গোলশূন্য ১২০ মিনিটের পরে পেনাল্টি শুট আউটে জিতে প্রথমবার ফাইনালে মুম্বই সিটি এফসি
উত্তেজনায় ঠাসা সেমিফাইনালে পেনাল্টি শুট আউটে জিতে হিরো আইএসএল ৭-এর ফাইনালে উঠল মুম্বই সিটি এফসি। হিরো আইএসএলের ইতিহাসে এই প্রথম ফাইনালে খেলবে মুম্বই সিটি এফসি, যারা সপ্তাহখানেক আগেই লিগশিল্ড জিতে এশিয়ার সেরা ক্লাব-লিগ এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্যায়ে খেলার ছাড়পত্র অর্জন করেছে।
উত্তেজনায় ঠাসা সেমিফাইনালে পেনাল্টি শুট আউটে জিতে হিরো আইএসএল ৭-এর ফাইনালে উঠল মুম্বই সিটি এফসি। হিরো আইএসএলের ইতিহাসে এই প্রথম ফাইনালে খেলবে মুম্বই সিটি এফসি, যারা সপ্তাহখানেক আগেই লিগশিল্ড জিতে এশিয়ার সেরা ক্লাব-লিগ এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্যায়ে খেলার ছাড়পত্র অর্জন করেছে।
সোমবার বাম্বোলিমের জিএমসি স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে তারা নির্ধারিত ৯০ মিনিট ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে গোলশূন্য ড্র রাখার পরে পেনাল্টি শুট আউটে ৬-৫ জিতল। সব মিলিয়ে ১৮টি পেনাল্টি শট লেগে যায় এই ম্যাচের জয়ীকে পেতে।
১২০ মিনিটের খেলায় কোনও দলই কোনও গোল করতে না পারার পরে নির্ধারিত পাঁচটি পেনাল্টি শটের মধ্যে দু’পক্ষই মাত্র দু’টি করে গোল করতে সফল হয়। সাডেন ডেথে চতুর্থ শটে গোল করতে ব্যর্থ হন গ্ল্যান মার্টিন্স। মুম্বইয়ের হয়ে চতুর্থ শট নিতে আসা রাওলিন বোর্জেস সফল হওয়ায় ম্যাচ জিতে ফাইনালের টিকিট অর্জন করে নেয় তারা।
- ৪৮ মিনিট: আলেকজান্দার জেসুরাজের একটি অবধারিত গোলের ঠিকানা লেখা শট অমরিন্দর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচালেও তা পোস্টে গিয়ে লাগে।
- ৫৫ মিনিট: সেভিয়ার গামার দূরপাল্লার অবধারিত গোলমুখী শট সেভ করেন অমরিন্দর।
- ৬২ মিনিট: মাথায় গোলের সামনে প্রায় শুয়ে পড়ে হেড করেন সুপার সাব ইশান পন্ডিতা। এ বারেও ত্রাতা হয়ে ওঠেন অমরিন্দর।
- ৯৪ মিনিট: এডু বেদিয়ার ফ্রি কিকে গোলের সামনে মাথা ছোঁয়াতে পারলেই অবধারিত গোল পেতেন জেমস ডোনাচি। কিন্তু তিনি মাথা ছোঁয়াতেই পারেননি।
- অতিরিক্ত সময়: এডু বেদিয়ার ডান দিকের উইং থেকে নেওয়া একটি ফ্রি কিক গোলে ঢোকার পথে আটকে দেন অমরিন্দর। পরে অমরিন্দর গোল লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসে ইশান পন্ডিতার চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন।
- পেনাল্টি শুট আউট: দুই দলেরই গোলকিপার বদল। এফসি গোয়ার ধীরজ সিংয়ের বদলে আসেন নবীন কুমার। অমরিন্দরের পরিবর্তে সিকিমিজ গোলকিপার ফুর্বা লাচেনপা।
