ভিয়েতনাম সফর ১-১ ড্র দিয়ে শুরু করল ভারত। শনিবার হো চি মিন সিটির থং নহাত স্টেডিয়ামে ত্রিদেশীয় হাং থিন টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে বিশ্ব ক্রমতালিকায় পিছিয়ে থাকা সিঙ্গাপুরকে হারানোর সুযোগ পেয়েও হারাল। একাধিক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে তারা। প্রথমার্ধে গোল খাওয়ার ছ’মিনিটের মধ্যে তা শোধ করলেও জয়সূচক গোলটি আর পাওয়া হয়নি ভারতের। সেট পিস থেকে গোল করার একাধিক সুযোগ পেলেও সেগুলি কাজে লাগাতে পারেনি ভারত।

ম্যাচের পরে ভারতীয় দলের অধিনায়ক স্বীকার করে নেন, তাঁরা আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। বলেন, “আমাদের আজ আরও ভাল খেলা উচিত ছিল। অনেক গোলের সুযোগ নষ্ট হয়েছে। অনেক কিছু শোধরাতে হবে আমাদের। আবহাওয়া নিয়ে কোনও অজুহাত দিতে চাই না। দুদিন আগেই চলে এসেছি আমরা এখানে। তাই এটা কোনও কারণ হতে পারে না। এখানকার মাঠ খুবই ভাল। আমাদেরই এখন অনেক কিছু শোধরাতে হবে”।

শনিবার শুরুর দিকে সিঙ্গাপুর কিছুটা চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করলেও পরে ম্যাচের রাশ ক্রমশ নিজেদের হাতে নিয়ে আসে ভারত। সুনীল ছেত্রীকে সামনে রেখে এ দিন আক্রমণ সাজায় ভারতীয় দল। তাঁকে গোলের বল সাপ্লাইয়ের দায়িত্ব ছিল লিস্টন কোলাসো, আশিক কুরুনিয়ন, সাহাল আব্দুল সামাদদের।

শুরুর দিকে বেশ কয়েকবার তাঁরা প্রতিপক্ষের গোল এরিয়ায় ঢুকে বিপদ সৃষ্টির চেষ্টা করলেও ভারতের প্রথম জোরালো আক্রমণ হয় ১৮ মিনিটের মাথায়, যখন বক্সের বাইরে থেকে সোজা গোলে শট নেন কোলাসো। বল গোলে ঢোকার ঠিক আগে তা ডানদিকে ডাইভ দিয়ে বাঁচান সিঙ্গাপুরের গোলকিপার হাসান সানি।

৩০ মিনিটের মাথায় ফের হানা দেয় ভারতীয়রা এবং কর্নার আদায় করে নেয়। সেই কর্নার থেকে পরপর দু’বার সুবর্ণ সুযোগ পায় ভারত। প্রথমবার গোললাইন সেভ হয়। ফিরতি বলে নরেন্দর ঠিকমতো পা ছোঁয়াতে পারলে হয়তো গোল পেতেন। কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি।

ভারত চাপ বজায় রাখলেও মাঝে মাঝে বিপজ্জনক ভাবে কাউন্টার অ্যাটাকে উঠছিল সিঙ্গাপুর। কিন্তু ভারতীয় রক্ষণ ও গোলকিপারের তৎপরতায় সফল হতে পারেনি তারা। ৩৬ মিনিটের মাথায় এমনই এক আক্রমণে ওঠার সময় আশিক বক্সের ঠিক বাইরে অনুমন্থনকে অবৈধ ভাবে বাধা দিলে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি কিক পায় সিঙ্গাপুর। ফরোয়ার্ড ইকশান ফান্দির ফ্রিকিক ভারতের ওয়ালে দাঁড়ানো জিকসনের কাঁধে ধাক্কা খেয়ে গতিপথ পরিবর্তন করে গোলকিপার গুরপ্রীতের বাঁ দিক দিয়ে গোলে ঢুকে যায় (১-০)। গুরপ্রীত বলে হাত ছোঁয়ানোর চেষ্টা করেও সফল হননি।  

