ঘরের মাঠে বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারানোর পরে এ বার এফসি গোয়াকেও হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে ফুটছে এটিকে শিবির। শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে গোয়ার দলকে হারানোই এখন পর্যন্ত দলের সেরা পারফরম্যান্স বলে মনে করেন এটিকে এফসি-র সেরা তারকা রয় কৃষ্ণা। শনিবার রাতে ম্যাচের পরে স্টেডিয়াম থেকে বেরনোর সময় মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে ‘গোলমেশিন’ রয় বলেন, “এই লিগে এখন পর্যন্ত এটাই সেরা পারফরম্যান্স আমাদের। এফসি গোয়ার মতো টিমকে আমরা প্রায় খেলতেই দিইনি বলা যায়। তবে এখনও আমাদের উন্নতির দরকার। এখনও দেখতে হবে আমাদের কোনও দুর্বলতা আছে কি না, সেগুলো ঠিক করে নিতে হবে। আরও ভাল খেলতে হবে”।

শনিবারের ম্যাচটা এটিকে-র পক্ষে প্রায় মরা-বাঁচার লড়াই ছিল বলা যায়। কারণ, এই ম্যাচে হারলে তাদের প্রথম চারের বাইরে চলে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিল। তবু ম্যাচে আগে দলকে বেশি চাপে ফেলতে চাননি রয়। কিন্তু প্রত্যেককে নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে বলেছিলেন। এই প্রসঙ্গে ফিজির অলিম্পিয়ান বলেন, “গত ম্যাচে আমরা হেরে যাই। এই ম্যাচে কোচও বেঞ্চে ছিলেন না। তাই আজ প্রত্যেককে ভাল খেলার কথা বলেছিলাম। প্রত্যেককেই ধন্যবাদ যে তারা ভাল খেলেছে। রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নেমে যারা খেলেছে, যেমন জয়েশ, তারাও খুব ভাল খেলেছে”।

শনিবার যাঁর গোলে এটিকে এগিয়ে যায়, সেই সেন্টার ব্যাক প্রীতম কোটালও দারুণ খুশি এটিকে-র জার্সি গায়ে প্রথম গোল করতে পেরে। তিনি বলেন, “সেটপিস প্র্যাকটিস হয় যখন, তখন কোচ আমাকে পাঠান হেডে। আগের কতগুলো ম্যাচেও চেষ্টা করেছিলাম। হয়নি। আজ হয়েছে, ভাল লাগছে। দিল্লিতেও এ রকম গোল আমি করেছিলাম। তবে এই মরশুমে এটাই প্রথম গোল আর এটিকে-র হয়েও এটাই প্রথম। তাই আরও ভাল লাগছে”। 

এই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে এটিকে লিগশীর্ষে থেকেই শেষ করতে পারে বলে মনে করেন প্রীতম। বলেন, “এটিকে এখন এক নম্বর হতেই পারে। কারণ, এটিকে এক নম্বর হওয়ার মতোই দল। এই ম্যাচটা জিতে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস থেকে যে বলছি, তা নয়। আমরা প্রচুর খেটেছি বলে এই ম্যাচটা জিততে পেরেছি। পরের ম্যাচ নর্থইস্টের বিরুদ্ধে। তাতে আরও ভাল খেলতে হবে”।

রয়ও প্রীতমের সুরেই বলছেন, “গত সপ্তাহের ম্যাচটা (কেরালা ব্লাস্টার্স) হেরে যাওয়ায় সবাই খুব হতাশ হয়েছিলাম। তাই এই ম্যাচের আগে আমরা খুব ভাল প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত যে তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলাম, এটাই ভাল। তবে আবেগে ভেসে  গেলে চলবে না। পরের সপ্তাহেও আর একটা কঠিন ম্যাচ আছে। কাল বিশ্রাম নিয়ে ফের মঙ্গলবার থেকে তার প্রস্তুতি শুরু করতে হবে”।

শনিবার গোল না পেলেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন রয়। সেই কৃতিত্ব নিতে অবশ্য রাজি নন তিনি। বলেন, “শুধু আমি ভাল খেলেছি বলব না, পুরো দলটাই ভাল খেলেছে। আমি আমার কাজ করেছি মাত্র। শুরু থেকেই গোল করতে চাইছিলাম আমরা। একটু দেরিতে হলেও সেটা করতে পেরে ভাল লাগছে। গোলকিপার থেকে স্ট্রাইকার প্রত্যেকে আমরা আজ ভাল খেলেছি। যখনই যা সুযোগ পেয়েছি, তা কাজে লাগিয়েছি আমরা”। 

দলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নেতৃত্বের ব্যান্ড দেওয়া নিয়েও তাঁর বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। প্রথমে প্রীতম কোটাল, তার পরে রয় ও শনিবার অগাস্টিন ইনিগেজকে অধিনায়ক বেছে নিয়েছিল এটিকে শিবির। এই নিয়ে রয় বলেন, “ক্যাপ্টেন দলের সবাই। সবার মধ্যেই লিডার আছে। যে কোনও তরুণ ফুটবলারও আমাদের নেতৃত্ব দিতে পারে। কে ক্যাপ্টেন সেটা বড় কথা নয়, জেতাটাই বড় কথা”।  

হেড কোচ হাবাসকে ছাড়া কী করে ম্যানেজ করলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে রয় বলেন, “নিজেরা ভাল খেলে। কোচ বেঞ্চে নেই বলে তো আর অজুহাত দেওয়া যায় না। তাই নিজেদের সেরা খেলাটা খেলে কোচের অভাব পূরণ করার চেষ্টা করেছি”।

গত মরশুমের তুলনায় এই মরশুমে সেন্টার ব্যাক হিসেবে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন প্রীতম। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সেন্টার ব্যাক হিসেবে আমি আগেও খেলেছি। তবে এখনকার ফুটবলে কোনও একটা জায়গাতে খেললে চলে না। কোচ যেখানে খেলাতে চাইবে, সেখানেই খেলতে হবে ও ভাল খেলতে হবে। হাবাস-স্যর যে ওই জায়গায় আমাকে খেলার যোগ্য বলে মনে করেছেন এবং আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, এটাই আমার ভাল লেগেছে”।

ডেভিড উইলিয়ামসকে ছাড়াই শনিবার দল যে রকম পারফরম্যান্স দেখাল, তাতে মনে হয় এখনই তাঁকে মাঠে নামানোর ঝুঁকি নেবে না এটিকে, শেষ দিকের ম্যাচগুলির জন্য তাঁকে তৈরি হতে দেওয়া হবে। রয়ের কথায় তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেল। বলেন, “পরের ম্যাচে ডেভিড উইলিয়ামসকে পেলে তো ভালই লাগত। তবে ওর চোটটা এমনই যে ওকে পুরোপুরি সুস্থ না হলে মাঠে ফিরতে পারবে না। ওকে ফেরানোর জন্য তাড়াহুড়ো করলে চলবে না। কারণ, ও দলের খুব গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। পরের দিকের ম্যাচগুলো যাতে ও পুরো সুস্থ হয়ে খেলতে পারে, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে”।   

এটিকে ও মোহনবাগানের মধ্যে সম্প্রতি যে মৈত্রীচুক্তি হয়েছে, তা নিয়েও বেশ খুশি প্রাক্তন মোহনবাগান তারকা প্রীতম কোটাল। বলেন, “এটিকে-মোহনবাগান চুক্তি খুব ভাল খবর। সবার আগে মোহনবাগানকে ডার্বির জন্য শুভেচ্ছা। ছোটবেলা থেকেই বড় ক্লাবে খেলার স্বপ্ন সবার থাকে। আমি ভাগ্যবান যে মোহনবাগানের জার্সি পরে চার বছর খেলেছি। এখন এটিকে-তে খেলছি। পরের বছর হয়তো আবার মোহনবাগানের জার্সি পাওয়ার সুযোগ আসবে। ডার্বিটা, বলতে পারেন, মিস করছিলাম। ইস্টবেঙ্গলও যদি পরের আইএসএলে খেলে, তা হলে ফের হয়তো ডার্বি ম্যাচে নামার সুযোগ পাব। বেশ ভালই হল চুক্তিটা হয়ে”। এই প্রসঙ্গে রয় বলেন, “মোহনবাগানকে শুভেচ্ছা। রবিবার ওদের ডার্বি দেখতে যেতে পারব না। কারণ, আমার স্ত্রী অসুস্থ। ওকে দেখতে হবে। তবে এটা বাংলার ফুটবলের পক্ষে খুবই ভাল খবর”।