প্রথম লেগের ম্যাচে ২-২ হওয়ায় এ দিনের ম্যাচে হার-জিতের ফয়সালা হওয়াটা ছিল অবধারিত। প্রথম লেগের ম্যাচে যেমন গোয়ার দলের আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও মুম্বই সিটি এফসি দু’টি গোলই শোধ করে দিয়েছিল, এ দিনও এফসি গোয়ার দাপটই ছিল বেশি। সারা ম্যাচে গোলমুখী শটের পরিসংখ্যান দেখলেই তা অনুমান করা যেতে পারে। সারা ম্যাচে এডু বেদিয়ারা যেখানে গোলে ছ’টি শট নেন, সেখানে লে ফন্দ্রেরা ১২০ মিনিটে একটিও গোলমুখী শট নিতে পারেননি।
এফসি গোয়ার ঘন ঘন আক্রমণ আটকাতেই হিমশিম খেয়ে যায় মুম্বইয়ের রক্ষণ বিভাগ। গোয়ার ফুটবলারদের আক্রমণ যেমন ছিল ধারালো, তেমনই ছিল তাদের পাথরের মতো শক্তপোক্ত রক্ষণও। মুম্বই সিটি এফসি-র ফুটবলারদের গোলে একটাও শট নিতে দেননি ইভান গঞ্জালেস, আদিল খান, জেমস ডোনাচিরা। ইগর অ্যাঙ্গুলো এ দিন ম্যাচের শেষ দিকে ডাগ আউট থেকে নামলেও তার আগে এডু, সেভিয়ার গামা, মার্টিন্স, আলবার্তো নগুয়েরা বারবার বিপজ্জনক ভাবে আক্রমণে ওঠেন।
এফসি গোয়ার গোলকিপারকে তেমন পরীক্ষার সামনে পড়তে না হলেও মুম্বই সিটি এফসি-র গোলকিপার অমরিন্দর সিংকে বেশ কয়েকবার বিপদের মুখে পড়তে হয়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আলেকজান্দার জেসুরাজের একটি অবধারিত গোলের ঠিকানা লেখা শট অমরিন্দর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচালেও তা পোস্টে গিয়ে লাগে। ৫৫ মিনিটের মাথায় সেভিয়ার গামার দূরপাল্লার অবধারিত গোলমুখী শট সেভ করেন অমরিন্দর। ৬২ মিনিটের মাথায় গোলের সামনে প্রায় শুয়ে পড়ে হেড করেন সুপার সাব ইশান পন্ডিতা। সে বারেও ত্রাতা হয়ে ওঠেন অমরিন্দর। দ্বিতীয়ার্ধের স্টপেজ টাইমে এডু বেদিয়ার ফ্রি কিকে গোলের সামনে মাথা ছোঁয়াতে পারলেই অবধারিত গোল পেতেন জেমস ডোনাচি। কিন্তু তিনি মাথা ছোঁয়াতেই পারেননি। ওই গোলটা পেলে ওখানেই ম্যাচ জিতে ফাইনালে চলে যেত এফসি গোয়া। কিন্তু ভাগ্য যে এ দিন তাদের সঙ্গে ছিল না, তা একাধিকবার বোঝা গিয়েছে।
অতিরিক্ত সময়েও এডু বেদিয়ার ডান দিকের উইং থেকে নেওয়া একটি ফ্রি কিক গোলে ঢোকার পথে আটকে দেন অমরিন্দর। আর একবার অমরিন্দর গোল লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসে ইশান পন্ডিতার চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন। অতিরিক্ত সময়েও কোনও গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুট আউটে। দুই কোচই পেনাল্টি শুট আউটের কথা ভেবে তাদের গোলকিপার বদল করেন। গোয়ার কোচ হুয়ান ফেরান্দো তরুণ ধীরজ সিংয়ের বদলে পাঠান অভিজ্ঞ নবীন কুমারকে। কিন্তু অমরিন্দরের মতো অভিজ্ঞ ও সফল গোলকিপারকে বদলে সের্খিও লোবেরার একেবারে আনকোরা ও অনভিজ্ঞ সিকিমিজ গোলকিপার ফুর্বা লাচেনপাকে নামানোর সিদ্ধান্তটা ছিল বেশ অপ্রত্যাশিত।
