Picture courtesy: AFC Media

একটা গোল পাওয়ার জন্য একজন স্ট্রাইকারকে কিনা অপেক্ষা করতে হল ২১৫ দিন। তাও আবার জেজের মতো দেশের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল সব মহল থেকে। ফর্মে না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে দলে রাখার জন্য কনস্টানটাইনের দল নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন কোচ। জেজের ওপর আস্থা ছিল বাকি সতীর্থদেরও।

সেই আস্থা কতটা সঠিক ছিল, তার প্রমাণ মিলল এশিয়ান কাপের প্রথম ম্যাচেই। থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৭৮ মিনিটে মিজো স্ট্রাইকারকে মাঠে নামান কনস্টানটাইন। মাত্র দু'মিনিটের মধ্যেই দুরন্ত গোল। হ্যাঁ দীর্ঘ ২১৫ দিন পর জেজের পা থেকে এল গোল। কোচের ভরসার মর্যাদা রাখলেন। যেন গুপ্তধনের খোঁজ মিলল অবশেষে। যেটা দেখার জন্য গোটা দেশের অপেক্ষা ছিল। বাড়ত নিজের আত্মবিশ্বাস। বাড়ল দলের আত্মবিশ্বাস। কারণ জেজে গোল পাওয়া মানেই দলের কনফিডেন্স এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে যায়। যার প্রমাণ পাওয়া গেল পরের ম্যাচ আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে। আরও আগে তাঁকে মাঠে আনলেন কোচ। প্রথম থেকেই প্রবল আত্মবিশ্বাসী দেখাল জেজেকে। গোল না পেলেও গোলমুখ খুলে দিলেন সতীর্থদের জন্য। এই জেজেকেই তো এতদিন খুঁজছিলেন ভারতীয় ফুটবলের ফ্যানেরা।

আইএসএলের সেরা ভারতীয় ফুটবলার বাছতে গেলে একেবারে প্রথম সারিতেই আসবে জেজে লালপেখলুয়ার নাম। ২০১৪'র আইএসএলে চেন্নাইয়ান এফসি'র হয়ে করলেন চার গোল। দেশীয় ফুটবলারদের মধ্যে তিনিই হলেন সর্বোচ্চ স্কোরার। ২০১৫-তে চেন্নাইয়ানের খেতাব জয়ের পিছনে তাঁর বড় অবদান। করলেন ৬ গোল। হলেন 'ইমার্জিং প্লেয়ার অফ দ্য সিজন'। ক্লাব হোক বা দেশ, সুনীল ছেত্রীর পর তিনিই হয়ে উঠলেন যে কোনও দলের কাছে বড় ভরসা।

কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে সময়টা ভাল যাচ্ছিল না মিজো স্ট্রাইকারের। সব করেও কেন যে গোল আসছিল না, কারণটা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এবারের আইএসএলে ৬টা ম্যাচ বেঞ্চে বসে কাটাতে হয়েছে। সব মিলিয়ে বড্ড খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে জেজেকে। তবে কখনও মুষড়ে পড়েননি। কারণ তাঁর হারতে মানা। আর একটা গোল আবার ফিরিয়ে দিল সেই আত্মবিশ্বাসী জেজেকে।

জেজের মধ্যে একটা অদ্ভুত ভাল গুণ হল, শেখার প্রবল ইচ্ছে। সিনিয়রদের থেকে যখন যার থেকে যেটুকু পান নিজের মধ্যে বসিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং সেগুলোকে অ্যাপ্লাই করার চেষ্টা চালান অনবরত। উদাহরণ চোখের সামনেই। সুনীল ছেত্রী। তিনি নিজেই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কীভাবে জেজে তাঁকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেন সবসময়। এবং জুনিয়রদের কাছে উদাহরণ হয়ে উঠতে চান নিজেও। দেখতে দেখতে দেশের হয়ে ৫০ গোলের গণ্ডি পেরিয়ে গেছেন। সুনীল সরে গেলে সেই জায়গাটা কি ভরাট করতে পারবেন মিজো ফুটবলের অন্যতম সেরা মুখ? সে সম্ভাবনা কিন্তু উজ্জ্বল।