Image Courtesy: Argentina Football Team

তিনি ছিলেন লিওনেল মেসির অধিনায়ক। ভারতীয় ফুটবলে পা রেখে তিনি এখন এক অন্যরকমের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেও মেসি এখন ফুটবল দুনিয়ার সর্বোচ্চ স্তরে। যা নিয়ে তাঁর গর্বের শেষ নেই। তিনি এফসি গোয়ার ৩৫ বছর বয়সি ডিফেন্ডার মার্ক ভ্যালিয়েন্তে। বার্সেলোনার যুব অ্যাকাডেমিতে যখন খেলতেন, তখন তিনি সেই যুব দলের অধিনায়কত্ব করেছেন এবং সেই দলে তাঁর সতীর্থ ছিলেন মেসি, যিনি আজ বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা কিংবদন্তি।

বিশ্বকাপের আবহে কথায় কথায় এখন সেই দিনগুলির স্মৃতি মনে পড়ছে ভ্যালিয়েন্তের, যখন তিনি বার্সেলোনার অ্যাকাডেমিতে সদ্য ফুটবল জীবন শুরু করেছিলেন এবং একদিন একটি ছোটখাটো ছেলেকে সেই অ্যাকাডেমিতে যোগ দিতে দেখে একটু অবাকও হয়েছিলেন। সেই ছেলেটিই লিও মেসি।

“যখন ও আমাদের দলে যোগ দেয়, তখন ওর বয়স ১৩-১৪ হবে। ওর পক্ষে ব্যাপারটা মোটেই সোজা ছিল না। কারণ, ও সেই আর্জেন্তিনা থেকে এসেছিল। প্রথম মরশুমে ও খেলতে পারেনি। কারণ, আমাদের খেলার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ওর পক্ষে অতটা সহজ ছিল না তখন। কিন্তু ক্রমশ ও জড়তা কাটিয়ে ওঠে এবং প্রথম মিনিট থেকেই বুঝিয়ে দিত ও সবার চেয়ে আলাদা”, বলেন মেসির প্রাক্তন অধিনায়ক ভ্যালিয়েন্তে।

দুনিয়াজুড়ে ফুটবলবোদ্ধারা বলে থাকেন, শিশু বা কিশোর বয়সে যে কোনও ফুটবলারের প্রথম টাচ-ই তাঁর প্রতিভার ইঙ্গিত দেয়। গত দুই যুগ ধরে সেই প্রবাদেরই ধারাক-বাহক এবং উদাহরণ হয়ে রয়েছেন মেসি। বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা কিংবদন্তি হয়ে ওঠার আগে মেসির সেই প্রতিভার বিচ্ছুরণ নিজের চোখেই দেখেছেন ভ্যালিয়েন্তে।

বার্সেলোনার যুব দল, সেভিয়া, রিয়াল ভালাদোলিদে খেলে আসা এই স্প্যানিশ সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার স্মৃতিচারণ করেন, “আমার মনে আছে, তখন আমরা ডাবল টাচ ফুটবল খেলতাম। সেটাই ছিল আমাদের খেলার স্টাইল। মাত্র দু-একটা টাচে যত দ্রুত সম্ভব মাঠের এক দিক থেকে অন্য দিকে উঠতাম আমরা। আমরা যে সময়ে দু’বার টাচ করতাম, লিওর সেই সময়ে ছ-সাতটা টাচ হয়ে যেত। আমরা তার আগে এমন প্রতিভা কখনও দেখিনি। তখনই বোঝা যেত ও সবার চেয়ে আলাদা। তখন জানতাম না যে, ও এত বিশাল জায়গায় চলে যাবে। কিন্তু মাত্র ১৪ বছর বয়সে ওর খেলায় সেই ইঙ্গিত পাওয়া যেত”।

বার্সেলোনা অ্যাকাডেমিতে ভ্যালিয়েন্তেদের সেই ব্যাচ থেকেই সবচেয়ে ভাল মানের ফুটবলার উঠে এসেছে বলে মনে করা হয়। সেই ব্যাচেরই অন্যতম খেলোয়াড় মনে করেন, একজন ফুটবলারকে গড়ে তুলতে গেলে তাকে মাঠে বেশি সময় দেওয়ার পাশাপাশি তার শিক্ষার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার ও রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশন ইয়ং চ্যাম্পসের অনূর্ধ্ব ১৯ কোচ ইজুমি আরাতা ভ্যালিয়েন্তের সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, “চারদিকে প্রচুর প্রতিভা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কিন্তু এই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাদের খুঁজে বের করে আনতে বাড়তি চেষ্টা করা প্রয়োজন। এই দর্শন নিয়ে আমাদের আরও বেশি অ্যাকাডেমি গড়ে তোলা প্রয়োজন”।

চলতি হিরো আইএসএলে এক ঝাঁক ভারতীয় তরুণ ফুটবলারকে তাঁদের প্রতিভা মেলে ধরতে দেখা গিয়েছে। অনেকেই কোচেদের কাছে নির্ভরযোগ্যও হয়ে উঠেছেন। এ বারের হিরো আইএসএলে ২২জন অনূর্ধ্ব ২৫ ফুটবলারের অভিষেক হয়েছে । এঁদের মধ্যে ২০জনই ভারতীয়। দেশের সেরা ফুটবল মঞ্চে দেশের সেরা ফুটবল প্রতিভাদের মেলে ধরার ও প্রমাণ করার সুযোগ দেওয়াই এই লিগের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগ।