ভাল প্রস্তুতির পর ভারতীয় দল এখন ভাল জায়গায়, দাবি কোচ স্টিমাচ, অধিনায়ক সুনীলের
“মাস দুয়েক আগে আমরা কুয়েতের বিরুদ্ধে দু’টো ম্যাচ খেলেছি। ফলে ওদের সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানি। ওদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম। গত তিন বছরে আমরা অন্তত তিনবার কাতারের মুখোমুখি হয়েছি। এটাও আমাদের সাহায্য করবে। আর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তো অনেক ম্যাচই খেলেছি”।
বিশ্বকাপ ২০২৬ ও এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর বাছাই পর্বের শুরুতেই ভারতের সামনে কঠিন পরীক্ষা। কুয়েতের মাঠে কুয়েতের বিরুদ্ধে খেলা যে মোটেই সোজা কাজ নয়, তা মেনে নিচ্ছেন ভারতীয় ফুটবল দলের কোচ ইগর স্টিমাচ ও অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী।
কুয়েত সিটির জাবের আল আহমাদ স্টেডিয়ামে কুয়েতের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার খেলতে নামবে ভারত। যার প্রস্তুতি তারা সেরে এসেছে দুবাইয়ে। এই প্রস্তুতি নিয়ে কোচ স্টিমাচ সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি ভালই হয়েছে। পাঁচ দিন দুবাইয়ে অনুশীলন করেছি আমরা। যে বিষয়গুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া দরকার, সেগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। বাছাই পর্বের শুরুটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শূন্য, এক বা তিন, যাই অর্জন করি, তা অনেকটাই তফাৎ গড়ে দিতে পারে”।
দুই দলকেই সমান শক্তিশালী মনে করেন স্টিমাচ। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের দুই দলই সমান শক্তিশালী। আমরা জানি, কুয়েত এখন যা খেলছে, তাতে ওদের ক্রমতালিকায় আরও ওপরে থাকা উচিত। ওরা ঘরের মাঠের সুবিধা পাবে। তবে আমাদের সেগুলো ওদের কাজে লাগাতে দেওয়া চলবে না”।
সেপ্টেম্বরে বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে এই কুয়েতকে হারিয়েই সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। সেই ম্যাচে আল খলিদি ও লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতের গোলে নির্ধারিত সময় ও অতিরিক্ত সময় ১-১ থাকার পর ম্যাচ গড়ায় টাই ব্রেকারে। পাঁচটি করে শটের পর ৪-৪ থেকে যাওয়ায় ম্যাচ গড়ায় সাডেন ডেথে। প্রথম শটে কোনও ভুল করেননি নাওরেম মহেশ সিং। কিন্তু কুয়েতের অধিনায়ক এল এব্রাহিম হাজিয়ার শট বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেভ করে শেষ রাতে ওস্তাদের মার দেখান বহু যুদ্ধের নায়ক গোলকিপার গুরপ্রীত সিং।
তার কয়েকদিন আগেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে প্রায় জেতা ম্যাচ হাতছাড়া করে কুয়েতের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করে। প্রথমার্ধের বাড়তি সময়ে দুর্দান্ত গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। ম্যাচের শেষ পর্যন্ত সেই ব্যবধান বজায় রেখেছিল ভারত। কিন্তু ৯২ মিনিটের মাথায় প্রতিপক্ষের আক্রমণ ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের গোলেই বল ঠেলে দেন আনোয়ার আলি। চলতি বছরেই এই দু’বার ফুটবল মাঠে দেখা হয়েছে দুই দেশের।
তবে সেই জোড়া ম্যাচের সঙ্গে এই ম্যাচের তেমন মিল খুঁজে পাচ্ছেন না স্টিমাচ। বলেন, “দু’মাস আগে যে ম্যাচ খেলেছি, তার সঙ্গে এই ম্যাচের কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ, তার পর থেকে অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। খেলোয়াড়রা দীর্ঘ বিশ্রামের পর ক্লাবের হয়ে খেলা শুরু করে দিয়েছে। ভারত ও কুয়েত দুই দলও এখন আর আগের মতো নেই। দুই দলেরই কিছু খেলোয়াড়ের চোট রয়েছে। ফুটবলে অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। প্রতি মাসে মাসে বদলে যায়”।
চলতি বছরে ভারত ঘরের মাঠে ১১টি ম্যাচ খেলে। তার মধ্যে ন’টিতে জেতে এবং দু’টিতে ড্র করে। অর্থাৎ এই বছরে ঘরের মাঠে হারের মুখে দেখেনি ভারত। টানা আটটি ম্যাচে গোল খায়নি তারা। তিনটি চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাবও জেতে। এমন ধারাবাহিকতা অনেকদিন দেখেনি ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু দেশের বাইরে বেরিয়ে তাদের দুর্বলতা ফের ফুটে ওঠে। প্রথমে সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে কিংস কাপে ও পরে কুয়ালালামপুরে অক্টোবরে মারডেকা কাপে কোনও ম্যাচেই জিততে পারেনি তারা।
