বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারানোর ছ’দিনের মাথায় দলের এমন পারফরম্যান্সে স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ এসসি ইস্টবেঙ্গলের কোচ ও অধিনায়ক। তবে ফাউলার খুশি অন্তত এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারায়। একাধিক ইতিবাচক দিক এই ম্যাচ থেকেও বার করতে চাইছেন তিনি।

শুক্রবার তিলক ময়দান স্টেডিয়ামে কেরালা ব্লাস্টার্স ৯৫ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে থাকার পরে ডিফেন্ডার স্কট নেভিলের হেডের গোলে হার বাঁচায় লাল-হলুদ বাহিনী। দলের দুই সেরা তারকা ব্রাইট ইনোবাখারে ও জাক মাঘোমা এ দিন সেরা ফর্মে ছিলেন না। তার ওপর গোটা দলটাই ছিল বিবর্ণ। যে পারফরম্যান্সে গত ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারিয়েছিল রবি ফাউলারের দল, তার ধারে কাছেও এ দিন ছিল না তারা। কোনও রকমে ১-১ করে মাঠ ছাড়ে ফাউলারের দল।

রাতে ম্যাচের পরে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে লাল-হলুদ কোচ বলেন, “ম্যাচটা জিততে না পারাটা হতাশাজনক ঠিকই। তবে এই ম্যাচেও একাধিক ইতিবাচক ব্যাপার রয়েছে। ম্যাচটা আমরা হারিনি। শেষ মিনিটে সমতা আনতে পেরেছি। তিন পয়েন্ট খোয়াতে পারতাম, কিন্তু তা হয়নি”।

ফাউলার আরও বলেন, “ওরা গোল করার পরে আমাদের দলের ভারসাম্য কিছুটা হলেও হারিয়ে যায়। এর আগে ছ’দিনে তিনটে কঠিন ম্যাচ খেলেছি আমরা। হয়তো সেই জন্যই আমাদের ছেলেদের স্বাভাবিক ছন্দে পাওয়া যায়নি আজ। তবে ওরা আজ অনেক সাহস ও ইচ্ছাশক্তির পরিচয় দিয়েছে। এটা ভাল দিক”।

কেরালার গোলকিপার এলবিন গোমসের লম্বা গোলকিক (৬৯ মিটার) থেকে বিপক্ষের এলাকায় যখন বল পান মারে, তখন তিনি সম্পুর্ণ অরক্ষিত এবং এসসি ইস্টবেঙ্গলের দুই ডিফেন্ডার নেভিল ও রাণা ছিলেন তাঁর সামনে। বল পেয়ে মারে দৌড়তে শুরু করলে তাঁর সঙ্গে গতিতে পেরে ওঠেননি লাল-হলুদ ডিফেন্ডাররা। দেবজিৎকেও ধোঁকা দিয়ে সোজা লক্ষ্যে বল ঠেলে দেন তাঁর ছয় নম্বর গোলের জন্য।

ফাউলার স্বীকার করে নেন, তাঁর ডিফেন্ডারদের ভুলেই এই গোলটি হজম করতে হয় তাঁদের। বলেন, “আমরা সারা ম্যাচে একটাও আকাশে শট মারিনি। আমাদের উইং-ব্যাকরা মাঝে মাঝে বিপক্ষকে চাপে রাখার জন্য বল উঁচুতে রাখছিল। যখন তা আমাদের ফাইনাল থার্ডে ফিরে আসছিল, তখন আমাদের তা আরও ভাল ভাবে ডিফেন্ড করা উচিত ছিল। তবে এখন যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনা থেকেই এখন শিক্ষা নিতে হবে আমাদের। আমাদের নিজেদের জায়গায় অবিচল থাকতে হবে। আগেও আমরা দেখিয়েছি, আমরা কী করতে পারি, কতটা ভাল খেলতে পারি। হাল ছাড়লে চলবে না”।   

এসসি ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক ড্যানিয়েল ফক্স স্বীকার করে নেন, তাঁরা শুক্রবারের ম্যাচে ভাল খেলেননি। হিরো আইএসএল মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফক্স বলেন, “সত্যি বলতে, আজ আমরা ভাল খেলতে পারিনি। এতক্ষণ ধরে ওদের এগিয়ে থাকতে দেওয়ার পরে শেষ মুহূর্তে হার বাঁচাতে হয়েছে আমাদের। আমাদের প্রথম ম্যাচের কার্বন কপি মনে হচ্ছে। সে বার আমরা এগিয়ে ছিলাম, ওরা শেষ মিনিটে সমতা এনেছিল। এ বার উল্টোটা হল। সেই ম্যাচে আমাদের জয়টা প্রাপ্য ছিল। এই ম্যাচে ওদের জেতার কথা ছিল। আমি হতাশ। আমরা ভাল খেলতে না পারা সত্বেও এক পয়েন্ট পেলাম। এটাই শুধু ভাল”।

এই ড্রয়ের ফলে টানা ছ’টি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে লাল-হলুদ বাহিনী। তবে এর মধ্যে মাত্র দু’টি জয় রয়েছে তাঁদের খাতায়। জয়ে ফিরতে চান ফক্স। বলেন, “আশা করি আমরা পরের ম্যাচগুলোতে আরও ভাল খেলব ও জিতব”। এসসি ইস্টবেঙ্গলের পরের তিনটি ম্যাচ চেন্নাইন এফসি, মুম্বই সিটি এফসি ও এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে। তিনটিই বেশ কঠিন ম্যাচ। সামনের এই কঠিন লড়াই নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “হয়তো গত ম্যাচটা জিতে আমরা কিছুটা হলেও আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু ভবিষ্যতে আর তা হলে চলবে না”।    

কেরালা ব্লাস্টার্সের কোচ কিবু ভিকুনা শেষ মুহূর্তের গোলে দুই পয়েন্ট খুইয়ে বেশ হতাশ। তাঁর মতে, জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হল তাঁদের। ম্যাচের পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমাদের হাতের মুঠোয় তিন পয়েন্ট চলেই এসেছিল। কিন্তু শেষ মিনিটের ওই গোলটাতেই আমরা দু’পয়েন্ট খোয়ালাম। দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের চেয়ে ওদের পায়েই বল বেশি ছিল ঠিকই। কিন্তু ওরা কোনও ভাল সুযোগ পায়নি। আমরাই বেশি সুযোগ পেয়েছি আর তার মধ্যে একটাতে গোলও করি। এই হার মেনে নেওয়া খুবই কঠিন। পরপর দুটো জয় আমাদের খুব দরকার ছিল। তা হলে আমরা লিগ টেবলে কয়েক ধাপ ওপরে উঠতে পারতাম”।

এসসি ইস্টবেঙ্গলের মতো দলের বিরুদ্ধে দলের এই পারফরম্যান্সে বেশ খুশি ভিকুনা বলেন, “আমরা আজ এক কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলেছিলাম, যাদের যথেষ্ট ভাল ভাল ফুটবলার রয়েছে। আমাদের রক্ষণ শুধু নয়, পুরো দলই আজ ভাল খেলেছে। ওদের বেশ গোলের সুযোগ তৈরি করতে দিইনি আমরা। ওদের ব্রাইট, মাঘোমা, পিলকিংটনের মতো ফুটবলাররাও বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেনি আমাদের বিরুদ্ধে”।