হিরো আইএসএল শেষ। এ বার ভারতীয় সিনিয়র দলের মাঠে নামার পালা। আজ, বুধবার থেকে মণিপুরের ইম্ফলে শুরু হচ্ছে ত্রিদেশীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট, যার প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও মায়ানমার। টুর্নামেন্টের তৃতীয় দল কিরঘিজস্তান।

গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় ফুটবলকে একঝাঁক ফুটবলার উপহার দিয়েছে মণিপুর। সে রাজ্যে ফুটবলের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। সেই মণিপুরেই তাই এ বার বসতে চলেছে আন্তর্জাতিক ফুটবলের আসর। সে রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের খুমান লম্পক স্টেডিয়ামে আজ সন্ধ্যা ছ’টায় ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এই হিরো ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট। ভারতের পরবর্তী ম্যাচ কিরঘিজস্তানের বিরুদ্ধে, ২৮ মার্চ।

আগামী বছরের শুরুতে ভারতীয় দল অংশ নেবে এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে। তারই প্রস্তুতির অন্যতম অঙ্গ এই টুর্নামেন্ট। গত বছর জুনে ভারতীয় দল এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে সফল হওয়ার পর মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। কম্বোডিয়া, আফগানিস্তান ও হংকংকে হারিয়ে গ্রুপসেরা হিসেবে এশিয়ার সেরা আন্তর্দেশীয় টুর্নামেন্টের মূলপর্বে খেলার ছাড়পত্র অর্জন করে নেয় ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল।

গত সেপ্টেম্বরে ভারতীয় দল দু’টি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলে। তবে খুব একটা ভাল ফল করতে পারেনি। সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে তারা ১-১ ড্র করে। কিন্তু ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে ০-৩-এ হেরে যায়। এই টুর্নামেন্টের জন্য ২৩ জনের যে দল ঘোষণা করেছেন স্টিমাচ, তাতে ফুর্বা লাচেনপা, মেহতাব সিং, রোহিত কুমার, নাওরেম মহেশ সিংয়ের মতো নতুন মুখেরা রয়েছেন। গত শনিবার হিরো আইএসএলের ফাইনালে মুখোমুখি হওয়া দুই দলের ন’জন খেলোয়াড় তাঁর বাছাই করা দলে রয়েছেন। শনিবার ফাইনাল খেলে তাঁদের ভারতীয় দলে যোগ দিতে দেরী হয়।

ফাইনালিস্টদের সম্ভবত এই টুর্নামেন্টে বিশ্রাম দেবেন ভারতীয় দলের হেড কোচ। এমনটাই ইঙ্গিত দিলেন তিনি। বলেন, “হিরো আইএসএল ফাইনালে খেলার পর ফুটবলাররা সবাই খুব ক্লান্ত। তারা এখন ক্রমশ তরতাজা হয়ে উঠছে। আমাদের দরকার তরতাজা খেলোয়াড়। দলে ২৩জন খেলোয়াড় রয়েছে। মণিপুরের অনেক ফুটবলারকেই বুধবারের ম্যাচে প্রথম এগারোয় দেখার আশা করতে পারেন”।

এই প্রথম মণিপুরে এই স্তরের কোনও টুর্নামেন্ট হচ্ছে। ভারতীয় ফুটবলকে দেশের আনাচে কানাচে আরও ছড়িয়ে দিতেই এই উদ্যোগ সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের। তাদের নতুন প্রকল্প ভিশন ২০৪৭-কে সামনে রেখেই এই উদ্যোগ। ১৯৯৯-এ তৈরি হওয়া খুমান লম্পক স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ৩৫ হাজার দর্শকাসন রয়েছে এবং ভারতের দু’টি ম্যাচে গ্যালারি ভরা থাকবে বলে স্থানীয় ফুটবলকর্তাদের ধারণা।

মণিপুরে দল নিয়ে আসতে পেরে খুশি স্টিমাচও। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “মণিপুরে খেলার আনন্দ অন্য জায়গায় খেলার আনন্দের চেয়ে আলাদা। ফিফার আন্তর্জাতিক সূচীতে ঘরের মাঠে খেলাকেই বরাবর গুরুত্ব দিয়ে এসেছি আমি। অবশেষে সেটাই পেতে চলেছি আমরা। অন্য দেশে গিয়ে খেলার চেয়ে নিজেদের মাঠে খেলাই ভাল”।

