গত দু’বার ব্যর্থতার জ্বালা মেটাতে এ বার মরিয়া এটিকে এফসি I তাই দু’বারের চ্যাম্পিয়নরা এ বার সব হিসেব পাল্টে দিয়ে ফিরতে চায় সাফল্যের রাস্তায় I জিততে চায় তৃতীয় হিরো আইএসএল খেতাব I

এই লক্ষ্যেই এ বার মরশুমের শুরুতে সবার আগে ফিরিয়ে আনা হয় প্রথম আইএসএল-এ দলকে চ্যাম্পিয়ন করা স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসকে I ঝোড়ো ফুটবল ও ধারাবাহিক সাফল্য ফিরিয়ে আনতে না পারলে যে ফুটবলের মক্কা কলকাতাকে জাগানো যাবে না I তাই এ বার দলের দায়িত্ব নিয়েই হাবাস জানিয়ে দিয়েছেন দলের ভারসাম্য বজায় রেখে মাঠে আগ্রাসী ফুটবল ফিরিয়ে আনাই হবে তাঁর কাজ এবং তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, এতেই আসবে সেই সাফল্য, যা এ বার খুবই প্রয়োজন এটিকে-র I

প্রথম তিন মরশুমের মধ্যে তিনবারই সেমিফাইনালে ওঠে এটিকে I দু-দু’বার চ্যাম্পিয়নও হয় তারা I কিন্তু তার পর থেকে কলকাতার দলের পারফরম্যান্সের রেখচিত্র অভাবনীয় ভাবে নামতে শুরু করে I সেই সময় অবশ্য হাবাস ছিলেন না I ২০১৪ ও ২০১৫—এই দু’বছর এটিকে-র কোচের ভূমিকায় ছিলেন তিনি I প্রথম বছরই ফাইনালে কেরালা ব্লাস্টার্সকে এক গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় কলকাতার দলটি I পরের বছর প্লে অফে উঠেও ছিটকে যায় তারা I ২০১৬-য় ফের চ্যাম্পিয়ন হয় এটিকে I তবে সে বার কোচের ভূমিকায় ছিলেন প্রাক্তন ভিয়ারিয়েল ম্যানেজার ফ্রন্সিসকো মলিনা I

পরের দু’বারে যথাক্রমে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন স্ট্রাইকার টেডি শেরিংহ্যাম ও ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক্তন স্ট্রাইকার স্টিভ কপেলের হাতে ছিল দল I কিন্তু কোনও বারেই প্লে-অফে উঠতে পারেনি জোড়া চ্যাম্পিয়নরা I নয় ও ছয় নম্বরে থেকে লিগ শেষ করে তারা I গত মরশুমে সব মিলিয়ে মাত্র ১৮টি গোল করে এটিকে I এ বার তাই এটিকে ম্যানেজমেন্ট নড়েচড়ে বসেছে I হাবাসকে ফের কোচের পদে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে তাদের সাফল্যের রাস্তায় ফেরার প্রক্রিয়া I

কেমন হয়েছে এটিকে এফসি-র দল

গত মরশুমে গোলসংখ্যা অস্বাভাবিক কম দেখে এ বছর টিম ম্যানেজমেন্ট প্রথমেই আক্রমণ বিভাগের ভোল বদলে দেয় ফিজি থেকে অস্ট্রেলিয়ার এ-লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সোনার বুটজয়ী রয় কৃষ্ণাকে নিয়ে এসে I তাঁর সঙ্গী স্ট্রাইকার ডেভিড উইলিয়ামসকেও চুক্তিবদ্ধ করে এটিকে I গত মরশুমে এ-লিগে ওয়েলিংটন ফিনিক্সের হয়ে এই দুই ফরোয়ার্ড মিলে ২৯ গোল করেছিলেন I আর দেশের মাটিতে জবি জাস্টিনের মতো গোলমেশিন রয়েছেন যখন, তখন তাঁকেই বা নেওয়া হবে না কেন? ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়ে খেলা গত আইলিগের এই সর্বোচ্চ গোলদাতাকেও তুলে নেওয়া হয় আরও শক্তিশালী আক্রমণ বিভাগ তৈরি করার জন্য I গতবারের দল থেকে এভার্টন স্যান্টোস, কালু উচে, মানুয়েল লানজারোতে-রা বেরিয়ে যাওয়ায় এ বার এরাই ভরসা এটিকে-র I

মাঝমাঠ থেকে যাতে গোলের সাপ্লাই ও ‘মুভ’ ঘন ঘন তৈরি হয়, সে জন্য মাঝমাঠকেও আরও শক্তিশালী করে তোলা হয়েছে I এডু গার্সিয়াকে শিবিরে রেখে দেওয়ার পাশাপাশি স্প্যানিশ মিডফিল্ডার হাভিয়ে হার্নান্ডেজ জামশেদপুর এফসি-র প্রাক্তন তারকা মাইকেল সুসাইরাজ ফরোয়ার্ডদের সাহায্য করার জন্য তৈরি থাকবেন সবসময় I কড়া ট্যাকলে অভ্যস্ত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার শেহনাজ সিংকেও এ বার মুম্বই সিটি এফসি থেকে নিয়ে আসা হয়েছে I প্রণয় হালদারের সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি এ বার মাঝমাঠকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারেন I স্কটিশ ক্লাব মাদারওয়েল থেকে আসা আইরিশ ফুটবলার কার্ল ম্যাকহিউ আবার রক্ষণ ও মাঝমাঠ দুই বিভাগকেই সমান ভাবে সাহায্য করতে পারবেন I কারণ, তিনি দুই ভূমিকাতেই সমান পারদর্শী I

