গত হিরো আইএসএলে অল্পের জন্য যেমন লিগশিল্ড হাতছাড়া হয় এটিকে মোহনবাগানের, তেমনই ফাইনালে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে চ্যাম্পিয়নশিপও হাতছাড়া হয় তাদের। লিগপর্বে এতটাই ভাল পারফরম্যান্স ছিল তাদের যে একবারও প্রথম চারের বাইরে যেতে দেখা যায়নি সবুজ-মেরুন বাহিনীকে। রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস ছাড়াও অসাধারণ খেলেছিলেন হাভিয়ে হার্নান্ডেজ ও এডু গার্সিয়া।    

এ বার আর এডু, হাভিদের সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে মাঠে দেখা যাবে না। চার বিদেশিকে এ বারের দলে রেখে দিয়েছে এটিকে মোহনবাগান। যোগ দিয়েছেন নতুন দুই বিদেশি। ইওনি কাউকো হিরো আইএসএলে এ বারই প্রথম খেলবেন এবং হুগো বুমৌসকে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ও লিগশিল্ডজয়ী মুম্বই সিটি এফসি থেকে নিয়ে এসে রীতিমতো চমক দিয়েছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। সব মিলিয়ে কেমন হল এ বারের এটিকে মোহনবাগানের বিদেশি ব্রিগেড, জেনে নিন।

তিরি, ডিফেন্ডার, স্পেন

গত মরশুমে এটিকে মোহনবাগানের রক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন এই স্প্যানিশ সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার। তবে টানা খেলার চাপ হয়তো শেষ দিকে তাঁকে কিছুটা ক্লান্ত করে তুলেছিল। লিগের শেষ দিকে প্রথমে ফর্ম হারান, পরে চোট পান। ফলে নক আউট পর্বে সেই চেনা তিরিকে আর পাওয়া যায়নি। ফাইনালে ডেভিড উইলিয়ামস গোল করে দলকে এগিয়ে দেওয়ার পর তিরির আত্মঘাতী গোলেই সমতা আসে।

তবে এ বার পুরোপুরি তরতাজা অবস্থায় তাঁকে পাওয়া যাবে বলেই কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের ধারণা। সেই জন্যই তাঁকে সবুজ-মেরুন শিবিরে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। হিরো আইএসএলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার এই তিরি। গতবার দলের হয়ে ২১টি ম্যাচ খেলেন তিরি। সব মিলিয়ে ২৫টি ইন্টারসেপশন ও ১৩৩টি ক্লিয়ারেন্স ছিল তাঁর খতিয়ানে। হিরো আইএসএলে একশো ম্যাচের মাইলস্টোন ছুঁতে তাঁর আর সাতটি ম্যাচ দরকার। আর কোনও বিদেশিই হিরো আইএসএলে এত ম্যাচ খেলেননি। ডিফেন্ডার হলেও তিনটি গোল ও দু’টি অ্যাসিস্ট রয়েছে তাঁর।

এটিকে-র সঙ্গে ২০১৬-য় হিরো আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হন এবং তার পরের তিন মরশুমে জামশেদপুর এফসি-র অধিনায়ক ছিলেন। গত মরশুমে সবুজ মেরুন শিবিরে যোগ দেন ও দলকে নক আউট পর্বে পৌঁছনোয় ৩০ বছর বয়সি তিরির অবদান ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি এএফসি কাপে তাঁর অভাব ভাল মতোই টের পেয়েছে এটিকে মোহনবাগান। তবে হিরো আইএসএলে ফের হাবাস-বাহিনীর রক্ষণের মধ্যমণি হয়েই নিশ্চয়ই দেখা যাবে তাঁকে।    

কার্ল ম্যাকহিউ, ডিফেন্ডার/মিডফিল্ডার, আয়ারল্যান্ড

এ বছর এডু গার্সিয়ার মতো নির্ভরযোগ্য বিদেশি তারকাকে ছেড়ে দিলেও এটিকে মোহনবাগান কিন্তু এই মিডফিল্ডারকে ছাড়েনি মাঝমাঠ ও রক্ষণে শক্তি বাড়ানোর জন্য। মিডফিল্ডার হলেও রক্ষণেও তিনি যথেষ্ট পারদর্শী। গত মরশুমের শেষ দিকে এটিকে মোহনবাগান রক্ষণের নিয়মিত খেলোয়াড়রা যখন কয়েকটি ম্যাচে খেলতে পারেননি, তখন কার্লকেই রক্ষণে খেলিয়েছিলেন কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস।

সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার, ডিফেন্সিভ মিডিও বা লেফট ব্যাক হিসেবে তাঁকে হিরো আইএসএলে দেখা গিয়েছে এর আগে। গত মরশুমে এটিকে মোহনাগানের হয়ে ২১টি ম্যাচ খেলেছিলেন কার্ল। সব মিলিয়ে ১০৯টি ট্যাকল, ৩৯টি ক্লিয়ারেন্স ও ৩২টি ইন্টারসেপশন ছিল তাঁর খতিয়ানে। দুটি গোলে অ্যাসিস্টও করেন তিনি। রক্ষণ ও আক্রমণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ এমন একজন অলরাউন্ডার ফুটবলারকে তাই হয়তো ছাড়তে চাননি হাবাস।

মাদারওয়েল, ব্র্যাডডফোর্ড সিটি, প্লাইমাউথ আর্গাইলের মতো স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ক্লাবে খেলার পরে ২০১৯-এ ভারতে আসেন কার্ল। আয়ারল্যান্ডের অনূর্ধ্ব ১৭, ১৯ ও ২১ দলের হয়ে খেলা কার্ল প্রথম বছরেই হিরো আইএসএলের চ্যাম্পিয়ন এটিকে এফসি দলের সঙ্গে ছিলেন। সে বার চোটের জন্য ছটির বেশি ম্যাচ খেলতে না পারলেও একটি গোল করেছিলেন। 

ইওনি কাউকো, মিডফিল্ডার, ফিনল্যান্ড

দক্ষ সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে সফল ৩০ বছর বয়সি এই কাউকো। ফিনল্যান্ডের হয়ে এই পজিশনেই তিনি এ বছর ইউরোর তিনটি ম্যাচ খেলেছেন পরিবর্ত খেলোয়াড় হিসেবে। তবে শুধু এই জায়গায় নয়, দলের প্রয়োজনে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের ভূমিকাও পালন করতে পারেন তিনি। ফিনল্যান্ডের সিনিয়র দলের হয়ে খেলার আগে কাউকো দেশের চারটি বয়সভিত্তিক দলেই খেলেছেন। সিনিয়র দলের হয়েও খেলেছেন তিনি।

গত তিনটি মরশুমে ডেনমার্কের প্রথম ডিভিশন ক্লাব এসবিয়র্গের হয়ে ৮১টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২১টি গোলও রয়েছে সেই ক্লাবের হয়ে। কাউকো যোগ দেওয়ায় এটিকে মোহনবাগানের মাঝমাঠের শক্তি বাড়ল। ২০১২-য় ফিনল্যান্ডের সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম মাঠে নামেন কাউকো। উয়েফা নেশনস লিগ ২০১৮-১৯-এর লিগ সি, গ্রুপ ২-এ সেরা ফিনল্যান্ড দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন তিনি। জার্মানির বুন্দেশলিগা ক্লাব এফএসভি ফ্রাঙ্কফুর্টের হয়েও খেলেছেন তিনি।

ভারতে এসে সাংবাদিকদের কাউকো জানিয়ে দেন, আমি দলের আক্রমণে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চাই বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার হিসেবে। একজন মিডফিল্ডারের অনেক গোল করতে পারাটা খুব বিরল ব্যাপার। আমি সেই ভূমিকাই পালন করতে চাই এখানে, যেমন গত তিন বছরে ডেনমার্কে করে এসেছি আমি। তবে কী সিস্টেমে আমরা খেলছি, তার ওপর নির্ভর করছে আমি ঠিক কোন জায়গায় খেলতে পছন্দ করব

