মরণ-বাঁচন মঙ্গলবার— এএফসি কাপ ২০২২-এর ডি গ্রুপের শেষ রাউন্ডকে এ ভাবেই তকমা দেওয়া যায়। কারণ, আজ, মঙ্গলবার যে দু’টি ম্যাচ হবে, সেই দু’টি ম্যাচের ফলের ওপরই চার দলের নক আউট পর্বে ওঠা নির্ভর করবে। গতবার ইন্টার জোনাল সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়া এটিকে মোহনবাগান এ বারেও তা পারবে কি না, তা যেমন মলদ্বীপের মাজিয়া এসআর ক্লাবের বিরুদ্ধে তাদের ফলের ওপর নির্ভর করবে, তেমনই তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে অপর ম্যাচের দিকেও।

চার দলের গ্রুপে দু’টি করে ম্যাচ হয়ে গিয়েছে। লিগ টেবলের দিকে তাকালে বোঝা যাবে, চার দলই একটি করে ম্যাচ জিতে তিন পয়েন্ট করে পেয়েছে। বিকেলের ম্যাচে গোকুলম কেরালা এফসি যদি বসুন্ধরা কিংসকে হারাতে পারে ও রাতের ম্যাচে যদি এটিকে মোহনবাগান মাজিয়াকে হারায়, তা হলে অবশ্য এই দুই জয়ী দলের মধ্যে গত ম্যাচের ফলের ভিত্তিতে কেরালার দলই নক আউট পর্বে উঠবে। তবে বসুন্ধরা এই ম্যাচে জিতলে এবং মাজিয়াকে হারাতে পারলে এটিকে মোহনবাগান নক আউট পর্বে উঠবে।

বিকেলের ম্যাচ ড্র হলে অবশ্য রাতে এটিকে মোহনবাগান ড্র করেই গোলপার্থক্যের বিচারে নক আউটে চলে যেতে পারবে। অর্থাৎ, নক আউটে যেতে গেলে তাদের ঠিক কী করতে হবে, তা জেনেই মঙ্গলবার মাজিয়ার বিরুদ্ধে নামবে হিরো আইএসএল সেমিফাইনালিস্টরা।

লড়াই সমানে সমানে

প্রথম ম্যাচে গোকুলম কেরালা এফসি-র কাছে ২-৪ হারের পরে দ্বিতীয় ম্যাচে যে ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় এটিকে মোহনবাগান, যে ভাবে ঢাকার বসুন্ধরা কিংসকে ৪-০-য় হারিয়ে লড়াইয়ে ফিরে এসেছে তারা, তার পরে মাজিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত হতে পারতেন সমর্থকেরা। কিন্তু যে গোকুলম প্রথম ম্যাচে এটিকে মোহনবাগানকে অপ্রত্যাশিত ভাবে হারায়, সেই গোকুলমকেই দ্বিতীয় ম্যাচে মাজিয়া হারিয়ে দেয়। তাই তাদের দুর্বল মনে করার কোনও উপায়ই নেই।

তিন দিন আগেই গোকুলম কেরালা এফসি-র কাছে হারের ধাক্কা সামলে যে চার গোলে জিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এটিকে মোহনবাগান , তা অনেকেই ভাবতে পারেনি। সবুজ-মেরুন সমর্থকদের নয়নের মণি গোয়ানিজ স্ট্রাইকার লিস্টন কোলাসোই হয়ে ওঠেন এই জয়ের নায়ক। তাঁর হ্যাটট্রিকেই এটিকে মোহনবাগান কার্যত উড়িয়ে দেয় বসুন্ধরা কিংসকে।

প্রথম ম্যাচে মাজিয়ার বিরুদ্ধে ১-০-য় জেতা বসুন্ধরা শুরুর দিকে জয়ের ছন্দে থাকলেও প্রথম গোল হজম করার পর তাদের কার্যত অসহায় দেখায়। প্রথমার্ধে ২৪ ও ৩৩ মিনিটে কোলাসোর জোড়া গোলে এগিয়ে থাকা কলকাতার দলটি দ্বিতীয়ার্ধে ফের দুই গোল দিয়ে জয়ের রাস্তা তৈরি করে নেয়। ম্যাচের ৫৩ মিনিটের মাথায় হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন কোলাসো ও ৭১ মিনিটে পরিবর্ত হিসেবে নামার ছ’মিনিটের মধ্যেই দলের চতুর্থ গোলটি করেন অস্ট্রেলীয় তারকা ডেভিড উইলিয়ামস।

রক্ষণ বনাম আক্রমণ

মঙ্গলবার এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামবে কলকাতার দল। দুই উইং দিয়ে শুভাশিস বোস, লিস্টন কোলাসো এবং প্রবীর দাস, মনবীর সিংরা যে ভাবে আক্রমণে উঠছেন এবং মাঝখান দিয়ে যে ভাবে জনি কাউকো, রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামসরা বিপক্ষের রক্ষণকে ব্যস্ত রাখছেন, তাতে প্রতিপক্ষের রক্ষণ বেশ চাপে পড়ে যাচ্ছে। গত শনিবার বসুন্ধরার ক্ষেত্রেও এমনই ঘটেছে। গোলের জন্য মরিয়া হয়ে তারা যে হাইলাইন ডিফেন্স মোতায়েন করে, তা সবুজ-মেরুন শিবিরের কাউন্টার অ্যাটাকের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নেমে আসতে পারেনি। ফলে বারবার প্রতি আক্রমণ থেকেই গোল খেয়েছে।

