গত দুটি ম্যাচে জয় নেই তাদের। শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে তারা। তাই শনিবার ওডিশা এফসি-কে হারিয়ে জয়ে ফেরা জরুরি এটিকে মোহনবাগানের। তাদের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো চান ঘরের মাঠে এই ম্যাচ জিতে চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় দিক তাঁর দলের ছেলেরা।

ওডিশার বিরুদ্ধে ফিরতি লিগের ম্যাচে নামার আগে শুক্রবার সাংবাদিকদের সবুজ-মেরুন কোচ বলেন, “ঘরের মাঠে ম্যাচ মানেই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কালকের ম্যাচের জন্য তৈরি। বরাবরের মতো আমাদের লক্ষ্য এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট তোলা। চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রমাণ দেওয়ার জন্য এর চেয়ে ভাল সুযোগ আর আসবে বলে মনে হয় না। ওডিশা যথেষ্ট ভাল দল। ওরা সম্ভবত সেরা ছয়ে থাকবে। কারণ, ওদের ভাল ভাল খেলোয়াড় রয়েছে। গত মরশুমে ওরা সেরা চারের দৌড়ে ছিল। সুতরাং কালকের ম্যাচ কঠিন হবে”।

প্রতিপক্ষ ওডিশা এফসি-কে নিয়ে পেরান্দো বলেন, “ওডিশা খুবই ভাল দল। ওরা কয়েকটা ম্যাচে হেরেছে খুঁটিনাটি কারণে। এমনিতে ওদের পারফরম্যান্স যথেষ্ট ভাল। ওদের মরিসিওর মতো ভাল ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রয়েছে, দেলগাদোর মতো ভাল সেন্টার ব্যাক রয়েছে। ক্রেসপোও খুব পরিশ্রম করে খেলে। আক্রমণে ওরা তেমন ধারালো না হলেও রক্ষণে বেশ ভাল। অনেক ইতিবাচক ব্যাপার রয়েছে ওদের। তবে খুঁটিনাটি ব্যাপারে আর একটু মনযোগ দিলে আরও উন্নতি করবে ওরা”।             

ম্যাচের পর ম্যাচ এত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করছেন লিস্টন কোলাসোরা, যেগুলি কাজে লাগাতে পারলে গোলের বন্যা বইয়ে দিতে পারত সবুজ-মেরুন বাহিনী। মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধেই যেমন ছ-ছ’টা শট তিনকাঠির মধ্যে রেখেও গোল পাননি সবুজ-মেরুন তারকারা।

তাই বারবার প্রশ্ন উঠছে এই নিয়ে। যার উত্তরে স্প্যানিশ কোচ বলছেন, “গোল না পাওয়া নিয়ে একই কথা বলব। সুযোগ তৈরি করাটাই আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কাজ হল ছেলেদের সাহায্য কযোগ তৈরি করারা। আসলে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা মোটেই সোজা কাজ নয়। তবে ওরা পরিশ্রম করছে সমস্যার সমাধান করার জন্য। আমি ওদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি। গত ম্যাচে প্রতিপক্ষের গোলকিপার অসাধারণ ফর্মে ছিল। চেন্নাইনের বিরুদ্ধে ম্যাচে তিনবার ওয়ান ইজ টু ওয়ান পরিস্থিতিতে গোল মিস হয়েছে। এটা ফুটবলের অঙ্গ। আমার কাজ ছেলেদের আত্মবিশ্বাস জোগানো। আশা করি, বক্সের মধ্যে আমরা অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠব”।

জানুয়ারির দলবদলে যাঁরা দলে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে চান ফেরাান্দো। বলেন, “গালোগো, পুইতিয়ারা এখন আমাদের দলের নীতি, পদ্ধতি সম্পর্কে জানছে। জায়গা তৈরি করা, আক্রমণ ও রক্ষণে ওদের ভূমিকা কী রকম, অনুশীলনে এগুলো বোঝার চেষ্টা করছে ওরা। অবশ্যই ওরা উন্নতি করছে। ওদের কখন কী ভাবে ব্যবহার করব, সেটা নিয়ে ভাবছি। এখনও আমাদের সামনে পাঁচ-ছ’টা ম্যাচ বাকি। কয়েকজন খেলোয়াড়ের আবার এমন অবস্থা যে আর কার্ড দেখলেই তাদের সাসপেন্ড হতে হবে। কয়েকজনের চোটের প্রবণতা আছে। কখন কাকে দরাকার হয় কিছুই বলা যায় না। তাই অন্যদের প্রস্তুত রাখা হচ্ছে”।