এ জন্য মণিপুর সরকার ও ফেডারেশনকে ধন্যবাদ দেন ভারতীয় দলের কোচ। বলেন, “এই টুর্নামেন্টে আয়োজন করার জন্য মণিপুর সরকার ও ফেডারেশনকে ধন্যবাদ। আশা করি এখানকার ফুটবল পরিকাঠামো ভবিষ্যতে আরও উন্নতি হবে। ফুটবলপ্রেমীদের কাছে আন্তর্জাতিক ফুটবলের গুরুত্ব কতটা, তা আগেও বোঝা গিয়েছে। আশা করি, এই খেলার পরিকাঠামো তৈরির জন্য সরকার আরও কিছু করবে”।

হিরো আইএসএল ফাইনালের পরে যাঁরা ভারতীয় শিবিরে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের অন্যতম রানার্স-আপ বেঙ্গালুরু এফসি-র অভিজ্ঞ গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু। ভারতীয় দলের আসন্ন ম্যাচগুলির অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। বলেন, “সামনে খেলা থাকলে নিজেকে মানসিক ভাবে চাঙ্গা করে তোলা সোজা হয়ে যায়। এখানে আসতে পেরে আমি খুব খুশি। আগামী ম্যাচে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাটাই আমাকে উজ্জীবিত করে তোলে। তাই মানসিক ভাবে ফের ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হতে কোনও অসুবিধা হয়নি আমার”।

এই মুহূর্তে ভারত ফিফা ক্রমতালিকায় ১০৬ নম্বরে রয়েছে। মায়নমার আছে তাদের চেয়েও ৫৩ ধাপ নীচে। গত বছর ডিসেম্বরে এএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপে শেষবার মাঠে নামে তারা। কিন্তু সেখানে সাফল্যের মুখ দেখেনি তারা। একটি ম্যাচে ড্র করে ও বাকি চারটি ম্যাচে হারে তারা। চলতি মাসেই দলটির দায়িত্ব নিয়েছেন জার্মান কোচ মাইকেল ফিশতেনবাইনার। ইতিবাচক ভাবে শুরু করতে চান তিনি। ভারতকে শক্তিশালী মেনে নিলেও তাঁর দলও যথেষ্ট ভাল বলে মনে করেন মায়ানমারের নতুন কোচ।

সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “ভারত যথেষ্ট শক্তিশালী। আমাদের হয়তো ওদের বিরুদ্ধে জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই। ভারতের অনেকগুলো ম্যাচ আমি দেখেছি। কিন্তু ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে আমরা পারফরম্যান্সে উন্নতি করতে চাই। শনিবারই প্রথম ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াব আমরা। আমাদের পারফরম্যান্স যদি ভাল হয়, তা হলে ভারতের পক্ষে কাজটা সোজা হবে না। নিজেদের ভবিষ্যৎ দলের ফুটবলারদের নিজেদের হাতেই রয়েছে”।

ইতিহাস বলছে এ পর্যন্ত বহুবার ভারতকে হারিয়েছে মায়ানমার। দুই দলের মধ্যে ২৪টি ম্যাচ হয়েছে, যার মধ্যে ন’বার জিতেছে ভারত। মায়ানমার কিন্তু ১১টি ম্যাচে জয় পায় ও চারটি ম্যাচ ড্র হয়। আজ এই রেকর্ডে কোনও উন্নতি করতে পারবে কি না ভারতীয় দল, সেটাই দেখার।

ভারতীয় স্কোয়াড: গোলকিপার-গুরপ্রীত সিং সান্ধু, ফুর্বা লাচেনপা, অমরিন্দর সিং; ডিফেন্ডার- সন্দেশ ঝিঙ্গন, রোশন সিং, আনোয়ার আলি, আকাশ মিশ্র, চিঙলেনসানা সিং, রাহুল ভেকে, মেহতাব সিং, প্রীতম কোটাল; মিডফিল্ডার: সুরেশ ওয়াংজাম, রোহিত কুমার, অনিরুদ্ধ থাপা, ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ, ইয়াসির মহম্মদ, ঋত্বিক দাস, জিকসন সিং, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, বিপিন সিং; ফরোয়ার্ড: মনবীর সিং, সুনীল ছেত্রী, নাওরেম মহেশ সিং।

ম্যাচ: ভারত বনাম মায়ানমার

টুর্নামেন্ট: হিরো ত্রিদেশীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট

ভেনু: খুমান লম্পক স্টেডিয়াম, ইম্ফল, মণিপুর

সময়: ২২ মার্চ, ২০২৩, সন্ধ্যা ৬.০০

 টিভি ও ওয়েব সম্প্রচার: স্টার স্পোর্টস ৩ ও ডিজনি + হটস্টার