আজ যা হয়েছি, সবই ফুটবলের জন্য: আশিক কুরুনিয়ান
মালাপ্পুরমের গলি থেকে কলকাতার রাজপথ— এই সফরটা যে খুব একটা সহজ ছিল না আশিক কুরুনিয়ানের, তা বোধহয় আলাদা করে বলে দিতে হবে না। ওই জায়গা থেকে ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা ক্লাব এটিকে মোহনবাগান ও ভারতের জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে ওঠা যে মোটেই কম কৃতিত্বের নয়, তাও সবারই জানা। যখনই যেখানে মাঠে নেমেছেন আশিক, নিজের ফুটবল দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। কত ভাল মানের ফুটবলার তিনি, সুযোগ পেলেই তা বুঝিয়েছেন সকলকে। সে জন্যই তিনি এখন ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা।


মালাপ্পুরমের গলি থেকে কলকাতার রাজপথ— এই সফরটা যে খুব একটা সহজ ছিল না আশিক কুরুনিয়ানের, তা বোধহয় আলাদা করে বলে দিতে হবে না। ওই জায়গা থেকে ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা ক্লাব এটিকে মোহনবাগান ও ভারতের জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে ওঠা যে মোটেই কম কৃতিত্বের নয়, তাও সবারই জানা। যখনই যেখানে মাঠে নেমেছেন আশিক, নিজের ফুটবল দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। কত ভাল মানের ফুটবলার তিনি, সুযোগ পেলেই তা বুঝিয়েছেন সকলকে। সে জন্যই তিনি এখন ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা।
২০ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল জীবন শুরু করে এফসি পুনে সিটি, বেঙ্গালুরু এফসি হয়ে এখন তিনি এটিকে মোহনবাগানে। আর পিছনে ফিরে তাকানোর সুযোগই পান না তিনি। স্পেনের ভিয়ারিয়েল সি-তে প্রশিক্ষণের যে সুযোগ পেয়েছিলেন কেরালার এই তারকা, তাকেও ভরপুর কাজে লাগিয়েছেন। হয়ে উঠেছেন এক বিপজ্জনক উইঙ্গার, যিনি আবার ফুল ব্যাক হিসেবেও খেলতে পারেন। বেঙ্গালুরু এফসি-তে চার বছর থেকে নিজের আক্রমণ ক্ষমতায় আরও ধার বাড়িয়ে নিয়েছেন। এখন যে আশিককে দেখা যাচ্ছে, তিনি বহু বছর ধরে ঘষে মেজে গড়ে তোলা এক ফুটবল শিল্পী, যার পারফরম্যান্সে মুগ্ধ ফুটবলপ্রেমী জনতা।
গত পাঁচ বছর ধরে ভারতীয় ফুটবল দলের নিয়মিত সদস্য আশিকের কাছে ফুটবলই এখন জীবন। নিজেই বলেছেন সে কথা। হিরো আইএসএল-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “ফুটবলই আমার জীবন। আজ আমি যা, তা হয়েছি ফুটবলের জন্যই”।
পারফরম্যান্সে বৈচিত্র আনতে পারা ও দ্রুত মানিয়ে নিতে পারার দক্ষতাই আশিককে আজ এই জায়গায় এনেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন এটিকে মোহনবাগানের কোচ হুয়ান ফেরান্দো। আশিকের ওপর অগাধ আস্থা তাঁর। তাঁর মতে, “ওকে শুধু বুঝিয়ে দিতে হয় ওর জায়গাটা ঠিক কী হওয়া উচিত। মাঠে ম্যাচ চলাকালীন কখন ওকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কখনও ওকে আক্রমণে উঠতে হবে। বাকিটা ওর ওপর ছেড়ে দেওয়া যায়”।