কেন এটিকে মোহনবাগানের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন, তা জানতে চাইলে কাউকো বলেন, একাধিক ক্লাবের প্রস্তাবই ছিল আমার কাছে। কিন্তু আমি কেরিয়ারের এই সময়ে অন্য রকম কিছু একটা চাইছিলাম। এটিকে মোহনবাগান আমার সামনে সেই রাস্তাটা খুলে দেয়। তাই এই ক্লাবে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা খুব একটা কঠিন হয়নি আমার কাছে। এ রকমই চেয়েছিলাম আমি

কাউকো সম্পর্কে হাবাসের ধারণা, মিডফিল্ডার হিসেবে ও (কাউকো) একাধিক ভূমিকা পালন করতে পারে, যে সারা মাঝমাঠ জুড়ে খেলতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, যে কোনও সিস্টেমের সঙ্গে ও নিজেকে খুব দ্রুত ও ভাল ভাবে মানিয়ে নিতে পারে। শারীরিক ভাবেও ও খুবই ফিট ও শক্তিশালী। দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ব্যক্তিত্বও রয়েছে ওর মধ্যে। আমার মনে হয়, আমাদের দলে ও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে

হুগো বুমৌস, মিডফিল্ডার, ফ্রান্স

ফিনল্যান্ডের মিডফিল্ডার কাউকোকে সই করিয়ে দলের মাঝমাঠে বাড়তি শক্তির জোগান দেওয়ার পর এটিকে মোহনবাগান বুমৌসের মতো হিরো আইএসএলের অন্যতম সেরা অ্যাটাকিং মিডিওকে সই করিয়ে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে, আগামী মরশুমে তারা সবচেয়ে শক্তিশালী দল গড়তে চায়। দেশের সেরা ফুটবল লিগে ৫৮ ম্যাচে ১৯টি গোল ও ২৪টি অ্যাসিস্ট রয়েছে যাঁর নামের পাশে, সেই ২৫ বছর বয়সি বুমৌস মিডফিল্ডার হলেও বিপক্ষের গোল এরিয়ায় তাঁর ঘন ঘন বিচরণই তাঁকে বিপজ্জনক করে তোলে।

মিডফিল্ডার হয়েও স্ট্রাইকারের চেয়ে কম নন তিনি। নিখুঁত পাসে গোল সাজিয়ে দেওয়া বা সুযোগ পেলেই বিপক্ষের জালে বল জড়ানোর ব্যাপারে তিনি বিশেষজ্ঞ। ২০১৯-২০ মরশুমে এফসি গোয়ার হয়ে তিনি ১১টি গোল করেন ও ১০টি গোলে সাহায্য করেন। এফসি গোয়ার প্রথম লিগশিল্ড জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। সে বার লিগের সেরা নায়কের পুরস্কার পান তিনি। গত মরশুমে মুম্বই সিটি এফসি-র লিগশিল্ড ও চ্যাম্পিয়নশিপ জয়েও তাঁর অবদান কম নয়। ১৬টি ম্যাচে তিনটি গোল ও সাতটি অ্যাসিস্ট করেন তিনি। তাঁর পাসিং অ্যাকিউরেসি ছিল ৭০.৫২ শতাংশ।

হুগো বুমৌসের মতো সফল ও ক্ষুরধার মস্তিষ্কের আক্রমণাত্মক মিডিও পেয়ে খুশি এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। বরাবরই আক্রমণাত্মক ফুটবলের সমর্থক হাবাস তাঁর শিবিরের নতুন তারকাকে নিয়ে বলেন, হুগো খুব দ্রুতগতির ও টেকনিকে নিখুঁত একজন ফুটবলার। ওর ব্যক্তিগত দক্ষতাও যথেষ্ট ভাল। ও যেমন আক্রমণ তৈরি করতে পারে, তেমনই প্রতি আক্রমণেও উঠতে পারে। সেই জন্যই ও এত সফল। হুগো এসে যাওয়ায় আমাদের দলের শক্তি অনেকটাই বেড়েছে

