লিজা মঙ্গলাদাসের সঙ্গে এক্সট্রা টাইম
পিচ সাইড সাংবাদিক লিজা মঙ্গলাদাসকে অনুসরন করুন, তিনি আপনাদের জন্য হিরো আইএসএলের পিছনের ছবিটা তুলে ধরবেন। প্রতি সপ্তাহে থাকবে নতুন পোস্ট এক্সক্লিউসিভ খবর শুধুমাত্র indiansuperleague.com এ।
পিচ সাইড সাংবাদিক লিজা মঙ্গলাদাসকে অনুসরন করুন, তিনি আপনাদের জন্য হিরো আইএসএলের পিছনের ছবিটা তুলে ধরবেন। প্রতি সপ্তাহে থাকবে নতুন পোস্ট এক্সক্লিউসিভ খবর শুধুমাত্র indiansuperleague.com এ। লিজার সঙ্গে যুক্ত থাকুন @leezamangaldas এর টুইটার এবং ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে।
বেঙ্গালুরু এফসির আলবার্তো সেরান ভারতে ঘরের অনুভূতি অনুভব করছেন
আলবার্তো সেরান অনেক কিছু ভরাট করতেই বেঙ্গালুরু এফসির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তিনি আসেন দলের প্রিয় ফুটবলার ও বেঙ্গালুরু এফসির প্রাক্তন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার জন জনসনের জায়গায়, যিনি ছিলেন দল আবির্ভাব হওয়ার সময় থেকেই- তিনি সুনীল ছেত্রির মতো ফুটবলার যিনি বিএফসিতে দীর্ঘদিন ধরে খেলেছিলেন। পঞ্চম আইএসএলের শুরুতে যখন জনসন এটিকেতে চলে যান তখন বিএফসির কোনও সমর্থকই ভাবতে পারেননি তাঁর জায়গা পুরোন করা যাবে, কারণ তাঁর জন্য সকলের মনে একটা আলাদা জায়গা ছিল। ঠিক সেই সময় দলের রক্ষণের পাশাপাশি ৩৪ বছরেরে এই ডিফেন্ডার নিজের নতুন ঘরে একটা আলাদা পরিচয় তৈরি করতে সফল হন।
বিএফসির মিডিয়া ম্যানেজার কুনাল মাজগাঁওকার এবং আমার সঙ্গে সাক্ষাত হওয়া ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম লেখক আমায় জানিয়েছিলেন, "সেরানের পিচের মধ্যে একটা অচেনা উপস্থিতি রয়েছে এবং এটি একটি ব্যতিক্রমী পঠন।" তাঁরা আরও ব্যাক্ষা করে বলেছেন, "তাঁর করা ব্লক ও ইন্টারসেপশনগুলি অবিশ্বাস্য অসাধারন- তাঁর খেলার মধ্যে সব থেকে আকর্ষনীয় বিষয় হল তিনি নিজের দিকে কখনই নজর কাড়েননা।" তাঁরা আরও বলেছেন, "সেরা ডিফন্ডাররা কখনই বেশি ট্যাকেল করে না। সেরানের মতো ফুটবলাররা পরের মুভমেন্টের জন্য আগে থেকেই তৈরি থাকেন, তাঁর মধ্যে কোনও নাটকীয়তা নেই।"
সেরান এমন একজন, যিনি সর্বদা শান্তভাবেই থাকেন, কিন্তু কঠিন সিদ্ধান্ত থেকে দূরে সরে থাকেননা। সেরান একটা সময় সোয়ানসির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যারা ২০১০-১১ সালে চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল জিতেছিল। কিন্তু তিনি সেই ক্লাব ছেড়ে দিয়েছিলেন শুধু মাত্র প্রিমিয়ার লিগে তাদের আর্থিক ও সামাজিক প্রতিভা প্রতিরোধের সুযোগ দেওয়ার জন্য। যদিও সেই ক্লাব না ছাড়লে হয়তো বিশ্বের আরও অনেক ক্লাবে খেলার সুযোগ তাঁর কাছে থাকতইনা। তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, "আমি সাইপ্রাসে যুক্ত হয়েছিলাম কারণ সোয়াইনসিতে আমার তৃতীয় বছর চলছিল, এবং সবকিছুর মধ্য আমি বেশ খুশি ছিলাম, কিন্তু আমি যেটা চাই ছিলাম সেটা পাচ্ছিলামনা- একজন খেলোয়াড় হিসাবে আমি যেটা চাই সেটা খুব সহজ, সেটা হল দলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা- দলের জন্য কিছু করা, দলে নিজের ছাপ বজায় রাখা, আর সেই কারণেই আমি দল বদল করলাম।"
