হারের মুখ থেকে ফিরে কেরালা ব্লাস্টার্সের সঙ্গে এক পয়েন্ট করে ভাগ করে নিল এসসি ইস্টবেঙ্গল। শুক্রবার তিলক ময়দান স্টেডিয়ামে কেরালা ব্লাস্টার্স ৯৫ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে থাকার পরে ডিফেন্ডার স্কট নেভিলের গোলে হার বাঁচায় লাল-হলুদ বাহিনী। এক মাস আগে যে ভাবে প্রথম লেগের ম্যাচে শেষ মুহূর্তে গোল করে সমতা এনেছিল কেরালা ব্লাস্টার্স, সে ভাবেই দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে সমতা আনল এসসি ইস্টবেঙ্গল। ৬৪ মিনিটের মাথায় লম্বা গোলকিক থেকে বল পেয়ে গোল করে কেরলের দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন জর্ডান মারে।

এসসি ইস্টবেঙ্গলের দুই সেরা তারকা ব্রাইট ইনোবাখারে ও জাক মাঘোমা এ দিন নিজেদের সেরা ফর্মে ছিলেন না। গোটা দলটাই ছিল বিবর্ণ। যে পারফরম্যান্সে গত ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারিয়েছিল রবি ফাউলারের দল, তার ধারে কাছেও এ দিন ছিল না তারা। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই কেরালা ব্লাস্টার্স ম্যাচটা জেতার দিকে অনেকটা এগিয়ে যায়। কিন্তু শেষ মুহূর্তের অসাবধানতায় দুই পয়েন্ট খোয়াতে হল তাদের। ফলে দুই দলই লিগ টেবলে একই জায়গায় রয়ে গেল। 

  • ৫ মিনিট: বক্সের মধ্যে সোজা গোলে শট নেন জর্ডান মারে, যা আটকে দেন গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার।
  • ১১ মিনিট: বক্সের মধ্যে সোজা বিপক্ষের গোলে শট হরমনপ্রীত সিংয়ের। যা আটকে দেন কেরালার গোলকিপার আলবিনো গোমস।
  • ৪৭ মিনিট: ব্রাইটের মাইনাস ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের গোলে বল ঠেলে দেন জেসেল, তিনিই ক্লিয়ার করেন।
  • ৪৯ মিনিট: ফের বক্সের মধ্যে মারের শট সোজা গোলে, দেবজিতের সেভ।
  • ৬৪ মিনিট: গোমসের লম্বা গোলকিক থেকে বিপক্ষের এলাকায় বল পেয়ে সম্পুর্ণ অরক্ষিত জর্ডান মারে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে সোজা গোলে বল ঠেলে দেন।
  • ৮৭ মিনিট: অজয় ছেত্রীর ফ্রিকিক থেকে প্রায় ফাঁকা গোলের সামনে সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন অ্যারন হলোওয়ে। কিন্তু তিনি বলে পা-ই লাগাতে পারেননি।
  • ৯৫ মিনিট: ব্রাইটের কর্নারে হেড করে গোল করে সমতা আনেন স্কট নেভিল।

রাজু গায়কোয়াড় এ দিন চোটের জন্য স্কোয়াডে ছিলেন না। তাঁর জায়গায় রাণা ঘরামিকে প্রথম দলে রাখেন রবি ফাউলার। অ্যান্থনি পিলকিংটন প্রথম দলে না থাকলেও ছিলেন পরিবর্তদের তালিকায়। ৩-৪-১-২ ছকে শুরু করে এসসি ইস্টবেঙ্গল। সামনে জাক মাঘোমা ও হরমনপ্রীত সিং এবং তাঁদের পিছনে ব্রাইট ইনোবাখারে। অন্যদিকে কিবু ভিকুনা, যিনি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে কখনও হারেননি, তিনি দল সাজান ৪-৪-১-১-এ। সামনে জর্ডান মারে, তাঁর পিছনে গ্যারি হুপার।

কেরালা ব্লাস্টার্সের এই দুই বিদেশি স্ট্রাইকার প্রথম দশ মিনিটে একাধিক বার আক্রমণে উঠলেও এসসি ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণে আটকা পড়ে যান প্রতিবারই। ৫ মিনিটের মাথায় গোলের সামনে ওয়ান টু ওয়ান অবস্থায় সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন মারে। কিন্তু দেবজিৎ বাঁচিয়ে দেন। ১১ মিনিটের মাথায় লাল-হলুদ বাহিনীর পক্ষে প্রথম আক্রমণ শানান হরমনপ্রীত। বিপক্ষের বক্সের মধ্যে ঢুকে মিলন সিংয়ের পাস থেকে সোজা গোলে শট নেন তিনি, যা আটকে দেন গোলকিপার আলবিনো গোমস।

প্রথমার্ধে এ ছাড়া আর সে ভাবে কোনও ওপেন নেট সুযোগ পায়নি দুই দল। এসসি ইস্টবেঙ্গলকে এ দিন পাসিং নির্ভর ফুটবল খেলতে দেখা যায়। ছোট ছোট পাসে ধীরগতিতে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করছিল তারা। কিন্তু বারবার সময় পেয়ে গোলের সামনে যথেষ্ট লোক বাড়িয়ে নিচ্ছিল কেরালা ব্লাস্টার্স। মাঘোমা ও ব্রাইটের জুটিকে এই ৪৫ মিনিটে জুটি বেঁধে সে ভাবে গোলের সুযোগ তৈরি করতে দেখা যায়নি। বিপক্ষকে চাপে রাখার প্রবণতাও কম দেখা যায় তাদের খেলায়। অন্যদিকে, বিপক্ষের একাধিক ভুল পাসের সুযোগ নিয়ে কেরালা ব্লাস্টার্স কাউন্টার অ্যাটাকে উঠলেও তারা তা ফিনিশ করতে পারছিল না। বিপক্ষের রক্ষণে গিয়ে বারবার নিজেদের হারিয়ে ফেলছিলেন হুপার, মারে-রা।

দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকেই যে আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল, তা ৪৭ মিনিটে ব্রাইটের বাঁ দিক দিয়ে তৈরি করা গোলের সুযোগ দেখেই বোঝা যায়। বক্সের বাঁ দিক থেকে মাইনাস করেন নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড, যা গিয়ে পড়ে বিপক্ষের ডিফেন্ডার জেসেল কার্নেইরোর পায়ে। জেসেলের পায়ে লেগে বল গোলের দিকে গেলেও তিনিই সেই বল ক্লিয়ার করে দেন। কিন্তু এই মেজাজ ধরে রাখতে পারেনি লাল-হবুদ শিবির। মাঘোমা-ম্যাজিক এ দিন উধাও হয়ে যাওয়ায় ব্রাইটের ঔজ্জ্বল্যও কমে যায়।

ব্রাইটের চেষ্টার দু’মিনিট পরেই জর্ডান মারে বক্সের মাথা থেকে গোলে শট নেন। কিন্তু ফের রুখে দেন দেবজিৎ। এমনই একটি গোলের সুযোগ প্রথমার্ধের পাঁচ মিনিটের মাথাতেও পেয়ে গিয়েছিলেন মারে। কিন্তু সে বারও ত্রাতা হয়ে ওঠেন দেবজিৎ। তবে ৬৪ মিনিটের মাথায় সেই মারেই গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। গোমসের লম্বা গোলকিক (৬৯ মিটার) থেকে বিপক্ষের এলাকায় যখন বল পান মারে, তখন তিনি সম্পুর্ণ অরক্ষিত এবং এসসি ইস্টবেঙ্গলের দুই ডিফেন্ডার নেভিল ও রাণা ছিলেন তাঁর সামনে। বল পেয়ে মারে দৌড়তে শুরু করলে তাঁর সঙ্গে গতিতে পেরে ওঠেননি লাল-হলুদ ডিফেন্ডাররা। দেবজিৎকেও ধোঁকা দিয়ে সোজা লক্ষ্যে বল ঠেলে দেন তাঁর ছয় নম্বর গোলের জন্য।

গোল শোধ করার উদ্দেশ্যে ৭১ মিনিটে স্টাইনমানকে তুলে পিলকিংটনকে নামান ফাউলার। চোট সারিয়ে এ দিনই মাঠে ফেরেন পিলকিংটন। কিন্তু ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিটে রক্ষণে প্রায় দেওয়াল তুলে দেয় কেরালা ব্লাস্টার্স। ফলে এসসি ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রাও সেই মরিয়া ভাব দেখাতে পারেননি। ৮৭ মিনিটের মাথায় সদ্য দলে যোগ দেওয়া অজয় ছেত্রীর ফ্রিকিক থেকে প্রায় ফাঁকা গোলের সামনে ভাল সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন ড্যানিয়েল ফক্সের জায়গায় নামা অ্যারন হলোওয়ে। কিন্তু তিনি বলে পা-ই লাগাতে পারেননি।

শেষ পর্যন্ত সমতা আসে কর্নার কিক থেকে। দ্বিতীয়ার্ধে স্টপেজ টাইমের শেষ মিনিটে ব্রাইটের কর্নারে হেড করে গোল করেন স্কট নেভিল। কেরালা ব্লাস্টার্সের মুঠো থেকে দুই পয়েন্ট ছিনিয়ে নেয় এই গোলেই। প্রথম লেগের ম্যাচে এ ভাবে শেষ মিনিটে কেরালার জিকসন সিং গোল করে সমতা এনেছিলেন। দ্বিতীয় লেগে সেই শেষ মিনিটেই সমতা আনলেন এসসি ইস্টবেঙ্গলের নেভিল।     

এসসি ইস্টবেঙ্গল দল: দেবজিৎ মজুমদার (গোল), স্কট নেভিল, রাণা ঘরামি, ড্যানিয়েল ফক্স (অ্যারন হলোওয়ে), অঙ্কিত মুখার্জি (সুরচন্দ্র সিং), নারায়ণ দাস, ম্যাটি স্টাইনমান (অ্যান্থনি পিলকিংটন), মিলন সিং (অজয় ছেত্রী), জাক মাঘোমা, ব্রাইট ইনোবাখারে, হরমনপ্রীত সিং (মহম্মদ রফিক)

পরিসংখ্যানে ম্যাচ

বল পজেশন: এসসি ইস্টবেঙ্গল ৫৯% - কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি ৪১%

সফল পাস: ৩৮৫/৪৯৪ - ১৭৫/২৭৩

গোলে শট: ৩-৩

ফাউল: ১০-১০

ইন্টারসেপশন: ১৪-১৩

কর্নার: ৪-৫

হলুদ কার্ড: ১-১

ম্যাচের সেরা: সাহাল আব্দুল সামাদ