জয় দিয়েই এ বারের হিরো আইএসএল শুরু করতে চেয়েছিলেন, সেই জয় দিয়েই করলেন এবং জয়ের নায়ক তিনিই। সব মিলিয়ে শুক্রবার রাতটা ছিল ফিজি থেকে আসা তারকা স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণারই। গত বার ১৫টি গোল করে ও ছ’টিতে সহায়তা দিয়ে ঠিক যেখানে নিজের ঔজ্জ্বল্য ছেড়ে গিয়েছিলেন, সেই গোয়ার মাঠ থেকেই আবার সেই ঔজ্জ্বল্যকে বাড়িয়ে নিলেন সপ্তম আইএসএলের প্রথম ম্যাচে। যা কিনা আবার এটিকে মোহনবাগানের অভিষেক ম্যাচও। দেশের সেরা লিগে এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের অভিযানের সূচনাকে স্মরণীয় করে রাখলেন অসাধারণ এক গোল করে। 

ম্যাচের পরে আইএসএল মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রয় বলেন, “আজ কঠিন ম্যাচ ছিল আমাদের। জানতাম কেরালা ব্লাস্টার্স প্রতিপক্ষ হিসেবে মোটেই সহজ হবে না। তবে আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ীই আমরা খেলেছি। গোটা দলেরই কৃতিত্ব এটা। আমরা একাধিক সুযোগও পেয়েছিলাম। বিশেষ করে আমি। তাই গোলটা পাওয়ার জন্য অনেক ধৈর্য ধরতে হয়”।

কোভিড পরিস্থিতিতে ঠিক মতো প্রস্তুতি হয়নি। প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলারও সুযোগ পাননি। তার ওপর দীর্ঘ সাত মাস পরে ম্যাচে নেমেছিলেন তাঁরা। এই নিয়ে রয় বলেন, “যে রকম পরিস্থিতি, সেই অনুযায়ীই আমাদের এগোতে হবে, কাজ করতে হবে। আমরা সব দিক মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিয়েছি। সব দলকেই এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে প্রস্তুত হতে হয়েছে। কারা কতটা মানিয়ে নিয়ে নিজেদের প্রস্তুত করেছে, সেটাই বোঝা যাবে এ বার। আমরা শুরুটা ভাল ভাবে করতে চেয়েছিলাম, সেটা হয়েছে। এ বার এগিয়ে যাওয়ার পালা”।

অন্য ফুটবলারদের দেখে যেখানে মোটেই ছন্দে আছেন বলে মনে হয়নি, সেখানে শুরুর দিকের সমস্যা কাটিয়ে ক্রমশ নিজেকে ছন্দে ফিরিয়ে আনেন রয়। দু’টি সহজ গোলের সুযোগ হাতছাড়া করার পরে তৃতীয় বার সফল হন। প্রথম দিকে যে তাঁর অসুবিধা হচ্ছিল, তা স্বীকার করে নিয়েই তিনি এটিকে মোহনবাগান মিডিয়াকে বলেন, “তিনটি গোলের সুযোগ এসেছিল আমার কাছে। কিন্তু প্রথম দুটো পারিনি। পারলে হ্যাটট্রিক হয়ে যেত। বুঝতে পারছি। আরও পরিশ্রম করতে হবে আমাকে। আসলে মাত্র দু’সপ্তাহ অনুশীলনের পর খেলতে নেমেছিলাম। তবে যত দিন যাবে নিজেকে আরও উন্নত করে তুলতে পারব বলেই মনে হয়”।

হিরো আইএসএলে এটিকে মোহনবাগানের হয়ে প্রথম গোলের যের একটা ঐতিহাসিক তাৎপর্য আছে, তা শুনে অবাক রয়। এই গোল উৎসর্গ করেছেন স্ত্রী নাজিয়াকে।  বলেন, “আমি জানতাম না, এটা একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার। তবে আমি মোহনবাগানের মতো ঐতিহ্যবাহী এক ক্লাবের হয়ে খেলতে পেরে খুবই খুশি। তবে সব কৃতিত্ব আমার একার নয়, দলেরও। আমাদের ডিফেন্স খুবই ভাল হয়েছে। গত দু’মাস বেশির ভাগ সময়ই আমাকে কোয়ারান্টাইনে থাকতে হয়েছে। সেই সময় প্রায় প্রতি দিনই ফিজি থেকে ফোনে আমার স্ত্রী নাজিয়া আমাকে বিভিন্ন উপায়ে মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করেছে। রাত দু’টোয় উঠে আমার পরিবারের সদস্যরা টিভিতে আমার খেলা দেখেছে। এই ঐতিহাসিক গোলটা আমার স্ত্রীকেই উৎসর্গ করতে চাই”।

প্রথম পরীক্ষায় উতরে গেলেও এ বার আরও বড় পরীক্ষা এটিকে মোহনবাগানের সামনে। কলকাতা ডার্বি আগামী শুক্রবারই। দলের কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস এই ম্যাচ নিয়ে রবিবার থেকে চিন্তা ভাবনা শুরু করবেন বললেও সবুজ মেরুন শিবিরের সেরা তারকার মাথায় এখন থেকেই সেই ম্যাচের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। বলেন, “কলকাতা ডার্বি নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। গত বছর ডার্বি ম্যাচের সময় যখন আমি স্টেডিয়ামের সামনে দিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলাম (স্ত্রী নাজিয়ার সঙ্গে দেখা করতে), তখন সমর্থকদের গাড়ির জন্য জ্যামে আটকে ছিলাম অনেকক্ষণ। তখন বারবার মনে হচ্ছিল, রাস্তাতেই যখন এত মানুষ, তখন না জানি স্টেডিয়ামের ভেতর কত লোক রয়েছে। ডার্বি কখনও দেখার বা খেলার সুযোগ পাইনি। তাই এই ম্যাচে মাঠে নামার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। জানি এই ম্যাচে সমর্থকেরা আমাদের কাছ থেকে জয় ছাড়া আর অন্য কিছুই চায় না। কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে জয়টা ডার্বিতে আমাদের খুবই কাজে লাগবে”।

গ্যালারিতে না থেকেও সমর্থকেরা যে ভাবে তাঁদের সমর্থন করেছেন, তা দেখে অভিভূত রয় বলেছেন, “প্রত্যেক সমর্থককে ধন্যবাদ জানাই। সবাই আমাদের যথেষ্ট সমর্থন করেছেন। মেসেজে মেসেজে সোশ্যাল মিডিয়া ভরিয়ে তুলেছেন আপনারা। সে জন্য সবাইকে ধন্যবাদ”।

ভাল শুরু করার আনন্দের মাঝেও সবুজ মেরুন শিবিরে একটা খারাপ খবরও আছে। দলের ডার্বি-পরিকল্পনা রবিবার থেকে শুরু হলেও সেই পরিকল্পনায় তারকা মিডফিল্ডার মাইকেল সুসাইরাজ থাকবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। শুক্রবারের ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সের মিডফিল্ডার কে প্রশান্তের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষে সুসাইরাজ হাঁটুতে গুরুতর চোট পান। হাঁটু বেশ ফুলে গিয়েছে বলে এটিকে মোহনবাগান সূত্রের খবর। সোমবার তাঁর এমআরআই হওয়ার কথা। তারপরই বোঝা যাবে ঠিক কতটা গুরুতর তাঁর চোট এবং কত দিন তাঁকে বিশ্রাম নিতে হতে পারে। তবে যা অবস্থা, তাতে শুক্রবার এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে এই তামিল তারকার খেলার সম্ভাবনা কম বলেই মনে হচ্ছে।