প্রকৃতপক্ষে, লাভজনক ব্যক্তিদের উপর উদ্দেশ্যমূলক অভিজ্ঞতার সন্ধান করার প্রবণতার প্রকাশ তাঁর মধ্যে ছিল খুব ছোট বয়স থেকেই। তিনি একটি বার্সা সমর্থকের পরিবার থেকে এসেছিলেন এবং ন্যু ক্যাম্প থেকে মাত্র কয়েক মিনিট দূরে থাকাতেন, তবুও মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি বার্সেলোনার যুব অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, এবং পরিবর্তে এস্প্যানিয়লের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।
"কিন্তু বার্সেলোনায় কে না বলছিল?" আমি অবিশ্বাস্যভাবে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। "আমার বাবা-মা সবসময় আমাকে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে দিয়েছিলেন," সেরান হাসলেন। "এমনকি আমার শিশু বয়সেও, তাঁরা সবসময় আমাকে দায়িত্বশীল এবং স্বতঃস্ফূর্ত হতে এবং একটি স্বাধীনচেতা হওয়ার জন্য উৎসাহি দিতেন। আমি শুধু জানতাম, আমার শারীরিক গঠনের পাশাপাশি আমার শক্তি এবং একজন খেলোয়াড়ের মতো মেজাজ এস্প্যানিয়ল সংস্কৃতির জন্য উপযুক্ত।"
তাঁর কর্মজীবনের পথ ধরে, তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে খেলেছেন, স্পেন, ইংল্যান্ড, সাইপ্রাস, আলবেনিয়া, মরক্কো এবং এখন ভারতে খেলছেন। যখনই তিনি একটি ক্লাব বাছাই করেন, তখন তিনি একটি অভিজ্ঞতার সন্ধান করেন-সেই কারণেই তিনি বিএফসি-তে খেলার কথা ভাবেন।
তিনি আইএসএল সম্বন্ধে তাঁর বন্ধু এবং প্রাক্তন সতীর্থদের কাছ থেকে শুনেছিলেন, তিনি জানান, “আন্দ্রে ওর্লান্ডি এবং কোরো আমার কাছে আমার পরিবার এবং আমি ব্রাউলিও, বিকে, উচে, ল্যাঞ্জারোতে, কালডেরন এবং আরও অনেককেই দীর্ঘ সময় ধরে চিনি। আমরা একসঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি- আমরা অনেকেই তরুন বয়স থেকে একসঙ্গে খেলে বড় হয়েছি- এবং গত কয়েক বছর ধরেই তাঁরা ভারতে কাটানো তাঁদের সময় গুলো জানাচ্ছিলেন। এবং সেই কারণেই আমারও মনে হল আইএসএল খেলব।”
যখন তিনি শুনলেন বিএফসি তাদের প্রিসিজিন ট্রেনিং করছে ভ্যালেনশিয়াতে এবং
তারা একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারকে খুঁজছিল, তিনি সেই সময় যোগাযোগ করেন, বার্সেলোনার ট্রায়ালে যাননি এবং তিনি নিজেকে বেঙ্গালুরু এফসির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন। তিনি একটি ডাক নামও পান, “ দ্য ট্রায়ালিস্ট” সোসাল মিডিয়াতে তাঁর প্রিসিজিনের কথা প্রকাশ পায় এবং পঞ্চম মরসুমের জন্য তাঁকে দল বিদেশী কোটার ফুটবলার হিসাবে চূড়ান্ত করে সই করিয়ে নেয়।