নিজের সম্পর্কে হুগো বলেন, আমি সবসময়ই ট্রফি জেতার খিদে নিয়ে মাঠে নামি। যে সমস্ত ক্লাবে খেলেছি, তাদের সাফল্য এনে দিতে পেরেছি। এই ক্লাবেও সে কথা মাথায় রেখেই খেলব। জয়ের জন্য নিজের সেরাটা দেব। ম্যাচ জেতার পর সবুজ-মেরুন সমর্থকদের উন্মাদনা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। এ মরশুমে দলকে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ জেতানোই আমার লক্ষ্য। গোল করা আর গোল করতে সাহায্য করা, দুটোই আমার কাছে সমান কৃতিত্ব এবং তৃপ্তির। দলের জয়ই আসল। গোল ছাড়া যা অসম্ভব

ডেভিড উইলিয়ামস, ফরোয়ার্ড, অস্ট্রেলিয়া

এই মরশুমেও এটিকে মোহনবাগানে থেকে যাওয়া প্রসঙ্গে ডেভিড ক্লাবের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের কথা টেনে এনে বলেছেন, “আমি যেমন এই ক্লাবকে মাঠে অনেক সাহায্য করি, তেমনই এই ক্লাবও আমাকে মাঠের বাইরে খুবই সাহায্য করে। সেরা পারফরম্যান্স দেখানোর জন্য ফুটবলারদের যা যা করা দরকার, তা সবই করে ক্লাব। এই ব্যাপারটাই আমার খুব ভাল লাগে। মনে হয় নিজের বাড়িতেই রয়েছি”। ক্লাব ও দলের সঙ্গে তাঁর এই সুসম্পর্কই এ মরশুমে তাঁর সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হয়ে উঠতে পারে।

গত মরশুমে হিরো আইএসএলে ২০টি ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন ডেভিড। ছ’টি গোল করেন ও দু’টি গোলে সাহায্য করেন। এ বার দলের ফরোয়ার্ড লাইন বেশ শক্তিশালী এবং মাঝমাঠেও বুমৌস, কাউকোদের মতো অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার রয়েছেন, যাঁরা নিয়মিত গোল করতে অভ্যস্ত। এমন দলের মধ্যে ডেভিডকে হাবাস কী ভাবে ব্যবহার করেন, সেটা সমর্থকদের কাছে কৌতুহলের বিষয়।

আসন্ন মরশুমে কোথায় কোথায় উন্নতি করতে হবে এটিকে মোহনবাগানকে? দলের অন্যতম সেরা তারকার ধারণা, “আমাদের ম্যাচের শুরুর দিকেই গোল করতে হবে, যাতে নিজেদের অবস্থানটা শক্তপোক্ত হয়। গত মরশুমে বেশির ভাগ ম্যাচেই প্রথমার্ধে গোল করতে পারিনি আমরা। বিপক্ষকে যতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছিলাম, ততটা পারিনি। আমাদের শুরুতে গোল করে বিপক্ষকে চাপে ফেলতে হবে। ওদের তাড়া না করে পাল্টা চাপে ফেলাই তো ভাল”।  

গত মরশুমে সেমিফাইনালের দুই লেগেই গোল করেন ডেভিড। গোল করেন ফাইনালেও। কিন্তু সেই গোল শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি। লিগ শিল্ড জয়ের একেবারে কাছে গিয়েও ফিরে আসেন তাঁরা। এমনকী, বিপক্ষ মুম্বই সিটি এফসি-র শেষ মুহূর্তের গোলে চ্যাম্পিয়নশিপও হাতছাড়া হয় তাদের।

রয় কৃষ্ণা, ফরোয়ার্ড, ফিজি

গত হিরো আইএসএলের গোল্ডেন বল জয়ী তারকা রয় কৃষ্ণা এই মরশুমেও রয়েছেন এটিকে মোহনবাগানে। দেশের এক নম্বর ফুটবল লিগ হিরো আইএসএলে অংশগ্রহনকারী একাধিক ক্লাব তাঁকে মোটা অঙ্কের প্রস্তাব দিলেও সবাইকে ফিরিয়ে দিয়ে কলকাতার ক্লাবেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রয়। অর্থাৎ আসন্ন হিরো আইএসএলে গোলের বন্যা বইয়ে দেওয়ার জন্য সবুজ-মেরুন শিবিরে হুগো বুমৌস, ইওনি কাউকোর সঙ্গে থাকছেন রয়। ভারতে এসে প্রথম মরশুমে ১৫টি ও দ্বিতীয় মরশুমে ১৪টি গোল করার পরে এ বার রয় কতগুলো গোল করবেন, সেটাই হতে চলেছে লিগের অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয়।