তবু দলনেতা সুনীল ছেত্রী মনে করেন, তাঁদের দল শক্তিশালী। তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে সুনীল সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে বলেন, “আমাদের দল শক্তিশালী এবং ভাল জায়গায় রয়েছে। আমাদের গ্রুপটাও বেশ কঠিন। ভাল ভাল দল রয়েছে। তবে আমরা প্রস্তুত। যদিও কয়েকজনের চোট রয়েছে। আমাদের এই দলটা অনেকদিন ধরে একসাথে খেলছে। বেশ কয়েকজন তরুণ ফুটবলার রয়েছে এই দলে। আশা করি আমরা ভাল কিছু করতে পারব”।
ভারতের গ্রুপে কাতার ও কুয়েত ছাড়াও রয়েছে আফগানিস্তান। ভারতের গ্রুপে তাদের চেয়ে ক্রমতালিকায় ওপরে থাকা একমাত্র দল কাতার। বাকি দু’টি দল ক্রমতালিকায় তাদের চেয়ে নীচে রয়েছে। প্রতি গ্রুপ থেকে দুটি করে দল তৃতীয় রাউন্ডে উঠবে। যদি তারা তাদের সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে পারে, তা হলে ভারতের তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ রকম হলে ভারতীয় ফুটবলে বেনজির ঘটনা ঘটবে। গত বিশ্বকাপ ও আসন্ন এশিয়ান কাপের আয়োজক কাতার এখন বিশ্ব ক্রমতালিকায় ৬১ নম্বরে রয়েছে। ভারত রয়েছে ১০২ নম্বরে। কুয়েত ১৩৬-এ এবং আফগানিস্তান ১৬০ নম্বরে রয়েছে।
তাঁদের গ্রুপ নিয়ে সুনীল বলেন, “মাস দুয়েক আগে আমরা কুয়েতের বিরুদ্ধে দু’টো ম্যাচ খেলেছি। ফলে ওদের সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানি। ওদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম। গত তিন বছরে আমরা অন্তত তিনবার কাতারের মুখোমুখি হয়েছি। এটাও আমাদের সাহায্য করবে। আর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তো অনেক ম্যাচই খেলেছি আমরা। সে জন্য ওদের বিরুদ্ধে আমরা যে রকমই খেলি, ওরা আমাদের নতুন কিছু দেখিয়ে অবাক করে দিতে পারবে বলে মনে হয় না”।
বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ফিফা জানিয়েছে, ২০২৬-এ বিশ্বকাপের মূলপর্ব হবে ৪৮টি দেশকে নিয়ে। এশিয়া থেকে আটটি দল খেলবে সেই বিশ্বকাপে। এ ছাড়াও আরও একটি এশীয় দেশ প্লে-অফের গণ্ডী পেরিয়ে মূলপর্বে উঠতে পারে। ফলে ধারাবাহিক ভাবে ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে ভারতের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা সম্ভব হবে, সেটাই প্রশ্ন।
এই প্রশ্নের উত্তরে ভারতীয় অধিনায়ক বলেন, “আমাদের মাঠে নেমে ভাল খেলতে হবে। আমাদের দল বরাবরই পরিশ্রম, টিম স্পিরিট ও একতার ওপর নির্ভর করে ভাল খেলেছে। অন্য দলগুলোর মধ্যে অনেকেই ফুটবলারদের ব্যক্তিগত ফর্মের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা সেরকম নই। আমরা দল হিসেবে খেলি”।
কিন্তু দেশের মাঠে ভাল ফল করলেও বিদেশে তাঁদের সাফল্যের খরা কাটেনি। তা মেনে নিয়ে সুনীল বলেন, “ঘরের মাঠে ভাল খেললেও বিদেশে আমরা ভাল খেলতে পারিনি ঠিকই। আমাদের এশিয়ার সেরা ১৮-র মধ্যে জায়গা করে নিতে হলে নিজেদের শোধরাতে হবে। এখানে প্রতি ম্যাচের প্রতি পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রতি গ্রুপের সেরা দুই দল পরের রাউন্ডে যাবে। তাই প্রথম ম্যাচেই আমাদের যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে। প্রথম ম্যাচই কঠিন। কিন্তু দলের কয়েকজনের চোট সত্ত্বেও আমরা তৈরি। আমাদের ভুলের সংখ্যা কমাতে হবে। এই ধরনের বড় ম্যাচে ছোটখাটো ভুলই খুব বড় হয়ে ওঠে”।
তাঁর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের আক্রমণ বিভাগ কতটা সম্ভাবনাময়, তা জানতে চাইলে ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি বলেন, “ছাঙতে, মহেশ ও সহালের পরিসংখ্যান যদি দেখেন, তা হলে দেখবেন ওরা কিন্তু যথেষ্ট ভাল খেলেছে। স্টিমাচের প্রশিক্ষণে আমরা কখনও একজনের বেশি স্ট্রাইকারে খেলিনি। এই তিনজনের সুযোগ তৈরি, অ্যাসিস্ট ও গুরুত্বপূর্ণ গোল করার পরিসংখ্যান কিন্তু খুবই ভাল। এরা আবার রক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই তিনজনের সামনে তাই আমার একা স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতে অসুবিধা হয় না। তাই আমি বলব, আমাদের আক্রমণ বিভাগ যথেষ্ট ভাল ও শক্তিশালী। এই শক্তি কাজে লাগাতে হবে আমাদের”।
ভারতীয় স্কোয়াড:
গোলকিপার: অমরিন্দর সিং, গুরপ্রীত সিং সান্ধু ও বিশাল কয়েথ;
ডিফেন্ডার: আকাশ মিশ্র, লালচুঙনুঙ্গা, মেহতাব সিং, নিখিল পূজারি, রাহুল ভেকে, রোশন সিং নাওরেম, সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বোস;
মিডফিল্ডার: অনিরুদ্ধ থাপা, ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ, আপুইয়া, লিস্টন কোলাসো, মহেশ সিং নাওরেম, রোহিত কুমার, সহাল আব্দুল সামাদ, সুরেশ ওয়াংজাম, উদান্ত সিং;
ফরোয়ার্ড: ইশান পন্ডিতা, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, মনবীর সিং, রাহুল কেপি, সুনীল ছেত্রী।













