর চেষ্টা হয়েছিল বলে শুনেছিলাম। এত দিনে সেই উদ্যোগটা সফল হল। ভারতীয় ফুটবলের পক্ষে এটা খুবই ভাল খবর”।

বাংলার ঘরের ছেলে রহিম নবি। মোহনবাগানের এই প্রাক্তন তারকা সবুজ-মেরুন শিবিরে ছিলেন তিন বছর, ২০১১ থেকে ২০১৩। কলকাতার ফুটবলে ঘটে যাওয়া সম্প্রতি সবচেয়ে বড় ঘটনাটি নিয়ে এই উইঙ্গারের মন্তব্য, “এটিকে-মোহনবাগান মিলে যাওয়ার ফলে এ বার কলকাতাতেই সবচেয়ে বেশি দর্শক আইএসএলের খেলা দেখতে আসবে বলে মনে হয় আমার। এটা খুবই ভাল খবর যে, সেরা দলগুলোকে নিয়েই ক্রমশ আইএসএল জমজমাট হয়ে উঠতে চলেছে”।

বৃহস্পতিবারই জানা যায়, আগামী বছর থেকে এটিকে ও মোহনবাগান— দুই দল একত্রিত হয়ে হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে অংশগ্রহণ করবে। এটিকে এফসি-র মালিক পক্ষ আরপিএসজি-র হাতে থাকবে নতুন এই ক্লাবের ৮০ শতাংশ মালিকানা।  মোহনবাগান ফুটবল ক্লাব (ইন্ডিয়া) প্রাইভেট লিমিটেডের কাছে থাকবে বাকি ২০ শতাংশ।  দুই সংস্থা মিলিত হয়ে যে ক্লাব গঠিত হবে, তার নামে এটিকে ও মোহনবাগান দুই ব্র্যান্ডই থাকবে।

বাংলার দুই সেরা ফুটবলখেলিয়ে ক্লাবের এই মৈত্রীতে যে এ রাজ্যের ফুটবলে আরও সাফল্য আসবে, এমনই মনে করছে দেশের ফুটবল মহল। ভারতীয় ফুটবলে যখন উন্নতির জোয়ার আসতে চলেছে, দেশের ফুটবলকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগে যখন সারা দেশের ফুটবল প্রশাসক ও পৃষ্ঠপোষকেরা হাত মিলিয়েছেন, সেই সময়ে এই ঘটনা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।  এক সময় দশকের পর দশক ভারতীয় ফুটবলের মক্কা কলকাতা দেশের ফুটবলে আধিপত্যে করেছে। আশা করা যায়, বাঙালির ফুটবলের সেই সুদিন আবার ফিরে আসবে এই ঐতিহাসিক চুক্তির ফলে। ভারতীয় ফুটবলকেও আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে দুই সফল ক্লাবের এই মৈত্রীচুক্তি।