তাঁর কাছে ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগ এটিই। আর এই স্বর্ণযুগে খেলতে পেরে দারুন খুশি ভারতীয় দলের ডিফেন্ডার আনোয়ার আলি। গত মঙ্গলবারই ভারতীয় ফুটবলে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত সৃষ্টি হয়, যখন তারা টানা দ্বিতীয় বারের জন্য এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। এর আগে কখনও ভারত এশিয়ার সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারেনি।

হংকংকে হারিয়ে সেই সন্মান অর্জন করে নেয় ভারত এবং ভারতের সেই ৪-০-য় জয়ে প্রথম গোলটি ছিল আনোয়ারেরই, যাঁকে একসময় তাঁর শারীরিক অবস্থার জন্য পেশাদার ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করেছিল সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন।      

সেই বাধা পেরিয়ে এখন তিনি নতুন তারকা। এবং দেশের হয়ে মাঠে নেমে সাফল্যও পাচ্ছেন। সম্প্রতি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে রক্ষণে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন আনোয়ার। তাঁর দল সারা পর্বে একটির বেশি গোল খায়ইনি।

সর্বভারতীয় ইংরাজি দৈনিক ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’- কে আনোয়ার বলেন, “এখন আমার বয়স কম এবং ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগের সামিল হতে চাই। গত কয়েকটি ম্যাচে আমরা যে ভাবে খেলেছি, তার জন্য আমি খুবই খুশি”।

হংকংয়ের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে সুনীল ছেত্রী, মনবীর সিং ও ইশান পন্ডিতার আগে ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মধ্যপ্রদেশের আদমগড় থেকে উঠে আসা এই তারকা। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের আগে বাহরিন, বেলারুশ ও জর্ডনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলের তিনটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচেও খেলেছিলেন আনোয়ার।

ম্যাচের পরে সে দিন তিনি বলেন, “দেশের হয়ে কোনও দিন যে গোল করতে পারব, তা ভাবতেই পারিনি। স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। এত ভাল ভাল ফুটবলার দলে থাকতে আমি? ভাবতেই পারছি না”।

ফুটবল জীবনের শুরুতেই চরম ধাক্কা খেয়েছিলেন পঞ্জাবের আদমপুর থেকে উঠে আসা আনোয়ার। ডাক্তাররা বলে দিয়েছিলেন, তাঁর হৃদযন্ত্রের দেওয়ালের কিছুটা অংশ একটু মোটা, যার ফলে তাঁর হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই রোগের নাম হাইপারট্রফিক মায়োকার্ডিওপ্যাথি। তাই চিকিৎসকেরা ২১ বছর বয়সি ছেলেটিকে জানিয়ে দেন, তাঁর আর আর ফুটবল খেলা হবে না।

সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের মেডিক্যাল কমিটিও তাঁকে পেশাদার ফুটবল থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয়। কারণ, এই একই সমস্যা থাকায় ২০০৩-এ ক্যামেরুনের প্রাক্তন তারকা মার্ক ভিভিয়ান ফো ফিফা কনফেডারেশন কাপের সেমিফাইনাল চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

কিন্তু ব্যক্তিগত মুচলেকা দিয়ে ফুটবল চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আনোয়ার। চার বছর পরে তাঁর জীবনে যেটা ঘটল, তাকে তল্পনাতীত বললেও ভুল হবে না। ২০২১-২২ মরশুমে এফসি গোয়ায় যোগ দেন তিনি। সেখানে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান। তার পরেই ভারতের ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচ তাঁকে ডেকে নেন জাতীয় দলের জন্য। বাকিটা স্বপ্নের মতো।

শেষ ম্যাচের অপর ভারতীয় স্কোরার সহাল আব্দুল সামাদ এখন দেশের ঘরোয়া ফুটবলের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তাঁর মতে, ডুরান্ড কাপ, হিরো আইএসএলে খেলেই এশিয়ান কাপের মূলপর্বের অনেকটা প্রস্তুতি সেরে ফেলতে পারবেন তাঁরা। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের সবারই ম্যাচ খেলা দরকার। মরশুম যত দীর্ঘ হবে, খেলোয়াড়রা তত ভাল তৈরি হবে। এর ফলেই আমরা ছন্দে থাকতে পারব”।

টুইটারে হিরো আইএসএলের এক লাইভ চ্যাটে কেরালা ব্লাস্টার্সের সহকারী কোচ ও প্রাক্তন ফুটবলার ইশফাক আহমেদ বলেন, “জিকসন সিং, আকাশ মিশ্র, রোশন সিংদের ওপর টিম ম্যানেজমেন্ট আস্থা রাখার পর তারা যে উচ্চতায় পৌঁছে দেখিয়ে দিয়েছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে, ভারতীয় দলের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ তরুণদের নিয়ে গড়া হতে চলেছে। তাই হংকংয়ের বিরুদ্ধে ইশান পন্ডিতা গোল করার পর সুনীল ছেত্রীকেও ডাগ আউটে লাফাতে দেখা গিয়েছে। ওদের টিম স্পিরিট এখন কেমন, এ থেকেই বোঝা যায়”।