এই আনন্দ অবশ্য বেশিক্ষণ উপভোগ করতে পারেনি সিঙ্গাপুর। মাত্র ছ’মিনিট পরেই গোল শোধ করে দেয় ভারত। প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে তাদের বক্সে ঢুকে পড়া আশিককে বল বাড়িয়ে দেন সুনীল। এটিকে মোহনবাগানের এই অ্যাটাকিং ফরোয়ার্ডকে চারজন ডিফেন্ডার ঘিরে ধরলেও তিনি মাথা ঠান্ডা রেখে বল গোলে ঠেলে দেন (১-১)।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা করে ভারত। ৪৯ মিনিটের মাথায় সেন্টার লাইনের বাঁ দিক থেকে ফ্রি কিকে বিপক্ষের বক্সের সামনে থাকা আশিককে লব করেন অনিরুদ্ধ থাপা। নিখুঁত এই লব পেয়ে সোজা গোলে শট নেন কিন্তু তা সেভ করেন হাসান। এর জেরে যে কর্নার পায় ভারত, সেই কর্নারে হেড করে বল গোলের দিকে পাঠান সুনীল। কিন্তু ফের সেই গোল বাঁচান হাসান সানি।

প্রথমার্ধের চেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়। দ্বিতীয় গোল দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন সুনীল ছেত্রীরা। কিন্তু ৬৫ মিনিটের মাথায় বিপক্ষের বক্সের সামনে পাওয়া ফ্রি কিক থেকে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন কোলাসো। তিনি সোজা গোলে শট না নিয়ে বাঁ দিকে রোশনকে দিলেও তিনি সোজা গোলকিপারের হাতে বল তুলে দেন।

নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার প্রায় কুড়ি মিনিট আগে একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন করেন ভারতের কোচ স্টিমাচ। রোশন, আশিক ও সাহালের জায়গায় নামান যথাক্রমে হরমনজ্যোৎ খাবরা, রাহুল কেপি ও ইয়াসির মহম্মদকে। আক্রমণ বিভাগকে তরতাজা করে তোলাই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু যিনি বারবার গোলের সুযোগ তৈরি করছিলেন, সেই আশিককে বসানোর সিদ্ধান্ত কিছুটা অপ্রত্যাশিতই।

ছ’মিনিট পরে আরও দুই আক্রমণাত্মক ফুটবলারকে নামান কোচ, ইশান পন্ডিতা ও উদান্ত সিং। কিন্তু বসিয়ে দেন কোলাসো ও সুনীলকে। শেষ দশ মিনিটে জয়সূচক গোল তুলে নেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু সেট পিসে ভারতীয় দলের দুর্বলতা এ দিন বারবার চোখে পড়ে। ৮০ মিনিটের মাথায় বিপক্ষের বক্সের ঠিক বাঁদিকে ফ্রি কিক আদায় করেন উদান্ত। কিন্তু সেই সুযোগও হেলায় হারান অনিরুদ্ধ থাপা।

প্রথম একাদশের আক্রমণ বিভাগের প্রায় সব খেলোয়াড়ই বসে পড়ায় নতুন করে আক্রমণ বিভাগের বোঝাপড়া তৈরি করতে হয় উদান্ত, ইশান, রাহুল, ইয়াসিরদের। কিন্তু সময় তেমন ছিল না তাদের হাতে। ৮৫ মিনিটের মাথায় বক্সের মাথা থেকে গোলে শট নেওয়ার সুযোগ পেয়েও তা বারের অনেক ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন ইশান। সিঙ্গাপুরও সেই সময় রক্ষণে প্রায় দেওয়াল তুলে দেয়। যে দেওয়াল ভেদ করে জালে বড় জড়ানো ভারতের পক্ষে বেশ কঠিন হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত তারা তা পারেওনি।         

সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ড্র করার পর মঙ্গলবার ক্রমতালিকায় প্রায় দশ ধাপ ওপরে থাকা ভিয়েতনামের মুখোমুখি হতে হবে ভারতকে। সেই ম্যাচ নিয়ে সুনীল বলছেন, “ভিয়েতনাম খুবই ভাল দল। ওদের বিরুদ্ধে ম্যাচ কঠিন হবে। আমাদের এই ম্যাচের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে ওদের বিরুদ্ধে অনেক ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে হবে”। 

ভারতীয় দল: গুরপ্রীত সিং (গোল), আনোয়ার আলি, আকাশ মিশ্র, নরেন্দর, রোশন নাওরেম (হরমনজ্যোৎ সিং খাবরা), অনিরুদ্ধ থাপা (লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে), জিকসন সিং, আশিক কুরুনিয়ান (রাহুল কেপি), লিস্টন কোলাসো (উদান্ত সিং), সাহাল আব্দুল সামাদ (ইয়াসির মহম্মদ), সুনীল ছেত্রী (অধি) (ইশান পন্ডিতা)।