বসুন্ধরার ভুলগুলি নিশ্চয়ই করতে চাইবে না মাজিয়া। তাই তাদের রক্ষণে হাইশাম হাসান, নেমাঞ্জে কারতাল, হাসান শিফাজ, আলি সামুদের কঠিন চ্যালেঞ্জর মুখে পড়তে হতে পারে এই ম্যাচে। এটিকে মোহনবাগানের আক্রমণ যতটা শক্তিশালী, মাজিয়ার আক্রমণ ততটা ধারালো না হলেও অবহেলা করার মতো নয়।

কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্টের ওপর একটু বেশিই নির্ভরশীল দলটা। দলে বিশেষজ্ঞ স্ট্রাইকার বলতে তিনিই। তবে তাঁকে পিছন থেকে যে ভাবে সাহায্য করেন হামজা মহম্মদ, তানা এবং নায়েজ হাসান, তাও কম নয়। গত ম্যাচে অবশ্য মাজিয়াই আধিপত্য বিস্তার করে। প্রথমার্ধেই এক ডজন শট গোলে রাখে তারা। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে ফ্রি কিক থেকে তানার দূরপাল্লার শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। ম্যাচ শেষের পাঁচ মিনিট আগে কারতালের হেড পোস্টে লেগে ফিরে আসে।    

এই আক্রমণ বিভাগকে সামলাতে অবশ্যই সবুজ-মেরুন রক্ষণকে তৎপর হতে হবে। শনিবার শুরুর দিকে বসুন্ধরার আক্রমণ সামলালেও একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করে নিয়েছিল তারা। তিরি চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার পরে সন্দেশ ঝিঙ্গন যোগ দেওয়ায় এবং কার্ল ম্যাকহিউ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের দায়িত্ব পালন করায় অনেকটাই মজবুত হয়েছে তাদের রক্ষণ। প্রথম ম্যাচে তিরি বেরিয়ে যাওয়ার পরে যতটা আগোছাল লেগেছিল তাদের, দ্বিতীয় ম্যাচে সে রকম লাগেনি। তবে শুরু থেকেই আক্রমণে ওঠার জন্য দলকে তিন ব্যাকে খেলবেন, না চার ব্যাকে খেলাবেন কোচ হুয়ান ফেরান্দো, সেটাই দেখার। এই ম্যাচেও যে হুগো বুমৌসকে পাওয়ার সম্ভাবনা কম, তা সোমবার নিজেই জানিয়ে দেন কোচ।

ফিরে দেখা

গত বছরও এএফসি কাপ গ্রুপ পর্বে মাজিয়ার বিরুদ্ধে খেলেছিল এটিকে মোহনবাগান। বিরতিতে এক গোলে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তারা জেতে ৩-১ গোলে। ২৪ মিনিটের মাথায় আইসাম ইব্রাহিম গোল করে মাজিয়াকে এগিয়ে দেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল শোধ করেন লিস্টন কোলাসো ও ব্যবধান বাড়ান রয় কৃষ্ণা ও মনবীর সিং। সেই ম্যাচেই গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে গিয়েছিল মাজিয়া। এ বার সেই রকমই কিছু ফলের আশা হয়তো করে রয়েছেন সমর্থকেরা। তবে গোকুলমকে হারিয়ে মাজিয়া বুঝিয়ে দিয়েছে এশীয় ক্লাব স্তরে খেলতে খেলতে তারা নিজেদের ক্রমশ যোগ্য করে তুলছে। তাই রয় কৃষ্ণাদের যথেষ্ট সচেতন ও সাবধান হয়েই মাঠে নামতে হবে। না হলে ব্যর্থতা অবধারিত। 

এটিকে মোহনবাগান স্কোয়াড

গোলকিপার: অমরিন্দর সিং, অভিলাষ পাল, সুব্রত পাল, অর্শ আনোয়ার শেখ;

ডিফেন্ডার: তিরি, আশুতোষ মেহতা, সুমিত রাঠি, শুভাশিস বোস, প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাস, মাইকেল সুসাইরাজ, দীপক টাঙরি, গুরসিমরত গিল, জোস আরোয়ো, রবি রাণা, রিকি সাবং;

মিডফিল্ডার: জনি কাউকো, কার্ল ম্যাকহিউ, হুগো বুমৌস, বিদ্যানন্দ সিং, শেখ সাহিল, অভিষেক সূর্যবংশী, লেনি রড্রিগেজ, ইঙ্গসন সিং;

ফরোয়ার্ড: রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস, লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিং, কিয়ান নাসিরি।

ম্যাচের খুঁটিনাটি

এএফসি কাপ গ্রুপ ডি-র ম্যাচ

মুখোমুখি: এটিকে মোহনবাগান বনাম মাজিয়া এসআরসি (মলদ্বীপ)

তারিখ ও সময়: ২৪ মে, রাত ৮.৩০

ভেনু: যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, কলকাতা

সম্প্রচার: স্টার স্পোর্টস ৩ ও ডিজনি হটস্টার