ছয় ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে হিরো আইএসএল টেবলে আপাতত দুইয়ে কলকাতার এটিকে। যেমনটা চেয়েছিলেন, প্রায় সে রকমই হয়েছে বলে মনে করেন দলের স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস, যিনি প্রথম আইএসএলে এটিকে-কে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। তাঁর আশা, এ বারও সেই পথেই নিয়ে যেতে পারবেন দলকে।

শনিবার গুয়াহাটিতে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের মুখোমুখি হতে চলেছে এটিকে। এখন কলকাতায় চলছে সেই ম্যাচেরই প্রস্তুতি। গত দুই ম্যাচেই ড্র করেছে হাবাসের দল। টানা পাঁচটি ম্যাচে অপরাজিত। কিন্তু গত ম্যাচেই মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে হারের মুখ থেকে দলকে বাঁচান এটিকে-র তারকা স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণা।   

কোচ হাবাস অবশ্য বলছেন, “প্রথম পর্বের ফল আমাদের ভালই হয়েছে। এই জায়গায় থাকতে পারাটা খুবই ভাল। এখনও অনেক ফুটবল বাকি। আরও অনেক কিছু ঘটবে। আমার কাজ, টিম যাতে এই জায়গায় থাকতে পারে, তা নিশ্চিত করা। তবে সে জন্য প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক ম্যাচ আমার কাছে বেশি জরুরি। লিগ যত গড়াবে, আরও ভাল খেলতে হবে আমাদের”।

লিগ টেবলে শেষ পর্যন্ত এক নম্বরে থাকাটাই যে তাঁর লক্ষ্য, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়ে এটিকে কোচ বলেন, “এখন নিজেদের বিশ্লেষণ করে ধাপে ধাপে এগোতে হবে। সেরার জায়গাতেই থাকতে চাই। কিন্তু সেখানে পৌঁছতে গেলে প্রতি ম্যাচ ধরে এগাতে হবে”।

এই নিয়ে তৃতীয় মরশুমের জন্য এটিকে-র দায়িত্ব নেওয়া কোচ বলছেন, “সব ম্যাচই কঠিন। ওডিশার সঙ্গে গোলশূন্য হয়েছিল। খুবই কম ফারাক ছিল দুই দলের মধ্যে। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে শেষ ১৫ মিনিটে খুব লড়াই হয়েছে। প্রায় সব ম্যাচেই শেষ ১৫ মিনিট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, সব দলগুলোই কমবেশি ভাল”।

নিজেদের ম্যাচের অভিজ্ঞতা  থেকে তিনি বলেন, “গত ম্যাচে যেমন আমাদের শেষ ১৫ মিনিটে খুব লড়তে হয়। ওরা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিল। যেটা আমরা পূর্ণ হতে দিইনি। ছেলেরা দারুণ চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখিয়েছে। গোল দেওয়ার দিক থেকে আমরা গোয়ার সঙ্গে দুই নম্বরে আছি। তবে আমাদের আরও ভাল খেলতে হবে”।  

শনিবারের ম্যাচে বিপক্ষে রয়েছেন চারটি বিশ্বকাপ খেলে আসা ঘানার ফুটবলার আসামোয়া জিয়ান। যিনি এ পর্যন্ত ছয় ম্যাচে তিনটি গোল করেছেন। তাঁকে সামলাতে বিশেষ পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়ে হাবাস বলেন, “ও একাধিক বিশ্বকাপ খেলে আসা দুর্দান্ত ফুটবলার। ও নর্থইস্টের খুব গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। জিয়ানকে সামলাতেই হবে। যদিও পুরো দলকে আটকানোই আমাদের কাজ। কিন্তু শনিবারের ম্যাচে ওর প্রতি বিশেষ নজর দিতেই হবে”।

