বিরতিতে দলের ছেলেদের বলেছিলেন, বিপক্ষকে আরও চাপে ফেলার চেষ্টা করো। তা হলেই ওরা ভেঙে পড়বে। স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের এই পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন এটিকে মোহনবাগানের ফুটবলাররা। আর তাতেই হিরো আইএসএলের প্রথম কলকাতা ডার্বিতে বাজিমাত। এক নয়, জোড়া গোলে জিতল তারা। প্রথমার্ধে পারফরম্যান্সের দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে গোটা দলটা ঘুরে দাঁড়িয়ে যে ভাবে জয় ছিনিয়ে নিল চিরপ্রতিদ্বন্দী এসসি ইস্টবেঙ্গলের হাত থেকে, তা প্রশংসনীয়।

দলের ফুটবলারদের প্রশংসা কোচ হাবাসের মুখেও। বললেন, “এই জয়ে আমি খুবই খুশি। দারুণ খেলেছে ছেলেরা। খুব খেটেছে”। প্রথমার্ধে যে দল সেরা জায়গায় ছিল না, তা স্বীকার করে নিয়েই হাবাস ম্যাচের পরে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “প্রথম ৪৫ মিনিট আমরা সেরা জায়গায় ছিলাম না। তবু গোলশূন্য রাখতে পেরেছি। ম্যাচটা তো ৯০ মিনিটের। ৯০ মিনিট পরে ফল ২-০। এটাই তো আসল”। তবে প্রথম ৪৫ মিনিট রক্ষণাত্মক ফুটবল নিয়ে তাঁর কোনও আপত্তি নেই বলেই জানালেন, “প্রথম দিকে রক্ষণ বেশি হয়েছে তো পরের দিকে আক্রমণে উঠেছি। ফুটবল তো রক্ষণ ও আক্রমণ নিয়েই হয়। শুধু রক্ষণ বা শুধু আক্রমণ তো আর সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে যে আমরা প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলাম। স্কোরেই সেটা প্রমাণ হয়েছে”, বলেন দু’বার হিরো আইএসএল খেতাবজয়ী কোচ।

বিরতিতে কী ভাবে দলকে উদ্বুদ্ধ করলেন, তা জানতে চাইলে হাবাস বলেন, “দ্বিতীয়ার্ধে ছেলেদের বলি বিপক্ষকে আরও চাপে ফেলতে। ওদের আরও আক্রমণাত্মক হওয়ার পরামর্শ দিই। প্রথমার্ধে এই জায়গাটাই আমাদের ঠিক হচ্ছিল না। সাত-আট মাস পরে মাঠে নেমে শুরু থেকেই মানিয়ে নিতে একটু তো অসুবিধা হবেই”।

দু’টি গোল হলেও এ দিন ব্যবধান বাড়তে পারত হয়তো। সেই প্রসঙ্গে হাবাসের স্পষ্ট জবাব, “ফুটবলে সব সুযোগই তো আর কাজে লাগানো যায় না। তবে আমাদের যে দুটো গোল হয়েছে, তাতে আমি খুশি”।

সবুজ মেরুন শিবির এই জয়ের আনন্দ উপভোগ করার অনুমতি পাচ্ছে শুধু শুক্রবার রাতটুকুর জন্য। শনিবার থেকে অবশ্য পরের ম্যাচের (ওডিশা এফসি) ভাবনা ঢুকে পড়তে চলেছে হাবাসের সংসারে। বললেন, “ডার্বির জয়টা তো ভাল বটেই, উদ্বুদ্ধও করবে হয়তো ছেলেদের। তবে কাল থেকে আর এই ম্যাচ নিয়ে ভাবব না, পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবতে বসতে হবে। যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। পরের ম্যাচ আবার একটা নতুন ম্যাচ”।

সবুজ-মেরুন শিবির যে তাঁদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে ডার্বি জিতেছে, এটা মেনে নিতে রাজি নন এসসি ইস্টবেঙ্গলের কোচ রবি ফাউলার। তিনি বলেন, “এটিকে মোহনবাগানের আধিপত্য ছিল, এটা মানতে পারছি না। প্রথমার্ধে আমরা ওদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলাম। দ্বিতীয়ার্ধে ওরা যে সুযোগগুলো পেয়েছে, সেগুলো কাজে লাগিয়ে নিয়েছে, যেটা আমরা পারিনি। তাই বলে ওরা আধিপত্য করেছে, এটা ঠিক নয়”। 

দুই গোলে হার নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “হারের পরে কী করে সন্তুষ্ট হব, বলুন? আমরা সপ্তাহ দুয়েক প্রস্তুতি নিতে পেরেছিলাম। গত বারের আইএসএল চ্যাম্পিয়ন দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই বিপক্ষে খেলেছে। তাও আমরা ওদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। বিশেষ করে প্রথমার্ধে”।

প্রথম ম্যাচ বলেই কি এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তরে ফাউলার বলেন, “দু-আড়াই সপ্তাহ প্রস্তুতি নিয়েছি। দলের ছেলেরা খুব একটা খারাপ তৈরি হয়নি তাতে। আমি অজুহাত খাড়া করতে চাই না। যত ম্যাচ খেলব আমরা, ছেলেরা আরও ধারালো হয়ে উঠবে বলেই আমার বিশ্বাস”।

শুরুর দিকে বেশি সতর্ক হয়ে খেলেছেন তাঁর দল, এই অভিযোগও প্রায় উড়িয়ে দিয়ে ‘গাফার’ বলেন, “সতর্ক হয়ে শুরু করেছি, এটা ঠিক না। সব কিছু ঠিকমতো বুঝে নিতে চাইছিলাম আমরা। তাও শুরুর দিকে অনেকগুলো গোল তৈরি করার চেষ্টা করেছি। ওরা একটা ম্যাচ খেলে ফেলেছে। তাই ধারের দিক থেকে কিছুটা এগিয়ে তো ছিলই। আমরা আক্রমণে ওঠার সময় বিপক্ষের গোল এরিয়ায় জায়গা তৈরি করার চেষ্টা করছিলাম। তবে ওদেরও কৃতিত্ব দিতে হবে, সেটা ওরা করতে দেয়নি আমাদের। এটাই ফুটবল। আমাদের যে জায়গাগুলোতে ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো ঠিক করে নিতে হবে পরের ম্যাচগুলোতে”।