এটিকে মোহনবাগানের মাঠে নামার সময় আবার এসে গেল। আগামী সপ্তাহেই হিরো আইএসএল ২০২০-২১-এর রানার্সরা নেমে পড়বে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলতে। মলদ্বীপে এই টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলি কাদের বিরুদ্ধে খেলবে তারা, তা একবার দেখে নেওয়া যাক।

আজ, মলদ্বীপের এক নম্বর স্থানীয় ক্লাব দল মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন (মাজিয়া এসআর)। 

গ্রুপ ডি (দক্ষিণাঞ্চল) -এর সব ম্যাচই আয়োজন করতে চলেছে এই ক্লাব। তাদের নিজেদের ঘরের মাঠ মালের ন্যাশনাল ফুটবল স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচগুলি। ১৯৯৬-এ প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাব প্রথম মলদ্বীপের প্রথম ডিভিশনে প্রোমোশন পায় দশ বছর পরে, ২০০৬-এ। তার পর থেকে নিজেদের চেষ্টায় ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তারা।

আসন্ন এএফসি কাপ গ্রুপ পর্বে মাজিয়া এটিকে মোহনবাগানের মুখোমুখি হতে চলেছে ১৭ মে। এ ছাড়া যদি ১১ মে বেঙ্গালুরু এফসি-কে প্লে অফে হারিয়ে উঠতে পারে মলদ্বীপের আর এক ক্লাব ঈগলস, তা হলে তারা প্রথম ম্যাচেই এটিকে মোহনবাগানের মুখোমুখি হবে। প্লে অফে বেঙ্গালুরু জিতলে সবুজ মেরুন শিবিরের প্রথম প্রতিপক্ষ হবেন সুনীল ছেত্রীরাই।

দ্য গ্রিন বয়েজ’ বলে ডাকা হয়ে থাকে মাজিয়া এসআর-এর ফুটবলারদের। এটিকে মোহনবাগানকে যেমন সবুজ-মেরুন ব্রিগেড বলে ডাকা হয়। এই ব্যাপারে কিছুটা মিল রয়েছে দুই ক্লাবের।

মলদ্বীপের সেরা ফুটবল লিগ, অর্থাৎ ধিভেহি প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা দল এই মাজিয়া। গত কয়েক বছরে নিজেদের এই লিগে ক্রমশ শক্তিশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে মাজিয়া এসআর। চলতি মরশুমে একটি ম্যাচ বাকি থাকলেও ইতিমধ্যেই লিগ সেরার খেতাবটা জিতে নিয়েছে তারা। এই নিয়ে পরপর দুবছর লিগজয়ী হল তারা। সব মিলিয়ে তৃতীয়বার।

ভিদেহি প্রিমিয়ার লিগের খেতাব ছাড়া মাজিয়া মলদ্বীপ এফএ কাপ জিতেছে দুবার ও মলদ্বীপ এফএ চ্যারিটি শিল্ডও তারা জিতেছে তিনবার। এএফসি কাপে একাধিকবার অংশ নিয়েছে তারা। ২০২০-তে তারা বেঙ্গালুরু এফসি-কে প্লে অফ রাউন্ডে হারিয়ে গ্রুপ স্তরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।

সেরা তারকা

কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট (উইঙ্গার):

চলতি ধিভেহি প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার এই উইঙ্গার। সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডিন্সজাত এই ফুটবলার এ পর্যন্ত দশ গোল করেছেন। ২০১৮ সালে যোগ দেওয়ার পর এই নিয়ে মাজিয়ায় দ্বিতীয় বছর তাঁর। এর আগে মালেরই টিসি স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে খেলতেন স্টুয়ার্ট। ৩১ বছর বয়সি এই অভিজ্ঞ ফুটবলার কানাডা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো এবং ফিনল্যান্ডের লিগেও খেলেছেন অতীতে। এএফসি কাপের যোগ্যতা পর্বের চারটি ম্যাচে তিনটি গোল আছে তাঁর। গত বছরের শুরুতে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচে জোড়া গোলও করেন তিনি।

মহম্মদ ইরুফান (মিডফিল্ডার):

মলদ্বীপের ভ্যালেন্সিয়া ক্লাবের যুব দল থেকে উঠে আসা মাঝমাঠের এই খেলোয়াড় প্রথমে ভ্যালেন্সিয়ারই প্রথম এগারোয় নিয়মিত জায়গা করে নেন। ২০১৪-য় তিনি মাজিয়ায় যোগ দেন ও তার পর থেকে ক্লাবের সমস্ত সাফল্যে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। ২৬ বছর বয়সি এই ফুটবলার এএফসি কাপেও খেলেছেন মাজিয়ার হয়ে। ২০১৬, ২০১৭ ও ২০২০-তে গ্রুপ পর্বে চারটি ম্যাচ খেলে একটি গোল পান তিনি।

হামজা মহম্মদ (মিডফিল্ডার):

মাজিয়ার প্রতিদ্বন্দী ক্লাব নিউ রেডিয়ান্টের হয়ে খেলতেন হামজা। তাদের জার্সি গায়েই ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭-য় মলদ্বীপ লিগ জেতেন। ২০১৯-২০-তে মাজিয়ায় যোগ দেন ও প্রথম বছরেই ক্লাবের লিগজয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তাঁর। এএফসি কাপে রেডিয়ান্ট ও মাজিয়া দুই ক্লাবেরই জার্সি গায়ে খেলেছেন তিনি। গত বছর মাজিয়ার হয়ে চারটি যোগ্যতা পর্বের ম্যাচে খেলেছিলেন ২৬ বছর বয়সি এই ফুটবলার।

প্রধান কোচ: রিস্তো ভিদাকোভিচ:

খেলোয়াড়জীবনে ভিদাকোভিচ ছিলেন সেন্টার ব্যাক। বসনিয়ার ক্লাব এফকে সারায়েভো ও সার্বিয়ার রেড স্টার বেলগ্রেডের হয়ে খেলেছেন। পরে স্পেনে চলে যান রিয়াল বেতিস, ওসাসুনা ও পলি এজিদো ক্লাবের হয়ে খেলার জন্য। কোচিং জীবন শুরু করেন স্পেনেই, এসিয়া বালোম্পি ক্লাবে। এর পরে কাদিজ ও রিয়াল বেতিস বি দলের দায়িত্ব নেন। স্পেন থেকে হন্ডুরাসে চলে যান সিডি মোতাগুয়া ক্লাবের কোচ হিসেবে। হন্ডুরাস থেকে ফিলিপিন্সে গিয়ে সেখানকার ইউনাইটেড এফসি ক্লাবকে তিনি পরপর তিনবার (২০১৬-১৭ থেকে ২০১৮-১৯) লিগ খেতাব এনে দেন।  এ বছর জানুয়ারিতে তিনি মাজিয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন এবং প্রথম মরশুমেই ক্লাবকে দেশের সেরা লিগের খেতাব এনে দিয়েছেন। এ বার তাঁর পরীক্ষা এএফসি কাপে।