গত দুই মাসেই হিরো আইএসএলে সেরা খেলোয়াড় (হিরো অফ দ্য মান্থ) নির্বাচিত হয়েছেন এটিকে-রই দুই তারকা ডেভিড উইলিয়ামস ও রয় কৃষ্ণা। এই খবরে খুশি হাবাস বলেন, “আমাদের পক্ষে এটা ভাল। প্রতি মাসেই আমাদের খেলোয়াড় সেরা হলে তো ভালই হয়। দল ভাল খেললে এটা হতেই পারে। এতে সবার উৎসাহ বাড়বে এবং এর সুপ্রভাব দলের ওপরেই পড়বে”। এটিকে শিবিরে চোটের সংখ্যা বেড়েছে। প্রণয় হালদারের চোট ছিল। গত ম্যাচে কার্ল ম্যাকহিউ-এরও চোট হয়। ম্যাকহিউয়ের পায়ের কী অবস্থা, সে রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানান হাবাস। দুজনের কাউকেই এ দিন বিকেলে দলের অনুশীলনেও দেখা যায়নি।

অন্য দিকে, এটিকে-র গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্য পরপর তিনটি অ্যাওয়ে ম্যাচ প্রসঙ্গে বলছেন, “তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচ পরপর আছে আমাদের। আমি মনে করি না হোম আর অ্যাওয়ে ম্যাচে খুব একটা তফাৎ হয় আইএসএল-এ। এই তিন ম্যাচে ন’পয়েন্টই টার্গেট। যখন ভাল খেলছি আমরা, তখন আশা করি পারব”।

গত মরশুমে এটকে-র দুঃসময় দেখা গোলকিপার বলেন, “এ বার আমরা অনেক সঙ্ঘবদ্ধ ও সব দিক থেকেই উন্নত। তার প্রতিফলন লিগ টেবলেই দেখা যাচ্ছে। সাত রাউন্ড হয়নি এখনও, আমরা টেবলের শীর্ষে। এ বছর বেশ কয়েকজন ভাল খেলোয়াড় যোগ দিয়েছে আমাদের দলে। গত বার যারা ছিল, তারাও এ বার ভাল খেলছে। এ বার ফারাক হয়েছে এই জায়গাতেই”।

গত দুই ম্যাচেই ড্র ও শেষ ম্যাচে শেষ মিনিটে গোল করে মান বাঁচানোর কারণ যে বাড়তি চাপ নয়, তা এদিন সাফ জানিয়ে দেন অরিন্দম। বলেন, “আমার মনে হয় না, কোনও চাপ আছে দলে। এই কারণেই কোচ রোজই বলেন, উনি খুশি নন। যে জায়গাগুলো নিয়ে উনি অখুশি সেগুলো নিয়ে রোজ কাজ হয় ট্রেনিংয়ে। সবচেয়ে কম গোল খাওয়ার দিক থেকে আমরা দ্বিতীয়, গোয়ার সঙ্গে। আমরা গোল করার চেষ্টা করি সব সময়। কিছু কিছু ভুল হয়, যেগুলো শোধরানোর চেষ্টা করি। সে জন্যই কোচ বলেন তিনি খুশি নন। সব জায়গা তো একসঙ্গে কখনওই নিখুঁত হয় না। সেই শোধরানোর কাজটা করে যাই আমরা”।

২৯ বছর বয়সি গোলকিপারের পর্যবেক্ষণ,“আইএসএলে কোনও দলের মধ্যেই তেমন বেশি ফারাক নেই। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স কার কী রকম, কেউ টানা ম্যাচ জিতে আসছে কি না, সেটাই দেখার। তা ছাড়া কৃষ্ণা, উইলিয়ামসের জন্য ও ভাল ডিফেন্সের এ বার অনেক চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারছি। যখন এটা জানা থাকে যে, দলের ফরোয়ার্ডরা খুবই ভাল, ওরা গোল দেবেই, ডিফেন্সও ভাল, তখন তো কাজটা অনেক সোজা হয়েই যায়”।