পাঁচ দিন পরেই এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালের পরীক্ষা এটিকে মোহনবাগানের। এই ম্যাচে জয়ী দল ইন্টার জোনাল ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। বিপক্ষে শক্তিশালী উজবেকিস্তানের এফসি নসফ। ম্যাচটা যে কঠিন হবে, তা মেনে নিলেও জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী এটিকে মোহনবাগানের অন্যতম সেরা তারকা রয় কৃষ্ণা।

আপাতত দুবাইয়ে নিজেদের সেই ম্যাচের জন্য প্রস্তুত করছেন দলের ফুটবলাররা। দুবাইয়ের প্রস্তুতি শিবির থেকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রয় বলেন, “ম্যাচটা কঠিন হবে। কিন্তু আমরা এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য যথাসাধ্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের কাছে এই ম্যাচে জয়টা বিরাট এক কৃতিত্ব হবে। ওরা (নসফ) ঘরের মাঠের সুবিধা পাবে ঠিকই। কিন্তু এই ম্যাচে জেতার ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী”।

আগামী বুধবারের ম্যাচটি হওয়ার কথা দক্ষিণ উজবেকিস্তানের কার্সি শহরে। বিপক্ষের শক্তি সম্পর্কে রয় বলেন, “ওদের কয়েকজন ভাল বিদেশি খেলোয়াড় রয়েছে। তার ওপর ওদের লিগের খেলাও শুরু হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ ওরা যথেষ্ট প্রস্তুত হয়েই এই ম্যাচে নামবে। ওদের মতো একটা তৈরি দলের বিরুদ্ধে মাঠে নামা কঠিন চ্যালেঞ্জ ঠিকই। কিন্তু আমরা ওখানে নিজেদের উজাড় করে দেব”।

এই ম্যাচে ফিনল্যান্ডের হয়ে ইউরো কাপে খেলা মিডফিল্ডার ইওনি কাউকো সবুজ-মেরুন জার্সিতে প্রথম মাঠে নামবেন। এ ছাড়া দলে ডেভিড উইলিয়ামস, মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসোও রয়েছেন। গোলের সুযোগ তৈরিতে সাহায্য করার জন্য পুরোপুরি সুস্থ হয়ে দলে ফিরছেন দুই উইং ব্যাক মাইকেল সুসাইরাজ ও প্রবীর দাসও। ফলে আক্রমণাত্মক মেজাজেই হয়তো খেলবে সবুজ-মেরুন শিবির। কিন্তু রয় যেহেতু দলের প্রধান স্কোরার, তাই উজবেক দলের দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডাররা যে তাঁকে কড়া মার্কিংয়ে রাখবেন, এমনই ধরে নেওয়া যায়।

সে জন্যও প্রস্তুত তিনি, জানিয়েছেন দলের ফিজিয়ান তারকা। বলেন, “যে কোনও দলই নিজেদের রক্ষণ আঁটোসাঁটো করার পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামে। আমাদের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটবে, ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছি। কোচের নির্দিষ্ট কিছু কৌশল ও পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলো ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে আমরা ম্যাচটা জিততে পারি। আমাদের রক্ষণ ও মাঝমাঠও খুব ভাল। আশা করি, ওরা আমাদের বল পায়ে রাখতে ও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং গোল করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে”।

ক্লাব সূত্রের খবর, প্রবীর, মাইকেল ও কাউকো— তিন জনই দারুণ ফর্মে রয়েছেন। দুই ভারতীয় উইং ব্যাক, যেমন তাঁদের দলে ফেরাটা স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন, তেমনই সবুজ-মেরুন জার্সিতে তাঁর অভিষেক যাতে মনে রাখেন সমর্থকেরা, সেই চেষ্টাও করবেন কাউকো। তবে ফুটবলে যেটা আসল, সেই গোলের জন্য রয়ের দিকেই তাকিয়ে থাকবেন সমর্থকেরা। এই চাপ কী ভাবে সামলাবেন তিনি, জানতে চাইলে ফিজির অলিম্পিয়ান বলেন, “দলকে জেতানোই আমার প্রধান উদ্দেশ্য। গোলের সুযোগ পেলে গোল করবই। সতীর্থদের গোল করতে সাহায্যও করব। আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এই ম্যাচেও একই থাকবে। দলকে জেতানো। সে জন্য নিজেদের গোলের সামনে গিয়ে রক্ষণেও সাহায্য করতে পারি”।

ক্লাব সূত্রে জানা যাচ্ছে, দুবাইয়ে ছ’দিনের প্রস্তুতি শিবিরে বিভিন্ন কৌশল ও পরিকল্পনা নিয়ে চর্চা করেছেন দলের কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। প্রতিপক্ষের শক্তি ও দুর্বলতা নিয়ে যাবতীয় চর্চার পরে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দলের রক্ষণ আঁটোসাঁটো করার দিকে বেশি জোর দিতে হবে। ম্যাচ টাই ব্রেকার পর্যন্ত গড়ালে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য যথেষ্ট পেনাল্টি শুট আউটও অনুশীলন করিয়েছেন হাবাস।

এই ম্যাচে সফল হতে হলে যে নিজেদের দক্ষতা ও ক্ষমতার স্তর আরও ওপরে নিয়ে যেতে হবে, সে রকমই মনে করেন রয় কৃষ্ণা। বলেন, “আমাদের খেলায় আরও উন্নতি আনতে হবে এবং ফিটনেসও বাড়াতে হবে। ওরা নিজেদের দেশে লিগ খেলে এসে এই ম্যাচ খেলছে। আর আমরা মলদ্বীপের ম্যাচগুলোর কয়েক সপ্তাহ আগে একত্রিত হয়েছিলাম। তখন কোভিড বিধিনিষেধের জন্য অনেকে ঠিক সময়ে আসতেও পারেনি। ফলে খুব বেশি অনুশীলনও করা যায়নি। কিন্তু এই ম্যাচের আগে আমরা মাসখানেক একসঙ্গে খেলেছি, অনুশীলন করেছি। ফিটনেস লেভেলও এখন বেড়েছে। এখন আমরা ভাল জায়গায় রয়েছি। তবে আমাদের প্রতিপক্ষ যেহেতু আমাদের নিয়ে হোমওয়ার্ক করেছে, ওরা আমাদের স্টাইল সম্পর্কে পরিচিত। তাই নিজেদের চেনা কৌশল বদলাতে পারলে সুবিধাই হবে”।

এটিকে মোহনবাগান স্কোয়াড: (গোলকিপার) অমরিন্দর সিং, অভিলাষ পাল, অর্শ আনোয়ার, (ডিফেন্ডার) প্রীতম কোটাল, আশুতোষ মেহতা, কার্ল ম্যাকহিউ, শুভাশিস বসু, সুমিত রাঠি, (মিডফিল্ডার) ইওনি কাউকো, লেনি রড্রিগেজ, লিস্টন কোলাসো, প্রবীর দাস, মাইকেল সুসাইরাজ, বিদ্যানন্দ সিং, ইঙসন সিং, শেখ সাহিল, রবি বাহাদুর রানা, অভিষেক ধনঞ্জয়, (ফরোয়ার্ড) রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস, মনবীর সিং, কিয়ান নাসিরি।