ডুরান্ড কাপে টানা দ্বিতীয় জয় পেল ইস্টবেঙ্গল এফসি। বুধবার কলকাতার কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে তারা কাশ্মীরের ডাউনটাউন হিরোজকে ৩-১-এ হারিয়ে ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষে পৌঁছে গেল তারা। কাশ্মীরের দলটি তিন ম্যাচে তিন পয়েন্ট অর্জন করে রয়েছে তিন নম্বরে ও ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স, যারা তাদের শেষ ম্যাচে দু’নম্বরে থাকা মোহনবাগান এসজি-র মুখোমুখি হবে বৃহস্পতিবার, তারা কোনও পয়েন্ট না পেয়ে গ্রুপের সর্বশেষ স্থানে। 

প্রথম ম্যাচেও একই ব্যবধানে জেতা গতবারের রানার্স আপ ইস্টবেঙ্গল এফসি এ দিন দাপুটে ফুটবল খেলার চেষ্টা করলেও প্রায়ই তাদের রক্ষণকে চাপে ফেলে দেয় ডাউনটাউন হিরোজ। ২৩ মিনিটে ফরাসি মিডফিল্ডার মাদি তালাল ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দিলেও তার সাত মিনিট পরেই তাদের রক্ষণের ভুলে সমতা আনেন ডাউনটাউনের ফরোয়ার্ড আফরিন। তবে ৩৩ মিনিটের মাথাতেই পেনাল্টি আদায় করে নেন পিভি বিষ্ণু এবং সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে ফের এগিয়ে দেন স্প্যানিশ মিডিও সল ক্রেসপো। ম্যাচের একেবারে শেষে অনবদ্য গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন তরুণ ফরোয়ার্ড জেসিন টিকে।   

গত ম্যাচে খেলা গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসকে এ দিন রিজার্ভ লিস্টে দেখা গেলেও তাঁকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। ক্রেসপো ও হিজাজি মাহেরকে নিয়ে দল নামান ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। সঙ্গে ডেভিড লালনসাঙ্গা, শৌভিক চক্রবর্তী, নাওরেম মহেশ, পিভি বিষ্ণু, মার্ক জোথানপুইয়ার মতো এক ঝাঁক প্রতিভাবান দেশীয় ফুটবলার, যাঁদের অনেককেই হয়তো আইএসএলে নিয়মিত দেখা যাবে।  

এ দিন শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা করলেও পাল্টা চাপে পড়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। ২৩ মিনিটের মাথায় ফ্রি কিক থেকে অসাধারণ গোল করে সেই চাপ কাটাতে সক্ষম হয় তারা। কাশ্মীরের দলের পেনাল্টি বক্সের সামনেই তালালকে ফাউল করা হলে রেফারি ফ্রি কিকের বাঁশি বাজান। বিপজ্জনক জায়গা থেকে নেওয়া ফ্রি কিকে সরাসরি গোলে শট নেন ফরাসি মিডফিল্ডার, যিনি এ দিনও যথেষ্ট তৎপর ছিলেন সারাক্ষণ। ডাউনটাউনের গোলরক্ষক উমেদ হুসেন মুগলুর বাঁদিক দিয়ে বল জালে জড়িয়ে যায় (১-০)।

এই গোলের আগে ম্যাচ প্রায় মিনিট পনেরো গড়াতে না গড়াতেই একাধিক সুযোগ তৈরি করে নেন কাশ্মীরের দলের ফুটবলাররা। কয়েক মিনিটের জন্য হলেও ইস্টবেঙ্গলকে কোণঠাসা করে ফেলে তারা। কিন্তু সেই চাপ কাটিয়ে উঠে ক্রমশ পাল্টা চাপ দিতে শুরু করে লাল-হলুদ বাহিনী। প্রথম গোলের পর সেই চাপ আরও বাড়ে। 

২৫ মিনিটের মাথায় ডেভিড লালনসাঙ্গা ছ’গজের বক্সে ঢুকেও গোলে বল ঠেলতে পারেননি। আক্রমণে শক্তিশালী হলেও ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণকে যে আরও শোধরাতে হবে, তা ফের প্রমাণ হল এই ম্যাচে। গত ম্যাচে তারা শুরুতেই গোল খাওয়ার পর ৩-১-এ জেতে। এ দিন গোল করে এগিয়ে যাওয়ার সাত মিনিটের মধ্যেই গোল খায় রক্ষণের ব্যর্থতায়। 

ডানদিক থেকে নেওয়া ফ্রি কিক ডিফ্লেকশনের পর আসে দ্বিতীয় পোস্টে, যেখানে সামনে ছিলেন মহম্মদ রকিপ ও তাঁর পিছনে ডাউনটাউনের ফরোয়ার্ড আফরিন। রকিপ উড়ে আসা বল ক্লিয়ার করতে না পারায় আফরিন সেই সুযোগ কাজে লাগান ও বাঁ পা বাড়িয়ে দেন। তাঁর পায়ে লেগে বল গোলে ঢোকে গোলকিপার প্রভসুখন গোলের গায়ে লেগে (১-১)। 