অভিজ্ঞ ভারতীয় ডিফেন্ডার আনাস এডাথোডিকা ও স্প্যানিশ ডিফেন্ডার অগাস্টিন গার্সিয়ার সঙ্গে যোগ দিয়ে এটিকে রক্ষণকে আরও দুর্ভেদ্য করে তুলতে দলে ফিরছেন বাংলার প্রীতম কোটাল ও জন জনসন I গোললাইনে কে দাঁড়াবেন, তা নিয়ে এ বার এটিকে দলের মধ্যে যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে I কেরালা ব্লাস্টার্সের প্রাক্তন গোলরক্ষক ধীরজ সিংকে দলে নিয়ে আসায় বাংলার অরিন্দম ভট্টাচার্যের চাপ বাড়তে পারে I সেটা অবশ্য হতে চলেছে সুস্থ প্রতিযোগিতাই I এমন কারণে উদ্বিগ্ন হতে চান সব কোচই I তাই হাবাস বলছেন, “আমাদের লক্ষ্য প্রতি ম্যাচে জেতা I দলের ভারসাম্য বজায় রেখে আগ্রাসী ফুটবল খেলা I প্রথমে রক্ষণ আঁটোসাঁটো করে নিয়ে ক্রমশ আক্রমণে উঠতে হবে আমাদের I তার পরে চাই গোল ও আরও গোল I”

শক্তি

২০১৪-য় ট্রফি দেওয়া ও ২০১৫-য় সেমিফাইনালে তোলা কোচ হাবাস কিন্তু খুব ভাল করেই জানেন হিরো আইএসএল-এর মতো লিগে কী ভাবে একটা দলকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেত হয় I এমনকী খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পরেও সেখান থেকে দলকে কী করে টেনে তুলতে হয়, তাও জানেন তিনি I

এটিকে-র আক্রমণ বিভাগ অন্যান্য দলগুলির তুলনায় বেশ শক্তিশালী I রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস ও জবি জাস্টিন তিন ফরোয়ার্ডকেই ‘গোলমেশিন’ বলা চলে I রয় কৃষ্ণা তো এ বার হিরো আইএসএল-এও সোনার বুটের অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠবেন, এমন বিশ্বাস অনেক বিশেষজ্ঞেরই I আর নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে মাঠে নামার সুযোগ পেলে বলবন্ত সিংয়েরও গোল দেওয়ার ক্ষমতা যথেষ্ট I সবচেয়ে বড় কথা গার্সিয়া ও হার্নান্ডেজের মতো মাঝমাঠ থেকে গোলের সম্ভাবনা তৈরি ও সাপ্লাইয়ের ক্ষেত্রে সুসাইরাজ, কোমল থাটাল, জয়েশ রাণা-রাও কেউ কম যান না I

দুর্বলতা

এ বারের মতো গত দু’বছরেও এটিকে দল তারকায় ঠাসা থাকলেও দলের মধ্যে সঠিক রসায়ন না থাকায় সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি তারা I এ বারের হিরো আইএসএল-এ প্রায় নতুন দল নিয়ে মাঠে নামবেন হাবাস I দলের ফুটবলারদের কাছেও যিনি প্রায় নতুন I লিগের ক্রীড়াসূচি এমনই ঠাসা যে, একবার দল ব্যর্থতার অন্ধকারে ঢুকে পড়তে শুরু করলে সেখান থেকে টেনে বার করে নিয়ে আসার সময় তিনি পাবেন কি না, সেটাই দেখার I যদিও দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে এই দল নিয়ে প্রস্তুতির পরে দলের ছেলেদের ওপর কোচের যথেষ্ট আস্থা তৈরি হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে I কিন্তু বাস্তব যে বড় কঠিন, তা সকলেরই জানা I তাই আচমকা অঘটনের ফলে ব্যর্থতা এলে সেখান থেকে ফিরে আসাটা খুব একটা সহজ হবে না বোধহয় I সেই কারণেই বোধহয় শুরু থেকেই রক্ষণ ঠিক রেখে আগ্রাসী ফুটবল খেলতে চান এটিকে কোচ I যাতে কোনও সময়ই ব্যর্থতা দলকে ছুঁতে না পারে I কিন্তু সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ছয় ম্যাচ সাসপেনশন এখনও শেষ না হওয়ায় লিগের প্রথম তিন ম্যাচে খেলতে পারবেন না জবি জাস্টিন I সুপার কাপের ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় প্রথম ম্যাচে আবার খেলতে পারবেন না এডাথোডিকা I তাই শুরুতেই কাজটা কঠিন হবে I

পুরো দল

গোলকিপার: অরিন্দম ভট্টাচার্য, ধীরজ সিং, লারা শর্মা

ডিফেন্ডার: অগাস্টিন গার্সিয়া, আনাস এডাথোডিকা, অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়, জন জনসন, প্রবীর দাস, প্রীতম কোটাল, অনিল চওয়ান    

মিডফিল্ডার: কার্ল ম্যাকহিউ, এডুয়ার্ডো গার্সিয়া, হাভিয়ে হার্নান্ডেজ, কোমল থাটাল, মাইকেল সুসাইরাজ, প্রণয় হালদার, শেহনাজ সিং

ফরোয়ার্ড: বলওয়ন্ত সিং, ডেভিড উইলিয়ামস, জবি জাস্টিন, রয় কৃষ্ণা, জয়েশ রাণা