কুনাল আনন্দের সঙ্গে জানিয়েছিলেন, “আলবার্তোকে আমরা একটা সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং সেটা দারুন ভাবে কাজ করে। আমরা লিগে খুব কম সংখ্যক গোল হজম করি, সাজঘরে তাঁর মূল্যবান উপস্থিতি আমরা বুঝতে পারি এবং তিনি সমর্থকদের মন জয় করতেও সফল হন।”
আমি বিএফসির একজন সমর্থক উল্লাস মারার সঙ্গে সেরানকে নিয়ে কথা বলি, যিনি পশ্চিম ব্লক ব্লুসে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন, তিনি জানান, “আমরা গোয়া ম্যাচের আগে সোসাল মিডিয়াতে তাঁর ফটো দিয়ে একটা পোস্টার তৈরি করি, এবং আমরা দেখি তিনি যথেষ্ট সুন্দর, - এবং অবশ্যই তিনি যথেষ্ট কঠিন ও ভাল, তিনি নিজের খেলায় যথেষ্ট ছাপ ছাড়েন- বেঙ্গালুরুতে নিজের খেলা দিয়ে তিনি আমদের ভালবাসা অর্জন করেছেন।”
সত্যি কথা বলতে তিন মাস ধরে সেরান ও তাঁর পরিবার ভারতকে নিজের ঘর বানিয়ে ফেলেছেন। তাঁর স্ত্রী মারাতা একজন দক্ষ ফটোগ্রাফার। এবং তাঁর ছয় বছরের মেয়ে ব্লাঙ্কা স্থানীয় জীবন যাপনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে সকলের মন জয় করেছে।
ব্লাঙ্কা স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি হয়েছে, এবং তিনি বহু বন্ধু তৈরি করেছে এবং নিজের ক্লাসে বেশ আনন্দ উপভোগ করছে। এর পাশাপাশি বিএফসির সকার স্কুলেও তিনি ভর্তি হয়েছে, যেখানে তিনি ক্লাসের পরে অনুশীলন করে। মারাতা নিজের ক্যামেরায় সকল সুন্দর মুহূর্ত, রঙ, মানুষ, জায়গা এবং অস্বাভাবিক স্মৃতি গুলি লেন্স বন্দি করেছেন। তাঁর তোলা অনেক গুলো ছবি আমি আমার লেখায় ব্যবহার করেছি। এবং আপনারা অবশ্যই তাঁর ইন্সটাগ্রাম @martafandres এ গিয়ে আরও অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি দেখতে পারেন।
ম্যাচ খেলতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমন করতে হয় যেটা আবার সেরান খুব পচ্ছন্দ করেন, বিভিন্ন ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে যেতে তিনি ভালবাসেন। তাজমহল থেকে কোভালাম বিচ, দৈনন্দিনের অটো রিক্সোতে চড়া থেকে স্থানিয় স্বেচ্ছা সেবক হিসাবে কাজ করা, তিনি ভারতের দৈনন্দিনের জীবন থেকে পাওয়া নানা অভিজ্ঞতা দিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করে তুলছেন এবং সেটাই তাঁকে প্রচুর আনন্দ দিচ্ছে।
“সত্যিই আমার এবং আমার পরিবারের কাছে এটা বড়ই আশ্চর্যের,” উষ্ণতার সঙ্গে জানালেন আলবার্তো। “এই মহান ক্লাবের অংশ হতে পেরে খুব ভালই লাগছে। দেশের সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছি। এখন পর্যন্ত অপরাজিত রয়েছি। যেটা কিনা আমার কাছে খুবই বিশেষ। এই রকম ঐন্দ্রজালিক সুন্দর দেশের ভূমিকা সম্বন্ধে আমি জিজ্ঞাসা করতেই পারব না।”