হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) ২০১৭-১৮ ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয়ে চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা উঠল চেন্নাইয়িন এফসির মাথায়, লিগের ইতিহাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হল চেন্নাইয়িন এফসি। বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে চেন্নাইয়িন এফসি ফাইনালে জেতার পরে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করার পাশাপাশি মরসুমে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পারফর্মেন্সের বিচারে কৃতীদের সম্মান জানান হয় এবং পুরস্কার দেওয়া হয়। এখানে পুরস্কার বিজয়ীদের উপর আমরা আলোকপাত করব সঙ্গে তাদের ভুমিকা নিয়েও আলোচনা করব। 

সোনার বুট বিজয়ীঃ ফেরান কোরোমিনাস(এফসি গোয়া) 

দ্য স্প্যানিয়ার্ড ১৮ টি গোল করে লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারটি জেতেন, যা কিনা হিরো আইএসএল-এর ইতিহাসে একটি রেকর্ড, আইএসএল-এর এক মরসুমে সর্বাধিক গোল করার রেকর্ড। তিনি তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দ্রুত গতিতে কাজ করতেন, কৌশলের পাশাপাশি শিকারের দক্ষতা এবং একটি ক্লিনিকাল ফিনিশার ছিলেন তিনি, আইএসএল-এর ইতিহাসে কোরো  প্রথম প্লেয়ার যিনি লিগে ধারাবাহিক হ্যাটট্রিক করেছেন। কোরোমিনাস ম্যানুয়াল ল্যাঞ্জারোটের যুগলবন্দি ছিল গোয়া'র প্রাথমিক আক্রমণের মুখ, কারণ স্প্যানিয়ার্ডরা মাঠে বিরোধীদের প্রতি বিধ্বংসী প্রভাব তৈরি করত। ৩৫-বছর-বয়সী এই ফুটবলার সর্বাধিক গোল করার পাশাপাশি গোল করিয়েছেন পাঁচটি। 

সোনার গ্লাভস বিজয়ীঃ সুব্রত পাল (জামশেদপুর এফসি) 

জামশেদপুর এফসি সেমিফাইনালের যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয় তবে গ্রুপ লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত লড়াইয়ের মধ্যে ছিল তারা। তাদের সাফল্যের একটি বড় অংশের কৃতিত্বের অধিকারী ভারতীয় স্পাইডারম্যান সুব্রত পাল। ৩১ বছর-বয়সী এই গোলরক্ষক সাতটি ম্যাচ ক্লিনশিট রাখেন, তার মিনিট প্রতি গোল হজমের অনুপাত ১০২.৪৭ এবং ৪৪ টি গোল সেভ করেছেন তিনি, যার ফল স্বরূপ গোল্ডেন গ্লাভস পুরস্কার জেতান তিনি। জামশেদপুর এফসি যে রক্ষণ নিয়ে নিজেদের একটা অনন্য বুনিয়াদ তৈরি করেছে তার অনেকটা কৃতিত্ব যায় তাঁর কাঁধে। লিগের শেষ ম্যাচে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে দল তাঁর অনুপস্থিতির মূল্য বুঝতে পারে, তারা ৩-০ ব্যবধানে ম্যাচ হারে  এবং সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়। 

হিরো অফ দ্য লিগঃ সুনীল ছেত্রি (বেঙ্গালুরু এফসি) 

বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক গোটা মরসুম ধরে নিজের ফর্মের ধারাবাহিকা ধরে রাখেন এবং নেতৃত্ব দেন যা দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে। দুই ভারতীয় খেলোয়াড়ের মধ্যে ছেত্রি একজন যিনি চলতি মরসুমে হ্যাটট্রিক করেছেন, যারমধ্যে একটি ছিল এফসি পুনে সিটির বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে। তিনি একমাত্র ভারতীয় যিনি লিগের ইতিহাসে দুটি হ্যাটট্রিক করেছেন এবং সমগ্র অভিযানে ১৪ টি গোল করেছেন, যেটি কোন ভারতীয় ফুটবলার হিসাবে সর্বাধিক। ফাইনালে চেন্নাইয়িন এফসির বিরুদ্ধে হেরে একটুর জন্য ট্রফি হাতছাড়া হওয়ার জন্য তিনি নিশ্চিত হতাশ হবেন। 

এমার্জিং প্লেয়ার অফ দ্য লিগঃ লালরুয়াথারা (কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি)  

২৩ বছর বয়েসী রক্ষণের মাধ্যমে অনেক প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছেন এবং এগিয়ে গিয়েও কার্যকর হয়েছিল,  এছাড়াও প্রতিরক্ষায় দলকে কঠিন করে তুলেছিলেন। দ্রুত এবং দৃঢ়, লালরুয়াথারা প্রতিটি খেলায় ফাইনাল ট্যাকেলের মাধ্যমে দলের হয়ে মূল্যবান ভুমিকা পালন করেছেন এবং রক্ষণে অপ্রতিরদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন। হিরো আইএসএল ২০১৭-১৮ তে তিনি কার্যকরী ৮৫ টি ট্যাকেল করেছেন, তিনি ক্লাব এবং দেশ উভয়ের জন্য ভবিষ্যতের এক বড় সম্পদ।

প্লেয়ার অফ সিজন: ইনিগো ক্যালডেরন (চেন্নাইয়িন এফসি) 

চেন্নাইয়ের একজন সফল নেতা ছিলেন, যার অবস্থান ছিল দলের পিছনে, দ্য স্প্যানিয়ার্ড লিগের সেরা কার্যকারী খেলোয়াড়দের অন্যতম। তিনি তার আক্রমণাত্মক হামলার পাশাপাশি তার শক্তিশালী আত্মরক্ষামূলক দক্ষতা দলের অনেক কাজে আসে। যদিও ৩৬ বছর বয়সী, ক্যালডেরন দ্রুত এবং অক্লান্ত ছিলেন, নিশ্চিতভাবেই কখনও বল দখলে জয় করতে গিয়ে ব্যর্থ হননি। চেন্নাইয়িন এফসির দলে সবচেয়ে প্রভাবশালী খেলোয়াড়দের মধ্যে তিনি অন্যতম, এই মরসুমে তিনি ৫০ টি ট্যাকেল করার পাশাপাশি তিনটি গোলও করেছেন। 

মরসুমের বিজয়ী পাস: উদান্ত সিং (বেঙ্গালুরু এফসি) 

দ্রুত গতির উইঙ্গার, তার দ্রুত দৌড় এবং ড্রিবলিং, বিরোধী পক্ষের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল যা বেঙ্গালুরুকে অন্যদের থেকে এগিয়ে দেয়। উদান্ত আক্রমণ ভাগে পাস সরবরাহ করেন এবং তার পা থেকে বেড়ান বল চমৎকার দৃষ্টি প্রদর্শন করত। যা তাঁকে প্রতিভাশালী তরুণ হিসাবে বর্ণিত করে। উদান্ত হিরো আইএসএল ২০১৭-১৮ তে অবিশ্বাস্য সাতটি গোল করান এবং নিজেও একটি গোল করেন। ফাইনালে ডান পার্শ্ব থেকে তার পাঠান ক্রস থেকেই বেঙ্গালুরুর হয়ে গোল করেন সুনীল ছেত্রি, যার ফলে ফাইনালের প্রথমে ব্লুসরা এগিয়েও গিয়েছিল।