গোল খাওয়ার পর ফের ব্যবধান তৈরির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ইস্টবেঙ্গল ও ৩৩ মিনিটের মাথায় বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়া পিভি বিষ্ণুকে অবৈধ ভাবে বাধা দেন প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার ইকলাক ফৈয়াজ। রেফারি পেনাল্টি দিতে দেরী করেননি এবং সেই পেনাল্টি থেকে প্রথমে দৌড়ে, পরে থমকে গিয় ধীরেগতির শটে গোল করে দলকে ফের এগিয়ে দেন সল ক্রেসপো।      

দ্বিতীয়ার্ধে বিষ্ণুর জায়গায় সিকে আমনকে নামায় ইস্টবেঙ্গল। তবে ডাউনটাউন হিরোজ সমতা আনার উদ্দেশে ক্রমশ চাপ বাড়াতে থাকে। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা মিনিট দশেক গড়ানোর পরেই মাদি তালালকে অবৈধ ভাবে আঘাত করার প্রতিবাদে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন ইস্টবেঙ্গলের একাধিক ফুটবলার এবং দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। তালালকে বিপজ্জনক ভাবে মারার জন্য ডিফেন্ডার হায়দার ইউসুফকে ও ঝামেলা বাধানোর জন্য মহম্মদ রিয়াসকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। 

এই ঘটনার পরেই, ৫৬ মিনিটের মাথায় প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে সুবিধাজনক জায়গায় গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান ইস্টবেঙ্গলের সেন্টার ব্যাক হিজাজি মাহের। কিন্তু তাঁর দুর্বল শট আটকাতে কোনও বেগ পেতে হয়নি গোলকিপারকে। 

ব্যবধান বাড়াতে প্রায় সবাই মিলে উঠে যাওয়া ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পাল্টা আক্রমণে ঝড় তুলে দেন লাইবেরিয়ান ফরোয়ার্ড দারিয়াস স্নর্টন। কিন্তু সতীর্থদের যথেষ্ট সহযোগিতা না পাওয়ায় আক্রমণ তুলেও ব্যর্থ হন তিনি। 

খেলার বয়স ৭০ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর দুই দলেরই ফুটবলারদের খেলায় ক্লান্তির ছাপ দেখা যায়। এই সময়ে নাওরেম মহেশের জায়গায় সাহিম আজাদকে নামান ইস্টবেঙ্গল কোচ কুয়াদ্রাত। কেরালার এই তরুণ মিডফিল্ডার ৭৭ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে বল নিয়ে ওঠার সুযোগও পান, কিন্তু বক্সের কাছে গিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ৭৯ মিনিটের মাথায় চমৎকার পায়ের কাজ দেখিয়ে দুই ডিফেন্ডারকে ধোঁকা দিয়ে তিনি বক্সে ঢোকার চেষ্টা করলে পিছন থেকে ধাক্কা দেওয়া হয় তাঁকে। 

এই ফাউলের জন্য ফের বক্সের সামনে ফ্রি কিক পায় ইস্টবেঙ্গল। তবে এ বার আর সোজা গোলে শট নেননি তালাল। ছোট পাস দিয়ে গোলের সুযোগ তৈরির পরিকল্পনা ভেস্তে দেন ডাউনটাউনের ডিফেন্ডাররা। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মিনিট দশেক আগে ডেভিডের জায়গায় আর এক তরুণ ফুটবলার জেসিন টিকে-কে নামায় ইস্টবেঙ্গল। তালালের জায়গায় একেবারে শেষে নামানো হয় মিডফিল্ডার তন্ময় দাসকেও। 

এঁদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন জেসিন, যখন স্টপেজ টাইমে অনবদ্য গোল করে দলের জয় সুনিশ্চিত করেন তিনি। বিপক্ষের ডিফেন্ডার জুবেইদ আহাদ আখুনের ভুলকে কাজে লাগিয়ে তাঁর পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে এবং ইনসাইড-আউটসাইড করে তাঁকে পরাস্ত করে বক্সের মাথা থেকে সোজা গোলে শট নেন জেসিন, যা জালে জড়িয়ে যায় (৩-১)। 

অসাধারণ এই গোলের পরও হিজাজি মাহেরকে প্রায় গোল সাজিয়ে দেন সল ক্রেসপো। কিন্তু এ বারও গোলে শট নিতে পারেননি জর্ডনিয়ান ডিফেন্ডার। সব মিলিয়ে এ দিন আটটি শট গোলে রাখে ইস্টবেঙ্গল। ডাউনটাউন হিরোজ সেখানে তিনটি শট গোলে রাখতে পেরেছে। বল পজেশনেও ইস্টবেঙ্গল (৫৪-৪৬) ছিল এগিয়ে।