প্রতিপক্ষের গোলের সামনে তো বটেই, এমনকী নিজেদের পেনাল্টি বক্সের সামনেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন সবুজ-মেরুন তারকারা। এমন এমন ফাউল করে বসছেন তাঁরা, যার জেরে প্রতিপক্ষ বিপজ্জনক জায়গায় বারবার ফ্রি কিক পেয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যা নিয়ে ফেরান্দো বলেন,  “দল যখন খুব চাপে পড়ে যায়, তখন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এই সমস্যা সমাধান করার ক্ষেত্রে ছেলেদের সাহায্য করাটাই আমার কাজ। আসলে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যেহেতু শেষ দুটো ম্যাচে দল সফল হয়নি, তাই সবাই কিছুটা চাপে রয়েছে এবং ভুলভাল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তবে এ সবই ফুটবলের অঙ্গ। পেশাদার ফুটবলাররা এই সব অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষা নেয় ও ভবিষ্যতে তারা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তবে এই ধরনের চাপ সামলানো মোটেই সোজা নয়”।

 দুঃসময় কাটিয়ে দল আবার সাফল্যে ফিরে আসবে বলে মনে করেন এটিকে মোহনবাগান কোচ। বলেন, “আমাদের সামনে এখন লিগের আরও ছ’টি ম্যাচ আছে, তার পরে প্লে অফ. সুপার কাপ। এ সবেতেই যাতে আমরা সমান ভাবে এগোতে পারি, তা দেখতে হবে। তাই দলের ছেলেদের পাশে থাকতে চাই। সমস্যা আসেই, সেগুলো সমাধান করতে হয়। তা ছাড়া ফুটবলে কারও সমান দিন যায় না। কখনও ভাল দিন আসে, কখনও খুবই খারাপ দিন আসে। তখন নিজেদের উন্নত করে তুলতে হয়। এই ব্যাপারে কোচেদেরও উন্নতি করা দরকার। নতুন নীতি, পদ্ধতি তৈরি করা দরকার”।

এর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “একজন খেলোয়াড় কোনও এক শনি বা রবিবার দারুন খেলল, ম্যাচের সেরা হল। সোম-মঙ্গলবার তাকে নিয়ে প্রচুর হইচই হল। পরের রবিবারের ম্যাচে সেই খেলোয়াড়ই কিছুই করতে পারল না। আসলে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি। এই ব্যাপারে কোচদেরও সাহায্য করা উচিত। এটাই আমাদের কাজ। কখনও মনে হয় কোচের চেয়ে দলের ছেলেদের বাবা হিসেবে কাজ করা উচিত আমার। কারণ, বেশির ভাগ খেলোয়াড়েরই বয়স খুব কম। ওদের পাশে থাকা, সাহায্য করাটা খুব জরুরি। কাজটা কঠিন। তবে আমি এই কাজটা করে খুবই খুশি। লিস্টন, কিয়ান, ফারদিনরা নিশ্চয়ই একদিন প্রতি ম্যাচে একই রকম ভাল খেলবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য। সেজন্যই কাজ করে চলেছি আমরা”।  

সদ্য দলে যোগ দেওয়া গ্ল্যান মার্টিন্স. যিনি এর আগেও সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছেন, তিনি বলেন,  “দু’বছর পর এই ক্লাবে ফিরতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। সবাই জানে এই ক্লাবের ঐতিহ্য কী রকম। প্রতি ম্যাচে নিজের সেরাটা দিতে চাই। মরশুমের মাঝখানে কোনও দলে যোগ দেওয়াটা কঠিন ঠিকই। তবে যেহেতু এই কোচের তত্ত্বাবধানে আমি আগেও খেলেছি, তাই তাঁর দর্শন, খেলোয়াড়দের কাছ থেকে উনি ঠিক কী চান এ সব আমার কিছুটা হলেও জানা রয়েছে। আমার মনে হয় দলের সঙ্গে আমি সহজেই মানিয়ে নিতে পারব। এই দলের সতীর্থদের সঙ্গে আমি আগেও খেলেছি। কয়েকজনের সঙ্গে জাতীয় দলেও খেলেছি। তাই আমার কাছে ব্যাপারটা খুব একটা কঠিন হবে না। সমর্থকেরাও সম্ভবত আমাকে পছন্দ করবেন। দলকে যথাসাধ্য সাহায্য করতে চাই এবং দলকে সেরা ছয়ে রাখতে চাই”।