কিন্তু সিদ্ধান্তটি যে ভুল নয় তা শুরুতেই এডু বেদিয়ার শট আটকেই বুঝিয়ে দেন লাচেনপা। এডুর মতো ব্যর্থ হন তাঁর সতীর্থ ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজ ও জেমস ডোনাচি। ইগর অ্যাঙ্গুলো ও ইভান গঞ্জালেস সফল হন। অন্যদিকে মুম্বইয়ের শুধু ওগবেচে ও রেইনিয়ের ফার্নান্ডেজ গোল করতে সফল হন। নির্ধারিত পাঁচটি করে শটের পরেও যখন ফল ২-২, তখন সাডেন ডেথ পর্ব শুরু হয়। দু’পক্ষেরই প্রথম তিনটি শটে গোল হোয়ার পরে চতুর্থ শটটি মারতে গিয়ে ব্যর্থ হন গোয়ারই স্থানীয় ফুটবলার গ্ল্যান মার্টিন্স। অবশেষে মুম্বইয়ের স্থানীয় ছেলে রাওলিন বোর্জেস চতুর্থ শট গোলে রেখে দলকে ফাইনালে তোলার ছাড়পত্র এনে দেন।
এমন কষ্টার্জিত জয় পাওয়ার পরে মুম্বই সিটি এফসি-র কোচ সের্খিও লোবেরা সাংবাদিকদের বলেন, “১২০ মিনিটের ফুটবল আর (ন’টা) পেনাল্টি মারার পরে দলের ছেলেরা যে ফাইনাল খেলার জন্য সবাই সুস্থ রয়েছে, এটাই আমার কাছে জেতার চেয়েও বেশি সৌভাগ্যের বলতে পারেন। এই জয়টা আমাদেরই প্রাপ্য ছিল”। পেনাল্টি শুট আউটের আগে তাঁর গোলকিপার বদলের অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নিয়ে লোবেরা বলেন, “অমরিন্দর যে ভারতের এক নম্বর গোলকিপার, এই নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটা আমি পুরো আমাদের গোলকিপার কোচের ওপর ছেড়েছিলাম। কারণ, গোলকিপারদের ও-ই দেখে। কার কোথায় শক্তি-দুর্লতা, তা খুব ভাল জানে ও। ওর সিদ্ধান্ত ফুর্বা সঠিক প্রমাণ করে দিয়েছে। সে জন্য দু’জনকেই অভিনন্দন”।
অন্যদিকে, ভাল খেলেও শেষ পর্যন্ত হেরে যাওয়ায় কিছুটা হতাশ এফসি গোয়ার কোচ হুয়ান ফেরান্দো বলেন, “দলের পারফরম্যান্সে আমি খুবই খুশি। আমাদের কোচিং স্টাফকেও অভিনন্দন। পেনাল্টি শুট আউট নিয়ে আমি হতাশ ঠিকই। কিন্তু সব মিলিয়ে আমরা যা খেলেছি, তা নিয়ে যথেষ্ট খুশি। এখন আমাদের সামনে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ রয়েছে। কাল থেকে তার প্রস্তুতি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করতে হবে। দল খুবই ভাল অবস্থায় রয়েছে। আশা করি, এসিএলে আমরা ভাল খেলব”।
পেনাল্টি শুট আউট
এফসি গোয়া: এডু বেদিয়া (ব্যর্থ), ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজ (ব্যর্থ), ইগর অ্যাঙ্গুলো (সফল), ইভান গঞ্জালেস (সফল), জেমস ডোনাচি (ব্যর্থ), ইশান পন্ডিতা (সফল), জর্জ অর্টিজ (সফল), আদিল খান (সফল), গ্ল্যান মার্টিন্স (ব্যর্থ)।
মুম্বই সিটি এফসি: বার্থোলোমিউ ওগবেচে (সফল), হারনান সান্তানা (ব্যর্থ), হুগো বুমৌস (ব্যর্থ), রেইনিয়ের ফার্নান্ডেজ (সফল), আমেদ জাহু (ব্যর্থ), অমেয় রানাওয়াডে (সফল), মুর্তাদা ফল (সফল), মন্দার রাও দেশাই (সফল), রাওলিন বোর্জেস (সফল)।