গত মরশুমে এটিকে মোহনবাগান সাফল্যের মুকুট জিততে না পারলেও রয় যে খেলা দেখান, তাঁকে অসাধারণ বললেও বোধহয় কম বলা হয়। সারা লিগ জুড়ে যে দাপট ও ক্ষিপ্রতা দেখা গিয়েছিল এই ফিজিয়ান তারকা স্ট্রাইকারের পারফরম্যান্সে, তাতে এটিকে মোহনবাগানের প্রত্যেক প্রতিপক্ষ তাঁকে রীতিমতো সমীহ করে। তাঁকে আটকানোর জন্য আলাদা করে বিশেষ পরিকল্পনা করতে হয়েছিল প্রত্যেক কোচকে। তবে তাঁকে পুরোপুরি  আটকানোর সাধ্য হয়নি কারও। যে যে ম্যাচে গোল পাননি, সেই ম্যাচগুলোতে গোল করিয়ে নিজের কর্তব্য ঠিক পালন করেছিলেন তিনি।

গোল না করেও যে তিনি দলের সাফল্যে অবদান রাখতে পারেন, তার উদাহরণ রয় দেন নক আউট পর্বে। তিনটি ম্যাচে কোনও গোল পাননি তিনি। কিন্তু এই তিন ম্যাচে যে চারটি গোল পেয়েছে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড, তার প্রত্যেকটাতেই অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। লিগ পর্বেও চারটি খুব গুরুত্বপূর্ণ গোলেও সাহায্য করেন তিনি। ১৪টি গোলের সঙ্গে তাই আটটি অ্যাসিস্ট-ও জমা হয় তাঁর পারফরম্যান্সের খতিয়ানে। অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে মোট ৩২টি গোলের মধ্যে সব মিলিয়ে ২২টিতেই তাঁর অবদান ছিল। প্রত্যক্ষভাবে এবং পরোক্ষভাবে।

তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখে দলের স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস বলতে বাধ্য হন, গত মরশুমের মতোই রয় এ বারও আমার দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। প্রথম কয়েকটা ম্যাচে ও নিজের সেরাটা দিতে পারেনি। কারণ, ছমাস ফুটবলের বাইরে ছিল ও। কিন্তু এখন ও আমার কাছে লিগের সেরা খেলোয়াড়

গতবার লিগ পর্বে এটিকে মোহনবাগান যে কটি গোল করেছিল, তার অর্ধেকই রয়ের করা। তিনি স্ট্রাইকার, গোল করাই যে তাঁর কাজ, তা ঠিকই। কিন্তু রয়ের কাজ যে শুধু গোল করা নয়। তা তিনি বহুবার প্রমাণ করেছেন। আক্রমণ বিভাগে তিনি যেমন সর্বদা তৎপর, তেমনই মাঝমাঠের সঙ্গে আক্রমণের যোগসূত্র স্থাপন করার কাজটাও নিয়মিত করেছেন রয়। এমনকী, মাঝে মাঝে রক্ষণ বিভাগে নেমে এসে তাঁকে বিপক্ষের আক্রমণকারীদেরও সামলাতে দেখা যায়। সে জন্যই এ বারও রয় কৃষ্ণাকে হাতছাড়া করল না এটিকে মোহনবাগান।

গত হিরো আইএসএলের গোল্ডেন বল জয়ী রয় কৃষ্ণাকে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচশো ফুটবলারদের তালিকায় রেখেছে বিশ্বখ্যাত ফুটবল ম্যাগাজিন ওয়ার্ল্ড সকার। সম্প্রতি তাদের বিশেষ সংখ্যায় সারা দুনিয়ার যে ৫০০ জন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারকে নিয়ে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে এটিকে মোহনবাগানের তারকা ফরোয়ার্ড রয় কৃষ্ণারও প্রশংসা করে তাঁকে নিয়েও বিস্তারিত লেখা হয়েছে।