বেঙ্গালুরু এফসি-তে যে ভূমিকায় দেখা যায় আশিক কুরুনিয়ানকে, এটিকে মোহনবাগানে যোগ দেওয়ার পরে তাঁকে আরও আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। চলতি মরশুমে বারবার তাঁকে উইং দিয়ে উঠে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের রীতিমতো কড় পরীক্ষায় ফেলতে দেখা গিয়েছে। যে ১৭টি ম্যাচ তিনি খেলেছেন চলতি লিগে, তাতে ১২টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন এবং একটি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন।
প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার ও হিরো আইএসএলে টিভি বিশেষজ্ঞ ড্যারেন ক্যালডেরার মতে, “এটিকে মোহনবাগানে ফেরান্দোর তত্ত্বাবধানে আসার পরে আক্রমণে আশিক অনেক বেশি স্বাধীনতা পাচ্ছে। বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের সঙ্গে যে ভাবে ও লড়াই করে, তাতেই বোঝা যায় ও কতটা মরিয়া হয়ে মাঠে নামে। ওকে সামলানো যে কোনও দলের ডিফেন্ডারদের পক্ষেই কঠিন কাজ”।
চলতি লিগের সবচেয়ে গতিময় ফুটবলারদের অন্যতম আশিককে নিয়ে তাঁর সতীর্থ উইঙ্গার ও ফরোয়ার্ড লিস্টন কোলাসোর মন্তব্য, “আশিক ঘোড়ার মতো। ৯০ মিনিট ধরে দৌড়য়। খুব শক্তিশালীও বটে। ওর জেতার মানসিকতাটাই দলের সবচেয়ে বড় সম্পদ”। আর এক সতীর্থ ও দলের জুনিয়র অ্যাটাকার কিয়ান নাসিরির মতে, “ও যা ভাবে ক্রসগুলো করে ও প্রতিপক্ষের বক্সে ঢোকে, সে জন্যও ও দলের পক্ষে কার্যকরী হয়ে ওঠে”।
আশিকের সবচেয়ে বড় গুণ, যে কারণে তিনি যে কোনও দলের পক্ষে অপরিহার্য্য হয়ে উঠতে পারেন, তা নিয়ে হিরো আইএসএলের টিভি দারাভাষ্যকার ও ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্লাব ফুটবলার পল মেসফিল্ড বলেছেন, “যে কোনও সিস্টেমে মানিয়ে যেতে পারে আশিক। কারণ, ও একাধারে লেফট উইঙ্গার, অন্যদিকে আবার রাইট ব্যাক, রাইট উইঙ্গার ও সেন্টার ফরোয়ার্ডও। একই ম্যাচে একাধিক ভূমিকায় দেখা যেতে পারে ওকে”।
কেরালা থেকে উঠে আসা এই কার্যকরী ফুটবলারকে নিয়ে হিরো আইএসএলের আর এক টিভি ধারাভাষ্যকার পল হেলম-এর মন্তব্য, “বাঁদিকে সবচেয়ে কার্যকরী ফুটবলার আশিক। ও ফুল ব্যাক হিসেবেও অনায়াসে খেলতে পারে। বাঁ দিকের উইং দিয়েও অনায়াসে উঠতে পারে। যথেষ্ট দক্ষ ফুটবলার এবং গোলও করতে পারে। ভারতে বড় তারকা ফুটবলার হয়ে ওঠার সবরকম উপাদানই ওর মধ্যে আছে। অনেকের থেকেই বেশি দক্ষ ও”।
সামনেই আশিক কুরুনিয়ানের বড় পরীক্ষা। সোমবার তারা ঘরের মাঠে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে খেলতে নামবে ফাইনালের ওঠার রাস্তা পরিষ্কার করতে। এই ম্যাচে তাঁর দিকে নজর থাকবে ঘরের মাঠের সমর্থকদের। এই কঠিন পরীক্ষা নিয়ে আশিক বলেন, “দল হিসেবে আমরা ভাল খেলছি, দল হিসেবেই ফাইনালে উঠতে চাই আমরা”।