চোটমুক্ত দল নিয়ে হিরো আইএসএল ২০১৯-২০-র জন্য তৈরি এটিকে এফসি-র কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস I ৪৫ দিন ধরে তৈরি করা দল নিয়ে এ বার তিনি ঝাঁপিয়ে পড়তে চান দেশের সেরা ফুটবল লিগের রণক্ষেত্রে I লক্ষ্য একটাই, প্রতিটি ম্যাচ জেতা I

বৃহস্পতিবার স্প্যানিশ কোচ সাংবাদিকদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “আমরা লিগের জন্য তৈরি I আমাদের শান্ত থাকতে হবে I মনোসংযোগ বাড়াতে হবে I দলে কারও কোনও চোট নেই I দলের ছেলেদের মানসিকতা দেখে আমি খুবই খুশি I এ বার শুধু লক্ষ্যপূরণের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পালা I প্রতি ম্যাচে জয় চাই I এটাই আমাদের লক্ষ্য I” কোচ যখন এতটা আত্মবিশ্বাসী ও বদ্ধপরিকর, তখন দলের ফুটবলাররাও যে প্রত্যয়ী হবেন, এটাই স্বাভাবিক I খেলোয়াড়দের কথা শুনেও মনে হচ্ছে তাঁরা এ বার সমর্থকদের ভাল ফুটবল ও সাফল্য উপহার দিতে মরিয়া I

রবিবার কোচিতে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে এ বারের হিরো আইএসএলের অভিযান শুরু করতে চলেছে এটিকে I গত দু’বারের ব্যর্থতার পরে সাফল্যের পথে ফিরে আসতে বদ্ধপরিকর দু’বারের চ্যাম্পিয়নরা I তাই ফিরিয়ে আনা হয়েছে প্রথমবার সাফল্য এনে দেওয়া স্প্যানিশ কোচ হাবাসকে I সঙ্গে দলে বেশ কিছু বড় পরিবর্তনও আনা হয়েছে I ফিজি থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার এ-লিগের সোনার বুটজয়ী স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণা ও তাঁর সঙ্গী ফরোয়ার্ড ডেভিড উইলিয়ামসকে I সমর্থকদের আশা, এই জুটিই হয়তো এ বার এটিকে-র আক্রমণ বিভাগকে ভয়ঙ্কর করে তুলবে I

হাবাসও আক্রমণাত্মক ফুটবল পছন্দ করেন I তাঁর নীতি, দলের ভারসাম্য ঠিক রেখে বিপক্ষকে চাপে রাখো I রয়-সঙ্গী উইলিয়ামস এ দিন জানিয়ে রাখলেন, “আমরাই প্রথম তিনবার আইএসএলজয়ী দল হয়ে উঠতে চাই I দলের খেলোয়াড়রা প্রস্তুতিতে যথাসাধ্য উজাড় করে দিয়েছে I আমিও মাঠে আমার সেরাটা দিতে চাই I নিজের অভিজ্ঞতা স্থানীয় ছেলেদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে চাই I এখন আমরা শুধু রবিবারের ম্যাচ নিয়ে ভাবছি I ভারতীয় দল থেকে ছেলেরা শিবিরে যোগ দেওয়ার পরে আমরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠব I এখানে এসেছি প্রচুর গোল করতে ও মানুষকে আনন্দ দিতে I”

কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের প্রিয় দল এটিকে এফসি-র দুই বাঙালি ফুটবলার প্রীতম কোটাল ও প্রণয় হালদার বেশ খুশি শহরের মানুষের সামনে নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পেয়ে I তবে সে জন্য বাড়তি চাপে ভুগতে রাজি নন তাঁরা I ডিফেন্ডার প্রীতম বললেন, “এটিকে-র হয়ে তো ২০১৬-তেও খেলেছি I তাই কলকাতার সমর্থকদের সামনে খেলার অভিজ্ঞতা আছে আমার I এ জন্য কোনও বাড়তি চাপ নেই, বরং আরও উপভোগ করব I নিজের শহরে ভাল খেলতে কার না ভাল লাগে?”

অন্যদিকে ২৬ বছর বয়সি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার প্রণয়ও তাঁর বাঙালি সতীর্থের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলেন, “প্রীতমের সঙ্গে আমি একমত I আমরা এর আগেও কলকাতায় বহু ম্যাচ খেলেছি I তাই এখানে খেলাটা আমাদের কাছে চাপের নয়, বরং আনন্দের I”

হিরো আইএসএলের পারফরম্যান্স দেখেই ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচ পরবর্তী ম্যাচের দল গড়তে পারেন শুনে প্রীতম বলেন, “এই ম্যাচগুলো আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ I ভারতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ আসবে কি না জানি না I তবে (হিরো আইএসএল-এর) এই ম্যাচগুলোতে নিজেকে প্রমাণ করার একটা তাগিদ অবশ্যই আছে I আমি যে প্রথম এগারোয় থাকার যোগ্য, এই লিগে সেটাই প্রমাণ করতে হবে আমাকে I”

অন্য দিকে চোট সারিয়ে মাঠে ফেরা প্রণয় বলেন, “এখন আমি ফিট I এখন যদি ভারতীয় দলে আমাকে ডাকা হয়, তা হলে নিজের সেরাটা দিতে পারব I আইএসএল-এর ম্যাচগুলো অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ I”

নিজের দলকে লিগের সেরা বললেও হাবাস কিন্তু অন্য দলগুলিকেও যথেষ্ট সমীহ করছেন I বলেন, “কোন দল সেরা, জানি না I তবে প্রতিটি দলকে শ্রদ্ধা করতেই হবে I কারণ, আমার ধারণা, কেউই কম যায় না I” ম্যাচের পরিকল্পনা নিয়ে বেশি কিছু বলার পক্ষপাতি নন তারকা কোচ I শুধু বললেন, “সবার আগে নিজেদের রক্ষণকে আঁটোসাঁটো করে নাও I তারপরে আক্রমণে ওঠা শুরু করো I গত ৪৫ দিন ধরে ছেলেদের মাথায় এই মন্ত্রটাই গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করেছি I”

আর হাবাসের সহকারী জনপ্রিয় ভারতীয় কোচ সঞ্জয় সেন বলছেন, “গোল খাওয়া চলবে না, এটাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য I আগে গোল দিতেও হবে I এটাই আমাদের পরিকল্পনা I দলের প্রত্যেকেই ভাল ফুটবলার I কোচের এই পরিকল্পনা ওদের বুঝতে কোনও অসুবিধা হয়নি I এ বার দেখার, মাঠে এই পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়িত করতে পারে ওরা I”